বিএনএ, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার’ চার সদস্যকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। মঙ্গলবার ( ২৮ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১২টার দিকে পটিয়া বাইপাস এলাকায় র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৭ এর অভিযানে তাদেরকে আটক করা হয়। বুধবার (১ মার্চ) বিষয়টি চট্টগ্রাম র্যাবের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. নুরুল আবছার নিশ্চিত করেন।
আটককৃতরা হলেন- হোসাইন আহমদ (২২), নিহাল আব্দুল্লাহ (১৯), আল আমিন (২২) ও আল আমিন প্রকাশ পার্থ কুমার দাস (২১)।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মুখপাত্র লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সংবাদ সম্মেলনে জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আটককৃতরা সহপাঠি, নিকটাত্মীয়, স্থানীয় পরিচিত ব্যক্তি বা বন্ধু বান্ধবের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে উক্ত সংগঠনে যোগদান করে। বিভিন্ন সময়ে জামাতুল আনসারের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যরা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মুসলমানদের উপর নির্যাতন-নিপীড়নের ভিডিও দেখানো, রাজনীতি, সমাজ ব্যবস্থা সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়ম, ধর্মীয় অপব্যাখ্যা ও বিভিন্ন তাত্তি¡ক জ্ঞান প্রদান করার মাধ্যমে তাদেরকে সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতি নিতে পরিবার হতে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়ে উৎসাহী করে তুলত। তারা বিভিন্ন সময়ে তথাকথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে স্বেচ্ছায় নিখোঁজ হয়।
হিজরতের প্রথমে তাদেরকে সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যদের তত্ত্বাবধানে রেখে পটুয়াখালী ও ভোলার চর এলাকা, ঢাকা ও কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় শারীরিক কসরত, জঙ্গিবাদ বিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, তাত্ত্বিক ও মনস্তাত্ত্বিক জ্ঞান প্রদান করা হত। প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষে তাদেরকে সমতল হতে পাহাড়ে সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য প্রেরণ করা হয় এবং শুরা সদস্য রাকিব এর মাধ্যমে তারা পার্বত্য অঞ্চলের বাকলাই পাড়া হয়ে কেটিসি পাহাড়ে প্রশিক্ষণ শিবিরে পৌছায়। পার্বত্য অঞ্চলে তারা বিভিন্ন ধরণের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ, বোমা তৈরি বিষয়ক প্রশিক্ষণ ও প্রতিক‚ল পরিবেশে টিকে থাকা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে।
আটককৃতরা আরও জানায়, বিভিন্ন সময় কেএনএফ এর নাথান বম, বাংচুং, রামমোয়, ডিকলিয়ান, পাহল এবং কাকুলীসহ অনেকেই প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে আসত। প্রশিক্ষণের জন্য অস্ত্র ও অন্যান্য রসদ তারা অর্থের বিনিময়ে কেএনএফ এর সদস্যদের নিকট হতে সংগ্রহ করত এবং কেএনএফ এর সদস্যরা বিভিন্ন সময়ে উক্ত জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ প্রদান করত বলে জানা যায়। পরবর্তীতে পার্বত্য অঞ্চলে র্যাবের অভিযান শুরু হলে তারা সংগঠনের আমীরের নির্দেশে কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পার্বত্য অঞ্চলে আত্মগোপন করে। তারা ছোট ছোট গ্রুপে সাইজামপাড়া, মুন্নুয়াম পাড়া, রোয়াংছড়ি, পাইক্ষং পাড়া, তেলাং পাড়াসহ পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে। গত ০৪ দিন পূর্বে তারা সমতলে আসার উদ্দেশ্যে পাহাড়ের গহীন থেকে হেঁটে বান্দরবানের টঙ্কাবতী এলাকায় আসে। পরবর্তীতে সিএনজিযোগে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে আসার পথে পটিয়া বাইপাস এলাকা থেকে চার জনকে আটক করা হয় এবং অভিযানকালীন সময়ে আরও ৪-৫ জন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
র্যাব জানায়, হোসাইন রাজধানীর একটি মাদ্রাসায় অধ্যয়ণরত ছিল। সে ২০২১ সালে সিরাজ এর মাধ্যমে এই সংগঠনে যোগদান করে। পরবর্তীতে সিরাজ তাকে সংগঠনের শুরা সদস্য রাকিবের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে সংগঠনের শুরা সদস্য রাকিবের মাধ্যমে সশস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য বাকলাই পাড়া হয়ে পাহাড়ে কেটিসিতে যায়। পাহাড়ে যাওয়ার পর একে-৪৭ সহ বিভিন্ন অস্ত্র চালনা, বোমা প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সামরিক কৌশল বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। আল আমিন কুমিল্লার একটি মাদ্রাসায় অধ্যয়ণরত ছিল। সে ২০২১ সালে মাদ্রাসার এক সহপাঠীর মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয় এবং পূর্বে ফাহিম এর মাধ্যমে উগ্রবাদ সম্পর্কিত বিভিন্ন বই ও পার্শ্ববর্তী দেশে মুসলিম নির্যাতনের ভিডিও কন্টেন্ট দেখে সংগঠনে যোগদান করে। পরবর্তীতে তথা কথিত হিজরতের নামে ২০২১ সালের আগস্ট মাসে পরিবার থেকে নিরুদ্দেশ হয়।
বিএনএ/এমএফ
