সাভার প্রতিনিধি: ঘরটি ছিল পরিত্যক্ত। সেখানে কেউ থাকতো না। দিনের বেলাতেই গা শিউরে উঠত নির্জন জায়গায় পরিত্যক্ত ঘরের পাশ দিয়ে যেতে। দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা শেষে গভীর রাতের অপেক্ষায় থাকত আশেপাশের নেশাগ্রস্তরা। জুয়া খেলা, মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক সেবনকারীসহ সমাজের খারাপ প্রকৃতির বখাটেরা আড্ডায় মেতে থাকত ওই পরিত্যক্ত ঘরে। যেটি এলাকাতে মাদকের আস্তানা নামেই পরিচিত। সেই মাদকের আস্তানাতেই নৃশংসভাবে খুন হয়েছে মোঃ শিহান মাহমুদ নামে এক তরুণ। তার সহযোগী আলমগীর মুমূর্ষুবস্থায় হাসপাতালের শয্যায় মৃত্যুর প্রহর গুণছে। গত রোববার দিনগত রাতে এ হতাহতের ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার যাদবপুর ইউনিয়নের আমছিমুর সেসিপ মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের পাশে আব্দুর সবুরের পরিত্যক্ত বাড়ীর কথিত মাদকের আস্তানায়।
দু্ মাদক কারবারি গ্রুপের মধ্যে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জের ধরে এ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়দের ধারণা। এলাকাবাসীর দেয়া তথ্যমতে হতাহত এ দু’জন মাদক সেবন ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকলেও তাদেরকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের কর্মী বলে দাবি করা হচ্ছে। এ ইস্যুতে যাদবপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আলহাজ্ব মিজানুর রহমান মিজুর বাড়ীতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোঃ আব্দুল মজিদের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভুক্তভোগি স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আলহাজ্ব মিজানুর রহমান মিজু ও তার পরিবারের লোকজন।
চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মিজানুর রহমান মিজু বলেন, আমি দু’বার যাদবপুর ইউনিয়নে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। সুষ্ঠু ভোট হলে এবারও বিপুল ভোটের ব্যবধানে আমি পুনরায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হব। কাজেই নৌকার কর্মীরা পরাজয়ের ভয়ে মাদকের আস্তানায় হত্যাকান্ডের ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহের চেষ্টা করছে।
এলাকাবাসী জানান, সেসিপ মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের পাশে আব্দুস সবুরের ওই পরিত্যক্ত বাড়ীতে প্রতিনিয়ত বসে মাদকের আস্তানা ও জুয়া খেলা। প্রতিদিনের মত রোববার রাত ৮টার দিকে ওই মাদকের আস্তানায় আসর বসে। হঠাৎ উচ্চশব্দে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে লোকালয়ে। গ্রামবাসী দৌড়ে ওই ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন শিহান (২০) ও আলমগীর হোসেন নামে দুইজন হাত-পা ভাঙা ও রক্তাক্ত জখমবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছে এবং মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। দ্রুত তাদেরকে উদ্ধার করে রাজধানীর অর্থোপেডিক (পঙ্গু) হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীনবস্থায় সোমবার ভোর ৫টার দিকে শিহান মৃত্যুকোলে ঢলে পড়ে। এব্যাপারে এলাকাবাসী আরও জানান,সপ্তাহ খানেক আগে বাস্তা এলাকার শামীম নামে এক ইয়াবা ব্যবসায়ী ওই মাদকের আস্তানায় ইয়াবা বিক্রি করতে আসে। এরপর শিহান ও আলমগীর শামীমের কাছ থেকে টাকা ছাড়াই জোর করে ইয়াবার চালান ও তার ব্যবহৃত মুঠোফোন রেখে দেয়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে চরম বিরোধের সৃষ্টি হয়। এ কারণেও ঘটতে পারে এ হতাহতের ঘটনা।
জনমনে প্রশ্ন কে এই মাদক ব্যবসায়ী শামীম? পুলিশ তাকে হণ্যে হয়ে খুঁজছে। খবর পেয়ে ধামরাই থানা পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে লাশ উদ্ধার ও সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে।এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলা হয়েছে ধামরাই থানায়। অফিসার ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মোঃ আতিকুর রহমান আতিক বলেন, ধারণা করা হচ্ছে ঘটনাটি পূর্ব শত্রুতার জেরে ঘটতে পারে। তবে মাদকের কানেকশন আছে কিনা তাও গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ইমরান খান,জিএন