জনসাধারণ মন্ত্রীদের ও আমাদের দেখে একদম জেলগেটের সামনে এসে জড়ো হয়েছে। হাজার হাজার লোক চিৎকার করতে আরম্ভ করেছে।
আজ প্রকাশিত হলো পর্ব : ৩৩১
আমি পৌঁছার সাথে সাথে দু’জনে দ্রুত চকবাজারে পৌঁছালাম। অনেক লোক জমা হয়ে আছে এবং তারা খুবই উত্তেজিত। আমরা উপস্থিত হলে তারা আমাদের ঘিরে ফেলল এবং সকলে একসাথে চিৎকার করতে শুরু করল। সকলেই একসঙ্গে কথা বলতে চায়, কি ঘটনা ঘটেছে জানাতে। আমরা যখন তাদের অনুরোধ করলাম, এক একজন করে বলতে, তখন তারা একটু শান্ত হল এবং ঘটনাটা বলল। একজন ওয়ার্ডারের সাথে এক পানের দোকানদারের কথা কাটাকাটি এবং পরে মারামারি হয়। এই অবস্থায় দু’চারজন ওয়ার্ডারও হাজির হয়ে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডারের পক্ষ নেয়, আর জনসাধারণ দোকানদারের পক্ষ নেয়। সিপাহিরা একটু বেশি মার খায়।
তারা ব্যারাকে ফিরে গিয়ে রাইফেল এনে গুলি করতে শুরু করে। এতে অনেক লোক জখম হয় এবং তিনজন আহত লোককে ধরে জেল এরিয়ার ভিতরে নিয়ে যায়। অনেক লোক তখন জমা হয়েছে। আমরা দুইজনই তাদের শান্ত হতে বলে, জেলগেটের দিকে রওয়ানা করেই দেখতে পেলাম, সৈয়দ আজিজুল হক ওরফে নান্না মিয়া (তখন মন্ত্রী) খবর পেয়ে এসেছেন। তাঁর সাথে একজন বিশিষ্ট সরকারি কর্মচারী আছেন। আমরা একসাথে জেলগেটের ভিতরে পৌঁছালাম। সেখানে জেল সুপারিনটেনডেন্ট ও জেলারের সাথে আলাপ হল। এ সময় আরও দু’একজন মন্ত্রী, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, ডিভিশনাল কমিশনার এসে হাজির হয়েছেন। জনসাধারণ মন্ত্রীদের ও আমাদের দেখে একদম জেলগেটের সামনে এসে জড়ো হয়েছে। হাজার হাজার লোক চিৎকার করতে আরম্ভ করেছে।
ঢাকা জেলে তখন একজন এ্যাংলো ইন্ডিয়ান সার্জেন্ট ছিল, তার নাম মিস্টার গজ। সত্যি কি না বলতে পারি না, তবে জনতা ‘গজের বিচার চাই, গজ নিজে গুলি করেছে’- ইত্যাদি বলে চিৎকার করতে শুরু করেছে। গজের বাসা জেলগেটের সামনেই। কে যেন বলে দিয়েছে, এটা গজের বাড়ি। জনতা গজের বাড়ি আক্রমণ করে ফেলেছে। যাঁরা উপস্থিত ছিলেন-মন্ত্রী, নেতা এবং সরকারি কর্মচারী তাঁরা আমাকে অনুরোধ করল বাইরে যেতে। এত বড় ঘটনা ঘটে গেছে, একজন আর্মম পুলিশও এক ঘণ্টা হয়ে গেছে, এসে পৌঁছায় নাই।
পরিকল্পনা : ইয়াসীন হীরা
গ্রন্থনা : সৈয়দ গোলাম নবী
সম্পাদনায় : মনির ফয়সাল
সূত্র: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী, প্রকাশনা- দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, পৃষ্টা নম্বর:২৭৫-২৭৬।
আগের পর্ব পড়ুন : বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পর্ব : ৩৩০