বিএনএ,ঢাকা: করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় মিরপুর ও রংপুর চিড়িয়াখানা সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার (২ এপ্রিল) সকালে এক জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. ইফতেখার হোসেনের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করোনা সংক্রমণ রোধে শুক্রবার (২ এপ্রিল) থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ঢাকার মিরপুরের বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা ও রংপুর চিড়িয়াখানা দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ থাকবে।
এর আগে গতবছর করোনার প্রকোপ বাড়ায় প্রায় ৮ মাস বন্ধ ছিল জাতীয় চিড়িয়াখানা। পরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে ১ নভেম্বর সর্বসাধারণের জন্য ফের উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।পাঁচ মাস চালু থাকার পর চলতি বছরের মার্চের শেষের দিকে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন শনাক্ত রোগী বাড়তে থাকায় ফের বন্ধের সিদ্ধান্ত নিলো সরকার।বিজ্ঞপ্তিতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত চিড়িয়াখানা দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
এর আগে করোনার বিস্তার রোধে বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের সব পর্যটন ও বিনোদন স্পট বন্ধ ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন।
এদিকে, দেশে করোনায় হু হু করে বাড়ছে মৃত্যু ও শনাক্ত। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে করোনা আক্রান্তদের সংখ্যা। ফাঁকা নেই কোনো আইসিইউ। প্রবল সংকটের মধ্যে সাধারণ শয্যা পেতেও হিমশিম খাচ্ছেন রোগীরা। পর্যাপ্ত বেড না থাকায় বহু রোগীকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে নিয়মিত।
রাজধানীর কোভিড হাসপাতালগুলোতে করোনা টেস্ট করাতে আসা রোগীদের দীর্ঘ লাইন। প্রতিদিনই সক্ষমতার চেয়ে তাদের অনেক বেশি পরীক্ষা করাতে হচ্ছে। গত বছর যখন করোনা পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় ছিল, এখন তার চেয়েও খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন হাসপাতালের কর্মচারীরা।
তারা জানান, গত বছরের চেয়েও এবার রোগীর চাপ বেশি। রোগীদের জটিলতা ভিন্ন। একশ জনের মধ্যে ৪০ জনই পজিটিভ হচ্ছেন।
ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতে ইতোমধ্যে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দুই সপ্তাহের জন্য ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করা করেছে সরকার।
করোনার সংক্রমণ রোধে কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংক্রমণ রোধে আগের মতো সবকিছু নিয়ন্ত্রণের আভাস দেন তিনি। বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেন, টিকা নেয়ার পর মানুষের মধ্যে উদাসীনতা বেড়ে গেছে। সবাইকে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে, সরকারকে সহায়তার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
মহামারি পরিস্থিতির বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন,করোনার প্রথম ঢেউ নিয়ন্ত্রণে নেয়া ব্যবস্থাগুলো আবারও নেয়া হতে পারে। টিকা নেয়ার পর অবহেলা ও উদাসীনতায় মহামারির সংক্রমণ বেড়েছে ।
অন্যদিকে, হঠাৎ করে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু বৃদ্ধি পাওয়ার বিভিন্ন কারণ তুলে ধরে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর আগে গত কয়েক মাসের বেশি সময় ধরে করোনা ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা, আক্রান্ত রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর হার একটু একটু করে কমে আসছিল। কিন্তু সামাজিক দূরত্ব না মানা, মাস্ক পরিধান না করা, পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে উপচেপড়া ভিড়, স্বাস্থ্যবিধি না মানা, জীবাণুনাশক ব্যবহারের উদাসীনতায় আবারও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
সংক্রমণের পরিস্থিতির যদি আরও অবনতি হয়, তাহলে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে, এই পরিকল্পনাও আগে থেকে করে রাখা জরুরি। সংক্রমণ যদি দ্রুত বাড়ে, সেক্ষেত্রে আরেক দফা লকডাউনে যাবে কিনা, এই চিন্তাও আগেভাগে করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনার বর্তমান অবস্থা আগামী কয়েকদিন এভাবে চলতে থাকলে এ মাসেই সরকার লকডাউনে যেতে পারে বলে মনে করেন তারা।
করোনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্য, সরকারের ১৮ নির্দেশনা, দেশের সব নির্বাচন স্থগিত, ট্রেনের টিকিট বিক্রিতে স্থগিতাদেশ, গণপরিবহনে যাত্রীর চলাচল নিয়ন্ত্রণ, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখা, চলমান বইমেলা ও দেশের বিনোদনকেন্দ্র বন্ধের সুপারিশ,সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ৫০ ভাগ জনবল দ্বারা পরিচালনা করা কি আবারও লকডাউনের ইঙ্গিত? তাহলে কি আবারও লকডাউন হতে যাচ্ছে দেশ? এ প্রশ্নের জবাব পেতে হয়ত আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে ।
বিএনএনিউজ/আরকেসি