বিএনএ,চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে এক বন্দিকে নির্যাতনের অভিযোগে কারাগারের জেল সুপারসহ চারজনকে আসামি করে দায়ের করা নালিশি মামলা উপযুক্ত আদালতে দায়েরের নির্দেশ দিয়ে ফেরত দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (২ মার্চ) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হোসেন মোহাম্মদ রেজার আদালত এ আদেশ দেন। এর আগে গতকাল একই আদালতে লিখিত অভিযোগটি দায়ের করেন ভুক্তভোগী রূপম কান্তি নাথের (৪৫) স্ত্রী ঝর্ণা রানী দেবনাথ; তখন এ বিষয়ে আদেশের জন্য আজকে দিন ধার্য্য রেখেছিলেন বিচারক।
মামলায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার শফিকুল ইসলাম, জেলার রফিকুল ইসলাম, সহকারী সার্জন ও ভুক্তভোগীর ব্যবসায়িক অংশীদার রতন ভট্টাচার্যকে আসামি করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও হেফাজত মৃত্যু নিবারণ আইন ২০১৩ এর (১ ও ২) এবং ক, খ , গ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
নির্যাতনের শিকার রুপম কান্তি নাথ বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কারা কর্তৃপক্ষের অধীনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।
রূপমের আইনজীবী বিশ্বজিত চক্রবর্তী বলেন, ফৌজদারি ২০১ ধারা অনুযায়ী মামলা ফেরত দিয়ে উপযুক্ত আদালতে দাখিল করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বাদির সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
রূপমের আইনজীবীর অভিযোগ, মামলার বাদি রতন ভট্টাচার্য অত্যন্ত প্রভাবশালী। তার প্ররোচনায় রূপমকে কারা অভ্যন্তরে নির্যাতন করা হয়েছে। এদিকে, গত শনিবার চমেক হাসপাতালের পরিচালক বরাবর মামলার বাদি রূপমের স্ত্রী এক আবেদন দাখিল করেন। এতে তার স্বামীর শরীরের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ আঘাতের ধরণ মেডিকেল রেজিস্টারে সংরক্ষণ করে রাখার আবেদন করা হয়। ওই আবেদনে বলা হয়েছে কারাগারে তার স্বামীকে হত্যার উদ্দেশ্যে বৈদ্যুতিক শক, বিষাক্ত ইনজেকশন পুশ করা হয়েছে। সারা শরীরে আছে আঁচড়, কিল, ঘুষি ও লাথি মারার চিহ্ন।
আদালত সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ২৫ এপ্রিল নগরের কোতোয়ালী থানায় রতন ভট্টাচার্য নামে এক ব্যবসায়ীর দায়ের করা জালিয়াতি ও আত্মসাতের (৪০৬/৪২০) মামলায় রূপম ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর থেকে কারাবন্দি হন। চুক্তি মতো টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ওইদিনই আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাত ১০ টায় তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় কারাগার থেকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করেন কারা কর্তৃপক্ষ।
রুপমের স্ত্রী ঝর্ণা রানী জানান, চমেক হাসপাতালের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের এমএক্স ১২ শয্যায় তার স্বামী চিকিৎসাধীন। আসামিদের নিযাতনে তার স্বামীর মুখ, হাতসহ সারা গায়ে আঘাতের চিহ্ন আছে। অন্ডকোষে আগুনের ছ্যাঁকার চিহ্ন পাওয়া গেছে। পুরো অন্ডকোষ ও পুরুষাঙ্গ আগুনে ঝলসে গেছে।
তিনি বলেন, আমার স্বামীকে হাসপাতালে ভর্তি করার একদিন পর তার অসুস্থতার খবর পাই। গুরুতর আহত অবস্থায় আমার স্বামীকে পায়ে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে হাসপাতালে আনা হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তির পর দুইদিন পযন্ত স্বামী ডান্ডাবেড়ি পরিহিত ছিলেন।
হাসপাতালের শয্যায় রূপম সাংবাদিকদের বলেন, মামলার আসামিরা আমাকে বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়েছে। ইলেক্ট্রিক শক দিয়েছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার রফিকুল ইসলাম দাবি করে বলেন, রুপম কান্তি দেবনাথ মাদকাসক্ত। মাদক নেওয়ার জন্য তার প্রবল নেশা (বেড়া) উঠলে তাকে গত রোববার চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার স্ত্রীর অভিযোগ ভিত্তিহীন। তার স্বামী রুপমের অন্ডকোষর জটিল রোগে আক্রান্ত। এছাড়া তার ডায়বেটিস রোগও রয়েছে।
তিনি বলেন, কারাগারে তাকে ইলেক্ট্রিক শক, বিষাক্ত ইনজেকশন পুশ করার অভিযোগ মিথ্যা। চিকিৎসকেরা তার শরীর থেকে রক্তের নমুনা নিয়ে যাবতীয় পরীক্ষা করেছেন। বিষাক্ত ইনজেকশন বা ইলেক্ট্রিক শক দেয়ার কোন প্রমাণ পায়নি চিকিৎসকরা।
এ বিষয়ে এডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল বলেন, ডাকাতি, হত্যাসহ তিন বা ততোধিক মামলার দুর্ধর্ষ আসামিকে কারাগারের বাইরে নেয়া হলে নিরাপত্তার খাতিরে সচরাচর ডান্ডাবেড়ি পরানো হয়। আর কারা অভ্যন্তরে আহত হলে এমনকি আত্মহত্যাসহ যে কোন ঘটনার জন্য কারাকর্তৃপক্ষকেই জবাবদিহি করতে হয়। কারাগারে আহত হলে তার জন্য সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি হওয়া উচিত। কারণ কারাগারের ভেতরটা সবসময় নিরাপদ থাকার নিয়ম। তার ব্যত্যয় ঘটলে কারাকর্তৃপক্ষের প্রতি জনগণ আস্থা হারাবে।
বিএনএনিউজ/মনির