বিএনএ ডেস্ক: ইউক্রেনের চারটি এলাকা রাশিয়ার অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে একটি খসড়া নিন্দা প্রস্তাব জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বাতিল হয়েছে। এই নিন্দা প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত ছিল রশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত ভারত ও চীন। তবে রাশিয়া এ প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে।
জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস গ্রিনফিল্ড শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে প্রস্তাবটি উপস্থাপন করেন। এতে সদস্য দেশগুলোকে ইউক্রেনের কোনো পরিবর্তিত অবস্থা স্বীকৃতি না দেয়ার আহ্বান জানানো হয়। একইসঙ্গে এ প্রস্তাবে রাশিয়াকে ইউক্রেন থেকে সেনা প্রত্যাহারে বাধ্য করার কথা বলা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র এবং আলবেনিয়ার যৌথভাবে করা এ নিন্দা প্রস্তাবে ইউক্রেনের রুশ-দখলকৃত অংশে অনুষ্ঠিত ‘অবৈধ’ গণভোটের নিন্দা এবং সব রাষ্ট্রের প্রতি ইউক্রেনের সীমানায় কোনো পরিবর্তনের স্বীকৃতি না দেয়ার আহ্বান জানানো হয়।
নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দশটি দেশ এ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। তবে চীন, গ্যাবন, ভারত এবং ব্রাজিল ভোটদানে বিরত থাকে।
ভোটদানে বিরত থাকা মানে রাশিয়ার পক্ষ নেয়া নয় মন্তব্য করেন থমাস-গ্রিনফিল্ড। বৈঠকের পর সাংবাদিকদের কাছে তিনি বলেন, একটি দেশও রাশিয়ার পক্ষে ভোট দেয়নি। ভোটদানে বিরত থাকা মানে রাশিয়ার পক্ষ পরিষ্কার করে না।
জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া প্রস্তাবের বিপক্ষে একমাত্র ভোটটি দেন। এ সময় তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে অঞ্চলগুলো মস্কো দখল করেছে এবং যেখানে এখনো লড়াই চলছে, তারা রাশিয়ার অংশ হতে ভোট দিয়েছে।
জাতিসংঘে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত সার্গেই কিসলিতস বলেছেন, প্রস্তাবের বিপক্ষে একটি মাত্র ভোট পড়েছে। এতেই প্রমাণিত হয় রাশিয়া বিচ্ছিন্ন। রাশিয়ার বাস্তবতা অস্বীকার করার মরিয়া প্রচেষ্টার সাক্ষ্য দিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের দূত বারবারা উডওয়ার্ড বলেছেন, রাশিয়া ‘তার অবৈধ কার্যকলাপকে রক্ষা করতে এ ভেটোর অপব্যবহার করেছে’। ইউক্রেনের চারটি এলাকা রাশিয়ার অন্তর্ভুক্তির ‘কোনো আইনি বৈধতা নেই’।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে ৪টি অঞ্চলকে রাশিয়ার অংশ ঘোষণা করছেন।
ইউক্রেনের ৪ অঞ্চল রাশিয়ায় যুক্ত
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ক্রেমলিনে এক ভাষণে ইউক্রেনের একটি অংশকে নিজেদের বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা ইউক্রেনের ৪ অঞ্চল খেরসন, ঝাপোরিঝঝিয়া, দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে নিজেদের মূল ভূখণ্ডের অংশ হিসেবে ঘোষণা দেন।
পুতিন বলেন, খেরসন, ঝাপোরিঝঝিয়া, দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলে বসবাসকারীরা চিরকালের জন্য আমাদের স্বদেশি হয়ে উঠছেন। আমরা সব শক্তি এবং উপায়ে আমাদের ভূমি রক্ষা করব। কিয়েভ সরকারকে অবিলম্বে শত্রুতা বন্ধ এবং আলোচনার টেবিলে ফিরে আসার আহ্বান জানান পুতিন।
পুতিনের ইউক্রেনের ১৫ শতাংশের ওপর রাশিয়ান অর্ন্তভূক্তির ঘোষণা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের বৃহত্তম সংযোজন। তবে, পশ্চিমা দেশগুলো এবং এমনকি রাশিয়ার অনেক ঘনিষ্ঠ মিত্র এটি জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস একে জাতিসংঘ সনদের অবৈধ লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছেন।
ন্যাটো ভূখণ্ডের ‘প্রতিটি ইঞ্চি’ রক্ষা করবে যুক্তরাষ্ট্র: বাইডেন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শুক্রবার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটো ভূখণ্ডের ‘প্রতিটি ইঞ্চি’ রক্ষা করবে। বাইডেন বলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ইউক্রেনের কিছু অংশ দখল করার লক্ষণ হলো তিনি দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা পুতিনকে শুধু ভয়ই দেখাবে না।
রাশিয়ার পার্লামেন্ট সদস্যসহ সামরিক খাতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা
ইউক্রেনের কিছু অংশ নিজেদের ভূখণ্ড ঘোষণার পর রাশিয়ার ওপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়ার সামরিকখাত, পার্লামেন্ট সদস্যসহ কোম্পানিকে লক্ষ্য করে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
রয়টার্স জানায়, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শুক্রবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে বড় সংযোজন ঘোষণার পর ওয়াশিংটন এই ব্যবস্থা নেয়। পুতিন রুশ বাহিনীর দখলে থাকা ইউক্রেনের ১৫ শতাংশ এলাকা নিজেদের মধ্যে সংযুক্তির ঘোষণা দেন।
এ ঘটনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক বিবৃতিতে বলেন বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এক করব, যেন তারা এই রাশিয়ার কর্মকাণ্ডকে নিন্দা জানায় এবং রাশিয়াকে জবাবদিহির আওতায় আনতে পারে। আমরা ইউক্রেনকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ চালিয়ে যাব।
এর আগে, চলতি বছরে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা রাশিয়ার ওপর নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এতে রাশিয়ার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে প্রভাব পড়েছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে।
পুতিন পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, ইউরোপ নজরদারি বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পাইপলাইনগুলি উড়িয়ে দিচ্ছে।
শুক্রবার এক ভাষণে পুতিন পশ্চিমাদের নব্য-ঔপনিবেশিক বলে সমালোচনা করেন। অন্যদিকে ইউক্রেন বলেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দেয়ার আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তি করবে।
মার্কিন ট্রেজারি ও বাণিজ্য বিভাগের দিকনির্দেশনায় সতর্ক করে দেয়া হয়েছে, মস্কোকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বা বস্তুগত সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলোসহ রাশিয়ার বাইরে যে কেউ এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়তে পারে। ট্রেজারি নিষেধাজ্ঞাগুলি সাধারণত নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকাদের যে কোনো মার্কিন সম্পদ জব্দ করে।
ট্রেজারি বলেছে, তারা রাশিয়ার সামরিকখাতের ১৪ জন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২ নেতা, শীর্ষ কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্য এবং পার্লামেন্টের ২৭৮ জন সদস্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
ন্যাটো সদস্যপদের আবেদন করলেন জেলেনস্কি
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ন্যাটো সামরিক জোটের সদস্যপদের জন্য আবেদন করেছেন। একইসঙ্গে তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে দেন। তিনি মস্কোকে পাল্টা আক্রমণ করে বলেন, তারা চারটি ইউক্রেনীয় অঞ্চল দখল করেছে।
জেলেনস্কি একটি অনলাইন ভিডিওতে ন্যাটোর আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করেছেন। এটি স্পষ্টতই ক্রেমলিনকে প্রত্যাখ্যান করতেই করা হয়েছে। পুতিন মস্কোতে ইউক্রেনের ৪টি অংঞ্চলকে নিজেদের ভূখণ্ড ঘোষণার পর এ ঘটনা ঘটল। ।
ভিডিওতে দেখা যায়, জেলেনস্কি যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সদস্যপদ গ্রহণের ঘোষণা দিচ্ছেন এবং দেশটির প্রধানমন্ত্রী ও পার্লামেন্টের স্পিকারের পাশে থাকা একটি দলিলে স্বাক্ষর করছেন।
ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে তার সশস্ত্র বাহিনী পাঠানোর আগে, মস্কো আইনত নিশ্চয়তা চেয়েছিল- ইউক্রেনকে কখনই মার্কিন নেতৃত্বাধীন ট্রান্সআটলান্টিক প্রতিরক্ষা জোটের সদস্য করা হবে না।
বিএনএ/এ আর