28 C
আবহাওয়া
৬:৫৭ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ২১, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ভাতের হোটেলের কারণে বদলি হয়ে গেলেন ডিবি হারুন?

ভাতের হোটেলের কারণে বদলি হয়ে গেলেন ডিবি হারুন?


বিএনএ ডেস্ক : পলিটিক্যাল এলিট থেকে বিনোদন জগতের নায়ক-নায়িকাকে ধরে নিয়ে গেলে কিংবা তার কাছে সহযোগীতা চাইতে গেলেই ঢাকা মহানগর মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা প্রধান হারুনুর রশীদ তাদের ভাতের টেবিলে বসিয়ে দিতেন। আবার সেই ছবি গণমাধ্যমে পাঠিয়ে কিংবা নিজের ফেসবুকে আপলোড করে বাহাবা নেওয়ার প্রবনতা ডিবি হারুনের দীর্ঘ দিনের।

YouTube player

সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ৬ সমন্বয়ককে অ্যাপায়নের ভিডিও ও ছবি ফেসবুকে দিয়ে ফেঁসে যান। বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারককে মন্তব্য করতে দেখা যায়। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ১৪ দলীয় জোটের রূদ্ধদ্বার বৈঠকে ডিবি হারুনের কথিত ভাতের হোটেলের বিষয়টি উঠে আসে। অবশেষে তাকে ডিবির দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স শাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাকে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সদ্য সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বিসিএস পুলিশের ২০তম ব্যাচের একজন কর্মকর্তা। কিশোরগঞ্জের বাসিন্দা হারুন প্রথম আলোচনায় আসেন ২০১১ সালে তৎকালীন বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নাল আবেদীন ফারুককে সংসদ ভবন এলাকায় মারধর করার ঘটনায়। ওই সময় তিনি ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগে অতিরিক্ত উপ-কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিষয়টি নিয়ে সেসময় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়। এরপর পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি পেয়ে দেশের গুরুত্বপূর্ণ দুই জেলা গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। সেসময়ও নানা কারণে আলোচনায় আসেন হারুন।

২০১৬ সালে গাজীপুরে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দুই দিন আগে তৎকালীন এসপি হারুনকে প্রত্যাহার করার আদেশ দেয় নির্বাচন কমিশন। যদিও পরবর্তী সময়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আবারও তাকে গাজীপুরের এসপি হিসেবে পদায়ন করে।

পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পান হারুন। নারায়ণগঞ্জে দায়িত্ব পালনের সময় পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ হাশেমের ছেলে ও আম্বার গ্রুপের চেয়ারম্যান শওকত আজিজ রাসেলের সঙ্গে বিরোধ তৈরি হয় তার। এর জের ধরে শওকত আজিজের গাড়ি ও গাড়িচালককে আটক ও একদিন পর স্ত্রী-সন্তানকে আটক করেন তিনি। পরে গাড়ি থেকে ইয়াবা, মদ ও গুলি উদ্ধারের দাবি করেন হারুন। কিন্তু শওকত আজিজ রাসেলের বাসার সিসিটিভি ফুটেজে বাসা থেকে ধরে নেওয়ার বিষয়টি প্রচার হলে বিপাকে পড়েন হারুন। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে ২০১৯ সালের নভেম্বরে নারায়ণগঞ্জের তৎকালীন এসপি হারুনকে প্রত্যাহার করে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের টিআর শাখায় বদলি করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২১ সালে পুলিশ সুপার পদ থেকে অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে ডিবি উত্তর এবং সাইবার ও স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের যুগ্ম কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন হারুন। এর এক বছরের মধ্যেই ডিআইজি পদে পদোন্নতি পান তিনি। পরবর্তী সময়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে ডিবির দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। এরপর থেকেই ডিবিতে কথিত সেই ‘ভাতের হোটেল’ চালু করে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ডিবিতে দায়িত্ব পালনের সময় বিকৃত সুরে রবীন্দ্রসংগীত গাওয়ার অভিযোগে হিরো আলমকে আটক করেও বিতর্কের জন্ম দেন তিনি। হিরো আলমকে আটকের ঘটনাটি সেসময় বিদেশি মিডিয়াতেও ফলাও করে প্রচার হয়। সেসময় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও হারুনের কর্মকাণ্ডে বিব্রত হয়েছেন।
তবে বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে সড়কে পিটিয়ে আহত করার পর তাকে নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলে ডিবিতে এনে ভাত খাইয়ে তা প্রচারের মাধ্যমে নতুন করে আলোচনায় আসেন হারুন। এছাড়া তার কাছে অভিযোগ নিয়ে আসা বিভিন্ন পর্যায়ের তারকাদেরও ভাত খাইয়ে তা প্রচার করতেন তিনি নিজেই। এমনকি টিক-টকার ও ব্লগারদের অনেককেই তার কার্যালয়ে তাকে নিয়ে ব্লগ বানাতে দেখা গেছে। এসব কারণে সারা দেশে ‘হারুনের ভাতের হোটেল’ নামটি পরিচিত হয়ে উঠে।

তার এসব কর্মকাণ্ডে ঊর্ধ্বতন অনেক কর্মকর্তাই বিব্রত বোধ করতেন। কিন্তু হারুনের প্রভাবের কারণে মুখ ফুটে কেউ কোনও মন্তব্য করতে চাননি কখনও।

ডিবির একটি সূত্র জানায়, সরকারের বিশেষ আনুকূল্য পাওয়ার জন্য হারুনের নির্দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে তুলে আনা হয়। আইন অনুযায়ী তাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির না করে কথিত নিরাপত্তা দেওয়ার নামে তাদের ডিবি হেফাজতে রাখা হয়। সেখানে তাদের কাছ থেকে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ভিডিও করে তা প্রচার করা হয়। এছাড়া হারুন তার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছয় সমন্বয়কের সঙ্গে দুপুরের খাবারের একটি ছবিও প্রকাশ করেন। এ নিয়েই শুরু হয় সমালোচনা।

এক রিটের শুনানিতে উচ্চ আদালত বলেন, ‘জাতিকে নিয়ে মশকরা কইরেন না, যাকে ধরেন, খাবার টেবিলে বসিয়ে দেন’। উচ্চ আদালতের এই মন্তব্যের পর হারুনের কর্মকাণ্ডে সরকারের ভাবমূর্তী ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নালিশ করেন ১৪ দলীয় জোটের নেতারা। এরপরই তাকে ডিবির দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। বন্ধ হয়ে যায় হারুনের কথিত ভাতের হোটেল। তার বদলির পরদিনই ডিবি কার্যালয় থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৬ সমন্বয়ককে।

শামীমা চৌধুরী শাম্মী

Loading


শিরোনাম বিএনএ