বিএনএ, ঢাকা: আগামীকাল রোববার (৩ মার্চ) শুরু হচ্ছে চারদিনব্যাপি জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে ডিসি সম্মেলন-২০২৪-এর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের সঙ্গে মাঠ প্রশাসন সম্পৃক্ত বিষয়ে মুক্ত আলোচনা করবেন। দেবেন গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনা। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে ৫৬টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ, কার্যালয় ও সংস্থা সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রায় ৩৫০টি প্রস্তাবনা জমা পড়েছে।
জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে ডিসিদের আলোচ্যসূচিতে পবিত্র রমজান মাসে মজুতদার অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ, চুরি, ডাকাতি, সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত করতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, বিশেষ করে মাদক নির্মূল করা, ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, কৃষি উৎপাদন বাড়ানো ও কৃষিজমি নষ্ট না করা, পরিবেশ ও বন সম্পদ রক্ষা, জলাশয় সংস্কার ও সংরক্ষণ, জেলা পর্যায়ে পর্যটন বিকাশে উদ্যোগ নেয়া, পরিবেশ দূষণ রোধে ব্যবস্থা নেয়া, জেলা পর্যায়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ, সেচ মৌসুমে জ্বালানি সরবরাহ যথাযথ রাখা, শিক্ষায় নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে মনিটরিং জোরদার করা, প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থানীয় পর্যায়ে মনিটরিং জোরদার করা ও রাজস্ব বাড়ানোয় সহযোগিতা করাসহ ইত্যাদি বিষয় প্রাধান্য পাবে। বিশেষ করে স্মার্ট প্রশাসন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার রূপরেখাও থাকছে এবারের ডিসি সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে ৫৬টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ, কার্যালয় ও সংস্থা সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রায় ৩৫০টি প্রস্তাবনা জমা পড়েছে।
গত বছরও একইভাবে ডিসিরা প্রায় আড়াইশ প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন। ওইসব প্রস্তাবনার অধিকাংশই বাস্তবায়ন হয়নি। এর মধ্যে, সারাদেশে বাজার নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা বৃদ্ধি, উন্নয়ন প্রকল্পে ডিসিদের ক্ষমতা বাড়ানো এবং জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদের বিদ্যমান সমস্যা, রোহিঙ্গা সংকট ও সমাধান বিষয়ে প্রস্তাব রয়েছে। স্ব স্ব জেলা উপজেলার স্থানীয় সমস্যা তুলেছেন তারা। ঘুরেফিরে ডিসি ও ইউএনওদের ক্ষমতা বা দায়িত্বের পরিধি এবং সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রস্তাবনা রয়েছে এবারও।
এবারের ডিসি সম্মেলনে প্রথমবারের মতো সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিবরা বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসিদের কাছে তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরবেন ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন। এজন্য সম্মেলনের প্রথম দিন (রোববার) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ‘উন্নয়নে মাঠ প্রশাসন’ শীর্ষক এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন। আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিবরা।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনী ভাষনের পর দুপুর ২টা ৩০ মিনিট থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ও এর আওতাধীন সংস্থার সঙ্গে জেলা প্রশাসকদের সভা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি সভা পরিচালনা করবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
চার দিনের সম্মেলনে মোট ৩০টি কার্য অধিবেশন থাকবে। এছাড়াও থাকবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুক্ত আলোচনা, জাতীয় সংসদের স্পিকারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ। চার দিনের কার্যদিবসের এক ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকারের সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নেবেন জেলা প্রশাসকরা। রাষ্ট্রপতি দেশের বাইরে থাকায় তার সঙ্গে কোনো ধরনের আয়োজন রাখা হয়নি।
প্রথম দিন বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত চলবে মূল কার্য অধিবেশন। এসব অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে। প্রতিটি অধিবেশন হবে মন্ত্রণালয় ভিত্তিক। সেখানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পৃক্ত অধিবেশনের মাধ্যমে মূল অধিবেশন শুরু হবে, যা দ্বিতীয় অধিবেশন হিসেবে গণ্য হবে। তৃতীয় অধিবেশনে থাকবে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত। চতুর্থ অধিবেশনে থাকবে সমাজকল্যাণ, যুব ও ক্রীড়া এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় নিয়ে। পঞ্চম অধিবেশনে থাকবে ‘উন্নয়নে মাঠ প্রশাসন’ শীর্ষক আলোচনা।
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে মোট ৮টি কার্য অধিবেশন রয়েছে। প্রথম অধিবেশন শুরু হবে সকাল ৯টায়। এ অধিবেশনে বেসামরিক বিমান চলাচল, পর্যটন মন্ত্রণালয়, ধর্ম, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে অর্থ মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় বিষয়ে। তৃতীয় অধিবেশন খাদ্য, মৎস্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত। চতুর্থ অধিবেশনে থাকবে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রসঙ্গ। এ দিনের পঞ্চম অধিবেশনের আলোচ্যসূচিতে রয়েছে সড়ক পরিবহন, সেতু বিভাগ ও রেলপথ মন্ত্রণালয় ইস্যু। ষষ্ঠ অধিবেশনের বিষয়সূচিতে রয়েছে নৌপরিবহন, পানি সম্পদ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় প্রসঙ্গ।
তবে বৈচিত্র্য রয়েছে সপ্তম অধিবেশনে। এই অধিবেশন সাজানো হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন বিষয়ে। দ্বিতীয় দিনের একেবারে শেষ অধিবেশন সাজানো হয়েছে বস্ত্র ও পাট এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ইস্যু নিয়ে। এ দিনের সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ ভবনে স্পিকারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও নৈশভোজে অংশ নেবেন জেলা প্রশাসকরা।
তৃতীয় দিনে অধিবেশন রয়েছে সাতটি। প্রথম অধিবেশনটি হবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও সশস্ত্র বাহিনীর বিভাগ নিয়ে। দ্বিতীয় অধিবেশনে থাকবে দুটি মন্ত্রণালয়। একটি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ও অন্যটি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। তৃতীয় অধিবেশন চারটি মন্ত্রণালয় নিয়ে। এগুলো হচ্ছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। চতুর্থ অধিবেশনটি হবে শুধু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত। পঞ্চম অধিবেশনের বিষয়সূচিতে রয়েছে পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। ষষ্ঠ অধিবেশনে থাকবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ। এ দিনের সর্বশেষ অধিবেশন হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত।
বুধবার শেষদিনে রয়েছে মোট পাঁচটি অধিবেশন। প্রথম অধিবেশন দুটি ভূমি এবং আইন মন্ত্রণালয় নিয়ে। দ্বিতীয় অধিবেশনে রয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় প্রসঙ্গ। এ দিনের তৃতীয় অধিবেশনের বিষয়সূচিতে রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এছাড়া অধিবেশনে থাকবে ফিডব্যাক ও সম্মেলনের মূল্যায়ন। মূলত এটি সমাপনী অধিবেশন। এ অধিবেশন শেষে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও আপ্যায়ন পর্ব রয়েছে ডিসিদের।
শেষদিনের সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভা অনুষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নেয়ার মাধ্যমে শেষ হবে এবারের ডিসি সম্মেলন।
বিএনএ/এমএফ/এইচমুন্নী