বিএনএ, গোপালগঞ্জ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার বাবা এই দেশ স্বাধীন করে গেছেন। তার স্বপ্ন পূরণ করে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়া আমার লক্ষ্য। আজকে দেশে হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যা মাত্র পাঁচ শতাংশ। সেটাও যেন না থাকে সেই ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। দেশের একজন মানুষও হতদরিদ্র থাকবে না।
শনিবার (১ জুলাই) দুপুরে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার বাবা এই দেশ স্বাধীন করে গেছেন। তার স্বপ্ন পূরণ করে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়া আমার লক্ষ্য। প্রত্যেকেরই ঘর-জমি ও জীবিকার ব্যবস্থা আমরা করতে পারব, ইনশাল্লাহ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আড়াই কোটি শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিচ্ছি। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ওষুধ দিচ্ছি, শিক্ষার ব্যবস্থা করছি। এ ছাড়া বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজের মধ্য দিয়ে আমরা মানুষকে সহযোগিতা করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, কিছু মানুষ আছেন যারা দেশের ভালো দেখতে পান না। যারা দেখে না, যারা চোখ থাকতেও অন্ধ, তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলার নেই। শুধু এটাই বলব, তারা দেখে না কিন্তু ভোগ করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা চায়নি আওয়ামী লীগ কোনোদিন ক্ষমতায় আসুক, যারা চায়নি কখনো এদেশের মানুষ পেটভরে ভাত খাক। মানুষের মাথাগোঁজার ঠাঁই হউক, রোগের চিকিৎসা পাক, শিক্ষা পাক। তাদের প্রতি আমাদের চ্যালেঞ্জ, এই দেশ আমার বাপ স্বাধীন করেছে, আমার বাপ যে লক্ষ্য নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন, সেটি আমি পূরণ করবোই।
তিনি বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন করা এটাই তো আমাদের লক্ষ্য। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল পদ্মা সেতু, মিথ্যা অপবাদ দিতে চেয়েছিল। নিজের ভাগ্য তো গড়তে আসিনি, এসেছি বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে। তারপরও যখন অপবাদ, তখন প্রতিবাদ করে নিজেদের টাকায় পদ্মাসেতু করতে পেরেছি।
এ সময় নিজ এলাকার উন্নয়নের প্রতি জোর দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কোটালীপাড়ার মানুষকে আমি দায়িত্ব দেবো যাতে করে আমার নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নগুলো বাদ না যায়। কোথায় কি উন্নয়ন হচ্ছে তার সমস্ত তালিকা আমার কাছে আছে। সমস্ত গ্রামের রাস্তাঘাট সবকিছুর তালিকা আমার কাছে আছে। কোথায় কি হচ্ছে, কি কাজ হচ্ছে সব খবর আমি রাখি। এমনকি ছবি তুলেও সেখানকার খোঁজ খবর আমি রাখি। এটা হয়তো অনেকে জানেন না।
তিনি বলেন, আমি চেয়ারম্যান সাহেবদের জানালাম। আমার কাছে প্রত্যেকটা রাস্তাঘাটের ফাইল করা আছে। আমি কিন্তু এগুলো লক্ষ্য রাখি। শুধু কোটালীপাড়া নয়, আমি সারা দেশের প্রত্যেকটা উন্নয়ন করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী প্রচণ্ড খাদ্যের অভাব। তাই আমাদের সব অনাবাদি জমি আবাদ করতে হবে। যাতে করে আমাদের খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হতে না হয়। এ সময়ে বৃষ্টি হওয়াতে অনেকের অসুবিধা হচ্ছে, কিন্তু তারপরেও বৃষ্টি আমাদের জন্য আশীর্বাদ। আমাদের বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করতে হবে।
দুদিনের সফরে প্রধানমন্ত্রী আজ নিজ এলাকায় গেছেন। সেখানে তার সফরে সঙ্গী হয়েছেন আইসিটি উপদেষ্টা ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।
এর আগে, শনিবার সকাল ৮টায় গণভবন থেকে সড়কপথে গোপালগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হন প্রধানমন্ত্রী। তিনি ৮টা ৫০ মিনিটে পদ্মা সেতু হয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কোটালীপাড়ায় পৌঁছান।
পরে তিনটি গাছের চারা রোপণ করে কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় উদ্বোধন করেন তিনি। সেখানে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ঈদুল আজহা উপলক্ষে স্থানীয় নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।
কোটালীপাড়ায় আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রধানমন্ত্রী বিকেল ৩টায় টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। টুঙ্গিপাড়া পৌঁছে প্রথমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানাবেন। পরে বঙ্গবন্ধু ও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তার পরিবারের শহীদ সদস্যদের রূহের মাগফেরাত কামনা করে সূরা ফাতেহা পাঠ, দোয়া ও বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী তার টুঙ্গিপাড়ার নিজ বাড়িতে বিশ্রামে যাবেন। রাতে সেখানে তিনি রাত্রিযাপন করবেন।
পরদিন ২ জুলাই সকাল ৯টায় টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন শেখ হাসিনা। পরে তার নিজ বাড়িতে বিশ্রামে যাবেন। এরপর দুপুর ১টায় সড়ক পথে টুঙ্গিপাড়া থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।
বিএনএ/এমএফ/এইচ এইচ