35 C
আবহাওয়া
১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ - এপ্রিল ২৬, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » সাভারে চেয়ারম্যানের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজি, গ্রেপ্তার ২

সাভারে চেয়ারম্যানের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজি, গ্রেপ্তার ২


বিএনএ, সাভার : ঢাকার সাভারে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীবের নাম ভাঙ্গিয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের চলাচলকারী অন্তত তিন শতাধিক লেগুনা থেকে মারধর করে জোরপূর্বক চাঁদা আদায়ের ঘটনায় মূল হোতাসহ দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার(৩০ মার্চ) দুপুরে তাদেরকে চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনিরুজ্জামান।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান রাজীবের আত্মীয় পরিচয়দানকারী সাভার সাব-রেজিস্টার অফিসের দলিল লেখক ও চাঁদাবাজ চক্রের মূল হোতা মো. সোহেল চৌধুরী (৪২) ও মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার চারিগ্রাম এলাকার আব্দুল করিমের ছেলে সুজন (৩৫)।

তারা সাভার পৌর এলাকার দক্ষিন দরিয়াপুর ও ছায়াবিথী এলাকার মোল্লা টাওয়ারের পাশে বসবাস করে সাভার বাজার বাসষ্ট্যান্ডে বিভিন্ন লেগুনা থেকে চাঁদা আদায় করতো।

গাড়ি চালক আলামিন বলেন, সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান মনজুরুল আলম রাজীব চাচার চাচাতো বোনের জামাই পরিচয় দিয়ে বদিরুজ্জামান সোহেল, আমজাদ হোসেন তোতা, সাইফুদ্দিন, হাসিব, শিমুল, শামীমসহ কয়েকজন সড়কে গাড়ি চালাতে হলে তাদেরকে চাঁদা দিতে হবে বলে আমাদেরকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে চাঁদা আদায় করে। চাঁদা দিতে না চাইলে মারধর করে সবকিছু ছিনিয়ে নেয়। তাদের সাথে আমরা পারিনা। চাঁদাবাজ সাইফুদ্দিনের বাবা বিএনপি করতো। এখন সে উপজেলা চেয়ারম্যান রাজিব চাচার নাম ভাঙ্গিয়ে লেগুনা থেকে চাঁদাবাজি করছে।

তিনি আরও বলেন, চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় কয়েকদিন আগে আমার ছোট ভাইয়ের গলায় ছুরি ধরেছে। ওর মাথার পিছনে আঘাত করে টাকা-পয়সা ও মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে। ড্রাইভার বাঁচুক আর মরুক তাদেরকে চাঁদা দিতে হবে। আমরা এসব চাঁদাবাজি বন্ধ চাই এবং সুষ্ঠুভাবে গাড়ি চালাতে চাই। আমরা এসব চাঁদাবাজদের বিচার চাই।

লেগুনা মালিক মিন্টু গাজী বলেন, আমার বর্তমানে ৭টি গাড়ি আছে। দীর্ঘ আট বছর ধরে আমরা সড়কে গাড়ি চালালেও কখনও চাঁদা দিতে হয়নি। আজকে কয়েকদিন ধরে দলিল লেখক বদিরুজ্জামান সোহেল, আমজাদ হোসেন তোতা, সাইফুদ্দিন, হাসিব, শিমুল, শামীমসহ ১০-১৫ জন সন্ত্রাসী আমাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক গাড়ি প্রতি চারশ টাকা চাঁদা আদায় করছে। তাদেরকে টাকা না দিলে গাড়ির চালক, হেলপারকে মারধর করে এমনকি অস্ত্র ঠেকিয়ে টাকা-পয়সা মোবাইলফোন নিয়ে যায়। যখন তখন তারা চাঁদার দাবিতে হামলা চালানোয় আমরা এখন আতঙ্কে রয়েছি। এই সড়ক তিন শতাধিক লেগুনা চলাচল করে প্রতিদিন। এসব গাড়ি থেকে প্রতিদিন গড়ে ৯০ হাজার টাকা চাঁদা উত্তোলন করে তারা। আমরা এসব চাঁদাবাজদের হাত থেকে বাঁচতে সরকার ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা চাই।

অপর লেগুনা মালিক মোশারফ হোসেন রনি বলেন, আমার ১৯টি লেগুনা চলে। প্রতিদিন চাঁদা বাবদ এসব গাড়ি প্রতি চারশ টাকা জোরপূর্বক আদায় করছে একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। তাদেরকে চাঁদার টাকা না দিলেই চালকদের মারধর করে। আমরা কষ্টের টাকায় গাড়ি কিনেও চাঁদাবাজদের কারনে সড়কে গাড়ি চালাতে পারছিনা। আমরা কাউকে চাঁদা দিতে পারবো না। সুষ্ঠভাবে গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করার জন্য প্রশাসন ও সরকারের সহযোগীতা কামনা করছি।

এসব অভিযোগের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের হেমায়েতপুর, ব্যাংকটাউন, সাভার, সিএন্ডবি ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশারফ হোসেন হল গেট হয়ে শাখা সড়কগুলোর আশুলিয়া ও চারাবাগগামী প্রায় ৩ শতাধিক লেগুনা চলাচল করে থাকে। এরমধ্যে পরিবহন ব্যবসায়ী ফজা মিয়ার সাভার এক্সপ্রেস, কবির উদ্দিনের বিরুলিয়া, রিমনের গ্রাম বাংলা, মিন্টুর চারাবাগ, আব্দুল গফুরের সেবা লিংক নামক ব্যানারে এসব লেগুনা চলতো। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে যানজট নিরসনে মালিকপক্ষ তাদের নিজস্ব লোক নিয়োগ দিয়েছিল।

লেগুনা মালিকদের নিজস্ব এসব ব্যানার বাদ দিয়ে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় সাভার উপজেলা চেয়ারম্যানের নাম ভাঙ্গিয়ে সাভার সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক নেতা ও তার অনুসারী ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রলীগের এক সহ-সভাপতি এবং সাভার সদর ইউনিয়নের বহিষ্কৃত এক ছাত্রলীগ নেতার মাধ্যমে দখল করে সোহেল চৌধুরি ও তার বাহিনীর লোকজন গত কয়েক মাস যাবত একমাত্র ‘হেমায়েতপুর টু আশুলিয়া’ ব্যানার চালু করে। জোরপূর্বক এই ব্যানার ব্যবহার করে লেগুনা প্রতি ৩০০ টাকা করে দৈনিক প্রায় লক্ষাধিক টাকা চাঁদা আদায় করে আসছে। মাস শেষে এই চাঁদার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩০ লাখ টাকারও বেশি। হাইওয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলছিল এই চাঁদাবাজি।

তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বদিরুজ্জামান সোহেল এবং সাইফুদ্দিন টিটু বলেন, এসব বিষয়ে আমরা কিছু জানিনা। লেগুনার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নাই। তাই চাঁদা আদায়ের প্রশ্ন উঠেনা। আপনার কাছ থেকেই বিষয়টি শুনলাম। এটা ষড়যন্ত্রমূলক এবং মিথ্যা ঘটনা।

এ ব্যাপারে সাভার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীবকে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনিরুজ্জামান বলেন, লেগুনা চালকদের মারধর করে চাঁদা আদায়ের ঘটনায় একটি মামলা (নম্বর-৮৫) দায়ের করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত দুই চাঁদাবাজকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া মামলার অন্য আসামীদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

বিএনএ/ ইমরান খান, ওজি

Loading


শিরোনাম বিএনএ