বিএনএ, চট্টগ্রাম: সীতাকুন্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের লালবেগ এলাকায় জামাল উদ্দিন প্রকাশ টেম্পু জামাল নামে এক ব্যক্তি অবৈধভাবে চালু করেছে একটি লুব্রিকেন্ট কারখানা।অভিযোগ রয়েছে, পুরানো জাহাজের পোড়া মবিল থেকে গভীররাতে মানহীন ভেজাল মবিল প্রস্তুত করা হয় এ কারখানায়। প্রস্তুতকৃত মবিলের নাম দেয়া হয়েছে ‘লুব স্টার লুব্রিকেন্ট’। যদিও কারখানাটিতে এ নামের কোনো সাইনবোর্ড নেই।
থানা পুলিশ, পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মাসোহারা দিয়ে কারখানাটি বছরের পর বছর ভেজাল মবিল বাজারজাত করছে। এতে লাখ লাখ যানবাহানের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাচ্ছে। আর এ অধৈধ নামহীন কারখানাতে গত ২৭ আগস্ট খুন হন রিয়াজ উদ্দিন নাম (২৮) নামে এক বাবুর্চি।কারখানা মালিক জামাল উদ্দিন খুনের এ ঘটনাটি ধামা চাপা দেয়ার পাঁয়তারা করছে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজারের চকরিয়ার রিয়াজ উদ্দিন বেশ কয়েক মাস আগে অনুমোদনহীন লুব্রিকেন্ট কারখানাটিতে বাবুর্চির চাকুরি নেয়। সম্প্রতি সে একটি বড় শিল্প কারখানায় চাকুরির সুযোগ পায়। ৩১ আগস্ট সে চলে যাওয়ার কথা জানিয়ে তার বকেয়া পাওনা চায়। এ নিয়ে জামাল উদ্দিনের ভাগিনা মানিকের সঙ্গে কথাকাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে মানিক একটি লোহার পাইপ দিয়ে রিয়াজ উদ্দিনকে পিছন দিক থেকে জোরে আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলে জ্ঞান হারান বার্বুচি রিয়াজ উদ্দিন। এ অবস্থায় তাকে জামাল উদ্দিনের চাচাত ভাই জহুর তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেজিষ্ট্রারে দেখা যায়, ২৭ আগষ্ট ১৫ টা ২৫ মিনিটে তাকে ভর্তি করা হয়েছে। আনায়নকারি হিসাবে নাম লেখা আছে নিজাম উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি। ঘটনাস্থল দেখানো হয়েছে সীতাকুন্ড থানাধীন শীতলপুর রফিক মেম্বারের ভাড়াটিয়া। নিজাম উদ্দিনের বরাত দিয়ে লেখা হয় ভিকটিম রিয়াজ উদ্দীনের বুকে ব্যথা হওয়ার কথা জানালে সে হাসপাতালে নিয়ে নিয়ে যায়। ডাক্তার পর্যবেক্ষণ করে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
এটি হত্যা না স্বাভাবিক মৃত্যু তা নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। ময়না তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হলেই প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। এলাকাবাসি এঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছেন।
সীতাকুন্ড থানার অফিসার ইনচার্জ জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে কীভাবে লুব স্টার লুব্রিকেন্ট কারখানার বাবুর্চির মৃত্যু হয়েছে তা ময়না তদন্তের রিপোর্ট আসার পর জানা যাবে। যদি তাকে খুন করা হয়েছে মর্মে রিপাের্ট পাওয়া যায়, আইন অনুযায়ি হত্যা মামলা রুজু করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে আরও জানা যায়, অবৈধভাবে মানহীন ভেজাল মবিল তৈরির হোতা জামাল উদ্দিন তার স্বজনদের বলতে থাকে থানা পুলিশ, হাসপাতালের ডাক্তার ও নিহত রিয়াজুদ্দিনের পরিবারকে ম্যানেজ করে লাশ হস্তান্তর করেছে। এ ব্যাপারে কেউ মামলা করবে না।
বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি (বিএনএ)কে জামাল উদ্দিন জানান, রিয়াজ উদ্দিন স্ট্রোক করে মারা গেছে। রিয়াজ উদ্দিনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তাকে এবং তার চাচাত ভাই জহুর ও মানিকে জড়িয়ে একটি মহল অপপ্রচার চা্লাচ্ছে। যা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত, মিথ্যা ও কাল্পনিক।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি স্বীকার করেন তার প্রতিষ্ঠান কথিত ‘ লুব স্টার লুব্রিকেন্ট’ এর কোনো অনুমোদন নেই, নেই পরিবেশের ছাড়পত্র। তবে অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছেন। শুধু আবেদন করে বছরের পর বছর কারখানা চালু ও ‘স্টার লুব লুব্রিকেন্ট’ কেন বাজারজাত করছেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি সামনাসামনি এসে কথা বলতে বলেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ‘লুব স্টার লুব্রিকেন্ট’ কারখানাটি লালবেগ এলাকার লোকালয়ে অবস্থিত। উঁচু টিনের ঘেরা। বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই ভেতরে কি চলছে। সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার নেই। দিনের বেলায় এটি বন্ধ রাখা হয়। শুধু রাতে চালু করা হয়। অপরিশোধিত বর্জ্য নিঃসরণ করে এলাকার পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। এক ধরনের তীব্র ঝাঁজালো গন্ধের কারণে এলাকার মানুষের মধ্যে শ্বাস কষ্ট শুরু হয়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক নারী-পুরুষ চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। কারখানাটি থেকে কেমিক্যাল মিশ্রিত বর্জ্য নিঃসৃত হচ্ছে পাশের একটি ফসলি জমিতে। বৃষ্টির পানিতে বিষাক্ত বর্জ্য আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে দূষিত করছে পরিবেশ।
এলাকার বাসিন্দারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করেন, জামাল উদ্দিন প্রকাশ টেম্পু জামাল এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ টু- শব্দ করতে পারে না। থানা পুলিশ ও পরিবেশ অধিদপ্তেরর লোকজনের সঙ্গে তার দহরম-মহরম সম্পর্ক। তারা এসে মাসোহারা নিয়ে যায়।
শুধু তাই নয়, জামাল উদ্দিন পুলিশ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের পারিবারিক কাজে ব্যবহারের জন্য একটি গাড়ির ব্যবস্থা রেখেছেন বলে স্থানীয় একটি সূত্র জানায়। ফলে অবৈধ এ কারখানাটি বন্ধ ও মালিকের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।
বিএনএনিউজ২৪,