বিএনএ ডেস্ক: সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিচালক রাইয়ান কবিরকে পর্ষদ থেকে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক মাসের মধ্যে তার পরিচালক পদ শূন্য করে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে বলা হয়েছে। রাইয়ান কবির সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলমগীর কবিরের ছেলে।
মঙ্গলবার (৩১ মে) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত চিঠি সাউথইস্ট ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে। রাইয়ান কবিরকে অপসারণের নির্দেশ দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় রাইয়ান কবির সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিচালক থাকতে পারবেন না। বিষয়টি তাদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এক মাসের মধ্যে তার পরিচালক পদ শূন্য করে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে বলা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে চেষ্টা করেও সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলমগীর কবির কোন কথা বলেন নি।
চেয়ারম্যান পদ ঘিরে গত বছরের শুরু থেকেই বিরোধ চলছে সাউথইস্ট ব্যাংকে। ২০২০ সালের ২৮ অক্টোবর সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিচালক পদে নিয়োগ পান রাইয়ান কবির। সম্প্রতি তার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি অভিযোগ জমা পড়ে। অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় রাইয়ান কবিরকে পর্ষদ থেকে অপসারণের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি ব্যাংকে চাকরি করলে তিনি একই ব্যাংকের পরিচালক হতে পারবেন না। আবার পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী কোনো ব্যক্তি নিজ ব্যাংকে চাকরি করতে পারবেন না। কিন্তু এ নীতিমালা লঙ্ঘন করেই রাইয়ান কবিরকে পরিচালক করেছে সাউথইস্ট ব্যাংক। রাইয়ান কবির এর আগে সাউথইস্ট ব্যাংকের কর্মকর্তা হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৫ সালে দেশের দ্বিতীয় প্রজন্মের বেসরকারি ব্যাংক হিসেবে সাউথইস্টের যাত্রা। সম্পদের আকারের দিক থেকে এটি দেশের বেসরকারি খাতের বড় ব্যাংকগুলোর একটি। বর্তমানে সাউথইস্ট ব্যাংকের মোট সম্পদ ও দায়ের পরিমাণ প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা।
ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন শিল্পোদ্যোক্তা এম এ কাশেম। ধারাবাহিকভাবে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করেন শিল্পোদ্যোক্তা ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন, রাগীব আলী ও আজিম উদ্দিন আহমেদ। ২০০২ সালে সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে যুক্ত হন পেশাদার হিসাববিদ আলমগীর কবির। ২০০৪ সালে তিনি চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত টানা ১৮ বছর পদটি ধরে রেখেছেন।
দীর্ঘদিন একই ব্যক্তি চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করা নিয়ে সাউথইস্ট ব্যাংকের উদ্যোক্তা-পরিচালকদের মধ্যে অসন্তোষ ছিল। চেয়ারম্যান হিসেবে আলমগীর কবিরের একক নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব নিয়ে অন্য পরিচালকরা আপত্তি জানাচ্ছিলেন। তবে বিরোধের বিষয়টি সীমাবদ্ধ ছিল পরিচালনা পর্ষদের মধ্যেই। কিন্তু গত বছরের শুরুতে তা প্রকাশ্য রূপ নেয়। আলমগীর কবিরের বিরুদ্ধে ব্যাংকটির পাঁচজন উদ্যোক্তা-পরিচালক অবস্থান নেন। চেয়ারম্যানের প্রতি অনাস্থার অংশ হিসেবে উদ্যোক্তারা ব্যাংকটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) বয়কট করেন। বিরোধের বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে সাউথইস্ট ব্যাংকের পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনায় অস্থিরতা তৈরি হয়। কয়েক দফার চেষ্টায় সমঝোতা হলেও শেষ পর্যন্ত তা ভেস্তে যায়।
সম্প্রতি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্যকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। এর মধ্যে সাউথইস্ট ব্যাংকের দুই পরিচালক এমএ কাশেম ও রেহানা রহমান রয়েছেন। ব্যাংকটির অপর পরিচালক আজিম উদ্দিন আহমেদও একই মামলার আসামি। সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ নিয়ে শুরু হওয়া বিরোধের কালো ছায়াই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিএনএ/ এ আর