26 C
আবহাওয়া
৭:৪৩ অপরাহ্ণ - ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » নার্স বললেন, ‘আপনিই প্রধানমন্ত্রী’!

নার্স বললেন, ‘আপনিই প্রধানমন্ত্রী’!

নার্স বললেন, ‘আপনিই প্রধানমন্ত্রী’!

বিএনএ, ঢাকা: বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের দাভোস সফর করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সে সময় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের বৈদেশিক বিষয়ক প্রধান ভাষ্যকার গিডেয়েন রাখমানের উপস্থাপনায় একটি পডকাস্টে খোলামেলা কথা বলেন তিনি। ‘রাখমান রিভিউ’ নামের ওই পডকাস্ট অনুষ্ঠানে কথোপকথন লিখিত আকারে গত বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হয়েছে।

কথোপকথনে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমি যখন প্রথম ফোনকল পাই, তখন আমি প্যারিসের হাসপাতালে ছিলাম। আমার ছোট্ট একটি অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। তখন ছাত্রনেতারা ফোন দিল। যদিও আমি বাংলাদেশে কী ঘটছে, সেসব খবর প্রতিদিন মুঠোফোনে দেখতাম। তখন তারা বলল, শেখ হাসিনা চলে গেছেন। এখন আমাদের সরকার গঠন করতে হবে। দয়া করে, আমাদের জন্য সরকার গঠন করুন।”

আমি বলেছিলাম, না, আমি সেই ব্যক্তি নই। আমি এর কিছুই জানি না। আমি এর সঙ্গে যুক্ত হতেও চাই না।’

YouTube player

কারা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল—এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা। আমি তাদের কাউকেই চিনতাম না। কখনো তাদের সম্পর্কে শুনিনি। কাজেই আমি তাদের বিকল্প কাউকে খোঁজার বিষয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম। তাদের বলেছিলাম, বাংলাদেশে অনেক ভালো নেতা আছেন। তোমরা তাদের খুঁজে নাও।

তারা বলছিল, “না, না, না, আপনাকেই থাকতে হবে। আমরা কাউকে পাইনি।” আমি বলেছিলাম, জোরালো চেষ্টা করো। তারা বলল, “আমাদের হাতে পর্যাপ্ত সময় নেই।” তখন বলেছিলাম, অন্তত একটা দিন চেষ্টা করো। না পেলে ২৪ ঘণ্টা পর আমাকে আবার ফোন করো।’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘ছাত্রনেতারা আমাকে আবারও ফোন করল। বলল, “আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু সম্ভব হয়নি। আপনাকে অবশ্যই দেশে ফিরতে হবে।” শেষ পর্যন্ত আমি বললাম, দেখো, তোমরা রাজপথে জীবন দিয়েছো। প্রচুর রক্তক্ষয় হয়েছে। তোমরা সম্মুখসারিতে আছো। যেহেতু তোমরা এসব করতে পেরেছ, এখন ইচ্ছা না থাকলেও তোমাদের জন্য আমারও কিছু করা উচিত। আর এটাই সেই সময়। সরকারের সংস্কার করতে হবে। আমি রাজি। তোমরা কি একমত? তারা আর কোনো কথা বলেনি।’

সেই দিনের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘ঘণ্টা দুয়েক পর হাসপাতালের একজন নার্স এলেন। তিনি আমাকে একটি ফুলের তোড়া উপহার দিলেন। আমি বললাম, এটা কেন? তখন ওই নার্স বললেন, “আপনি বাংলাদেশের ‘প্রধানমন্ত্রী’, আমরা এটা জানতাম না।” আমি বললাম, এটা আপনি কোথা থেকে জানলেন? তখন তিনি বললেন, “সব গণমাধ্যমে, সব টেলিভিশনে সংবাদ প্রচার হচ্ছে, আপনি বাংলাদেশের ‘প্রধানমন্ত্রী’।” আমি বললাম, আমি আপনার কাছ থেকেই এটা জানলাম।’

দেশে ফেরার স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে ড. ইউনূস বলেন, পুরো জাতি আমার ফেরার উড়োজাহাজের অপেক্ষায় ছিল। বাণিজ্যিক উড়োজাহাজে যাত্রা করেছিলাম। তখন ছাত্রনেতারা নতুন সরকারের রূপরেখা দাঁড় করিয়ে ফেলেছে। আমি বিমানবন্দর থেকেই জাতির সামনে ভাষণ দিলাম। সবাইকে ধৈর্য, শান্তি, একতা বজায় রাখতে বললাম। এটাই ছিল পুরো ঘটনার শুরু।’

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ‘রাখমান রিভিউ’ নামের ওই পডকাস্ট অনুষ্ঠানে, স্বপ্ন, সুখ স্মৃতির কথোপকথন যেদিন প্রকাশিত হয়, সে দিনই ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ আইসিজি বাংলাদেশকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতি বছর আইসিজি একটি ‘ইইউ ওয়াচলিস্ট’ প্রকাশ করে থাকে।

‘বাংলাদেশ: দ্য ডিলেমাস অব এ ডেমোক্রেটিক ট্রানজিশন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ‘হানিমুন পিরিয়ড’ এখন শেষ হয়ে গেছে। হাসিনার পতনের পরপরই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে বিপুল সমর্থন পেয়েছিল, তা কমতে শুরু করেছে। ইউনূস সরকার এখন সুনির্দিষ্ট ফলাফল দেওয়ার জন্য চাপের মুখোমুখি। তার সরকার শুধু অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে বিভেদ ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে তাই নয়, দৈনন্দিন ব্যবস্থাপনা নিয়েও জনগণের সমালোচনার মুখে পড়েছে।

৩০ জানুয়ারি প্রকাশিত ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ আইসিজির, সর্বশেষ নজরদারি তালিকায় বাংলাদেশের পাশাপাশি মলদোভা, কলম্বিয়া, উত্তর কোরিয়া, সুদান, গ্রেট লেকস, ইউক্রেন, সিরিয়া, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ও ইরানের নাম উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয় বিরোধী দল, ছাত্রনেতা, ইসলামপন্থী দলগুলো এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়রা নির্বাচনী সুবিধা পাওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করায় চ্যালেঞ্জ আরও বাড়বে।

প্রতিবেদনে দ্রব্যমূলের উর্ধ্বগতি, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থতি অবনতির কারণে ড. ইউনূসের সরকার জন প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে এবং দিনদিন জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের কথাও আইসিজি’র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, যারা শেষ পর্যন্ত হাসিনা সরকারকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেছে। এই টানাপোড়েনকে দেশের রাজনৈতিক ‘স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে আরও একটি বাধা’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

এর আগে গত আগস্টে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ আইসিজি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে, বাংলাদেশ, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় প্রবেশ করছে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ক্রাইসিস গ্রুপের এই প্রতিবেদনে, একটি বিষয় পরিস্কার হয়ে গেছে যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও কুটনৈতিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে হিমসিম খাচ্ছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও আওয়ামী লীগ সরকারের ভাগ্যবরণ করতে হবে।

বিএনএনিউজ/ সৈয়দ সাকিব/ বিএম

Loading


শিরোনাম বিএনএ