বিএনএ, ঢাকা: ছেলেদের কান্না থামানোর জন্য স্ত্রী -স্বামীকে মোবাইল ফোনে কল করে বলতে থাকে তখন স্বামী বলে ছেলেদের নিয়ে রেস্টুরেন্টে খেতে যাও । রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়ে আর জীবিত ফিরে এলো না মা ও দুই ছেলে । তাদের কান্না চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে। রাজধানীর বেইলি রোডে বসবাস করেন আশিক ও নাজিয়া দম্পতি।
ব্যবসায়ী আশিক তখন বনানীতে নিজ অফিসে ছিলেন। সন্ধ্যায় স্ত্রী নাজিয়া ফোন করে বলেন, ‘বাচ্চা দুইটা কান্না করছে, কী করবো?’ বাচ্চাদের কান্না থামাতে আশিক সন্তানদের নিয়ে রেস্টুরেন্টে খেতে যেতে বলেন। বেইলি রোডের আগুন লাগা ভবনের তৃতীয় তলায় দুই ছেলে আয়াত (৮) এবং আয়ানকে (৬) নিয়ে খাবার খেতে যান নাজিয়া। সেখানেই দুই সন্তানসহ আগুনে পুড়ে মারা যান তারা।
শুক্রবার (১ মার্চ) সকালের দিকে এই প্রতিবেদকের কাছে এভাবেই ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন আশিকের ফুফাতো ভাই রিফাত। স্ত্রী ও সন্তানদের মৃত্যুর খবর পেয়ে আশিক অজ্ঞান হয়ে গেছেন।
রিফাত জানান, সন্ধ্যার পরে বাচ্চাদের কান্নার কথা ভাইয়াকে ফোনে জানান ভাবি। পরে ভাইয়ার (আশিক) অনুমতি নিয়ে ভাবি দুই ছেলেকে নিয়ে আগুন লাগা ভবনের তৃতীয় তলায় থাকা ‘খানাস’ রেস্টুরেন্টে যান। সাড়ে ১০টার দিকে ভাবি ভাইয়াকে ফোনে জানান- রেস্টুরেন্টে আগুন লেগেছে, ছোট ছেলে আয়ানকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে আর ফোনে কথা বলতে পারেননি। আমরা আয়ানকে সিঁড়িতে পেয়েছি। তার মরদেহ বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ছোট বাচ্চা ধোঁয়ায় শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে হয়তো মারা গেছে। ভাবি আর আয়াতের মরদেহ মর্গে এসে শনাক্ত করি। আমি ও আত্মীয়রা তাদের মরদেহ নিতে এসেছি। এসময় আক্ষেপ করে রিফাত বলেন, ভাবিকে অনেক ভালোবাসতেন ভাইয়া। ১২ বছর সম্পর্কের পর দুইজন বিয়ে করেন। দুই সন্তান নিয়ে সুখের সংসার ছিল। সব শেষ হয়ে গেলো। ভাইয়া তাদেরকে ছাড়া কি ভাবে থাকবে। ভাইয়াতো বার বার তাদের কথা বলেছেন আর অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন।
বেইলি রোডে অবস্থিত কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টের ভবনে আগুন লাগে রাত ৯টা ৫০ মিনিটে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে ফায়ার সার্ভিসের মোট ১৩টি ইউনিট। এতে এখন পর্যন্ত ৪৩ জন নিহতের তথ্য মিলেছে। এবং ২২ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থল থেকে ৭৫ জনকে উদ্ধার করেছেন, এবং ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
বিএনএ/ আজিজুল, ওজি/হাসনা