বিএনএ, কক্সবাজার: কক্সবাজার জেলায় এইচআইভি (এইডস) আক্রান্তব রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে তা অধিকাংশই রোহিঙ্গা। ২০১৭ সালে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢলের পর থেকে এই হার বেড়েই চলেছে আশংকাজনক হারে। যা দেশের অন্য জেলার তুলনায় অনেক বেশি।
গত ৭ বছরে কক্সবাজার জেলায় এইডস রোগে ৬৫ জন রোহিঙ্গাসহ মারা গেছে ১২১ জন। তারমধ্যে গত অক্টোবর মাসে মারা গেছে ১ জন এবং সেপ্টেম্বর মাসে মারা গেছে ১ জন।
এই বিষয়ে কক্সবাজার জেলার সিভিল সার্জন মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, কক্সবাজার জেলায় প্রতিনিয়ত এইডস পরীক্ষা ও পরীক্ষার যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা থাকায় এখানে এইডস আক্রান্ত রোগীর হার বেশি মনে হচ্ছে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের অসচেতনার কারণে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বেশিরভাগ রোহিঙ্গা তাদের দেশ থেকে এইচআইভি এইডস তাদের শরীরে বহন করে নিয়ে এসেছে।
এদিকে, এইডস রোগে প্রাপ্ত বয়স্ক নারী-পুরুষ যেমন আক্রান্ত হচ্ছে তেমনি শিশুরাও। তবে আক্রান্তদের মধ্যে রোহিঙ্গাদের সংখ্যাই বেশি। ২০১৫ সাল থেকে গত ৭ বছরে কক্সবাজারে মোট এইচআইভি (এইডস) আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৫ জন। তারমধ্যে ৮৪৪ জন হচ্ছেন বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিক, ২শত ১ জন বাংলাদেশি। গত অক্টোবর মাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২৪ জন। যা সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় ৭ জন বেশি। ওই ২৪ জনের মধ্যে রোহিঙ্গা ২৩ জন, বাকী ১ জন বাংলাদেশি। গত সেপ্টেম্বর মাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৭ জন। ওই ১৭ জনের মধ্যে রোহিঙ্গা ১৫ জন, বাকি ২ জন বাংলাদেশি। কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে এই সব তথ্য পাওয়া গেছে।
কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যমতে, এইচআইভি (এইডস) পরীক্ষার জন্য কক্সবাজার জেলায় কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল ও উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুটি এআরটি (অ্যান্টিজেন র্যাপিড টেস্ট) কর্ণার চালু করা হয়েছে। এই দুটি এআরটি কর্ণারে ২০১৫ সালের ২ ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ৭ বছরে মোট ১ হাজার ৪৫ জন এইডস রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তারমধ্যে ২শত ১ জন বাংলাদেশি, ৮শত ৪৪ জন রোহিঙ্গা। ১ হাজার ২১ জনের মধ্যে তৃতীয় লিঙ্গের রয়েছে ৩ জন। আক্রান্তদের মধ্যে প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ ৩৮১ জন এবং শিশু রয়েছে ৬০ জন, প্রাপ্ত বয়স্ক নারী রয়েছে ৫৩৫ জন এবং মেয়েশিশু ৬৬ জন। আক্রান্ত বাংলাদেশীদের মধ্যে প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ ১১৬ জন এবং শিশু রয়েছে ৭ জন, প্রাপ্ত বয়স্ক নারী রয়েছে ৬৮ জন এবং মেয়েশিশু ৮ জন। আক্রান্ত রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ ২৬৫ জন এবং শিশু রয়েছে ৫৩ জন, প্রাপ্ত বয়স্ক নারী রয়েছে ৪৬৭ জন এবং মেয়েশিশু ৫৮ জন। তৃতীয় লিঙ্গের আক্রান্তদের মধ্যে ২ জন বাংলাদেশী এবং একজন রোহিঙ্গা। সাত বছরে মারা গেছে ১২১ জন এইডস রোগী। যার মধ্যে রোহিঙ্গা ৬৫ জন এবং বাংলাদেশী ৫৬ জন। মারা যাওয়া বাংলাদেশীদের মধ্যে প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ ৩৮ জন এবং শিশু রয়েছে ১ জন, প্রাপ্ত বয়স্ক নারী রয়েছে ১৩ জন এবং শিশু ৪ জন। মৃত রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ ২১ জন এবং শিশু রয়েছে ৬ জন, প্রাপ্ত বয়স্ক নারী রয়েছে ৩১ জন এবং শিশু ৭ জন।
গত অক্টোবর মাসে জেলায় আক্রান্ত এইডস রোগীর সংখ্যা ছিল ২৪ জন। তারমধ্যে ১ জন বাংলাদেশী এবং ২৩ জন রোহিঙ্গা। আক্রান্ত বাংলাদেশী নারী। আক্রান্ত রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ ৪ জন এবং শিশু রয়েছে ৩ জন, প্রাপ্ত বয়স্ক নারী রয়েছে ১৪ জন এবং মেয়েশিশু ২ জন। মারা যায় ১ জন রোহিঙ্গা। দুইটি এআরটি কর্ণার হতে নিয়মিত ওষুধ পাচ্ছে ৭৮৩ জন এইডস আক্রান্ত রোগী, যা গতমাসে ছিল ৭৫৯ জন। তারমধ্যে বাংলাদেশী ১০৫ জন এবং ৬৭৭ জন রোহিঙ্গা।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসা কর্মকর্তা শাহ ফাহিম আহমদ ফয়সাল বলেন, বাংলাদেশের যেকোন জেলার তুলনায় কক্সবাজারে এইডস আক্রান্তের হার বেশি। কক্সবাজার জেলা রোহিঙ্গা অধ্যুষিত হওয়ায় এই জেলায় এইডস রোগের ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে। কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল ও উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থাপিত দুটি এআরটি কর্ণারে এইচআইভি/এইডস সনাক্ত করা হয়। এছাড়া আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) পরিচালিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিত্তিক ৭টি স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে স্ক্যানিং করে এইচআইভি রোগের প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। সেখানে প্রাথমিকভাবে কারো শরীরে এইডসের লক্ষণ পাওয়া গেলে তাদের ওই দুটি এআরটি কর্ণারে পাঠানো হয়।
সিভিল সার্জন মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, এইডস রোগীদের মধ্যে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বেশী। বহুবিবাহ, নিরাপদ যৌনতা সম্পর্কে জ্ঞান না থাকা, স্বাস্থ্য সচেতনতা, মাদক, একটি ইনজেকশন সিরিঞ্জ একাধিক ব্যক্তির শরীরে পুশ করার কারণে এইডস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। মাতৃগর্ভ থেকে ও শিশুদের শরীরে এই রোগ ছড়াচ্ছে। এইডস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিভাগ নানা পর্যায়ে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছে।
কক্সবাজার শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের স্বাস্থ্য শাখার সমন্বয়কারী ডা. আবু তোহা মো. রেজওয়ানুল হক ভুঁইয়া বলেন, কক্সবাজার জেলায় অন্যান্য জেলার তুলনামুলকভাবে এইডস এ আক্রান্ত রোগীর বেশি। রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে এ রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিলের সংকট রয়েছে। এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে এড্রেস করা প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন মহলের।
বিএনএ/ ফরিদুল, এমএফ