25 C
আবহাওয়া
২:২৭ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ১৩, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » হাসনাত-সারজিসকে অলির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে!

হাসনাত-সারজিসকে অলির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে!

হাসনাত-সারজিসকে অলির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে!

বিএনএ, ঢাকা: কোনোকিছুতেই থামছে না দ্বিতীয় স্বাধীনতার অগ্রসৈনিক খ্যাত সমন্বয়করা। রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক ইস্যুতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কখনো প্রকাশ্যে, কখনো গোপনে দিক নির্দেশনা দিচ্ছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা। কিছুদিন আগে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন অপসারণ ইস্যুতে বঙ্গবভন ঘেরাও আন্দোলন করে দুই দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। তাদের সঙ্গে সুর মিলিয়েছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। কিন্তু বিএনপি রাষ্ট্রপতির অপসারণের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেনি। ফলে চুপসে যায় তাদের সেই আন্দোলন। তবুও থেমে নেই সমন্বয়করা।

নির্বিচারে মানুষ হত্যা, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংসসহ নানান অভিযোগে আওয়ামী লীগসহ দেশের ১১টি দলের রাজনৈতিক কার্যক্রমবন্ধসহ হাইকোর্টে দুটি আলাদা রিট দায়ের করেছিলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম, মো. আবুল হাসনাত ও হাসিবুল ইসলাম।

প্রথম রিটে দলগুলোর বিরুদ্ধে নির্বিচারে মানুষ হত্যা, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংসসহ বেশকিছু অভিযোগ তুলে ধরা হয়। তারা যেন পরবর্তীতে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা ও নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সে বিষয়ে রুল এবং নির্দেশনা জারির আবেদন জানানো হয়েছিলো।

YouTube player

দ্বিতীয় রিটে বিগত তিনটি নির্বাচন ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা চাওয়া হয়েছিলো। এছাড়াও নির্দেশনা চাওয়া হয়েছিলো ওই নির্বাচনগুলোতে যারা সংসদ সদস্য হয়ে বেতন-ভাতাসহ যেসব সুবিধা ভোগ করেছেন তা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করার।

প্রথম রিটে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা নিষিদ্ধ করার তালিকায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির নামও উল্লেখ করা হয়েছিলো। অথচ দলটি ২০১২ সাল থেকে বিএনপির জোটসঙ্গী ছিল। গত ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২৬ অক্টোবর এলডিপি’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দলটির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ড. অলি আহমেদ বর্তমান রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন, শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তির্যক ও কড়া সমালোচনা করেন।

ড. অলি আহমেদ যখন এলডিপি’র প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জ্বালাময়ী বক্তব্য দিচ্ছেন, তখন জাতীয় প্রেস ক্লাব-এর আকরাম হলে “দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও নাগরিকদের করণীয়” শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। আইডিয়াল বাংলাদেশ আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন অসরপ্রাপ্ত লেফট্যানেন্ট জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী। তিনি বর্তমান রাষ্ট্রপতির অপসারণ দাবি জানান এবং নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে বীরবিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত বীরমুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল অলি আহমেদের নাম প্রস্তাব করেছেন।

প্রশ্ন উঠেছে, এলডিপি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষে অবস্থান করার পরও কেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের রিটে এলডিপিকে নিষিদ্ধ করার আবেদন করা হয়েছিলো? এটি কী নিছক ভুল? নাকি সমন্বয়কদের সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুরত্ব? সর্বোপরি রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতার অভাবে এমনটা হয়েছে।

সোমবার রাতে এলডিপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দীন রাজ্জাকের সই করা এক বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘যে সমন্বয়করা স্বৈরাচার হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ডক্টর অলি আহমেদ বীর বিক্রম ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির অবদান সম্পর্কে জানে না, তারা আর যাই হোক মেধাবী ও রাজনীতি সচেতন ব্যক্তি হতে পারে না’।

বিবৃতিতে অবিলম্বে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে দুঃখ প্রকাশ করে ডক্টর অলি আহমেদ বীর বিক্রমের কাছে ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি হাইকোর্টে দায়েরকৃত রিট থেকে এলডিপির নাম প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়।

বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে রাজধানীতে এলডিপির ৪ নেতাকর্মী নিহত, ৪ জনের অঙ্গহানি ও ১৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছিলো।’

রিটে কমিউনিস্ট পার্টি অব বাংলাদেশ বলতে কোন দলকে বোঝানো হয়েছিলো তা পরিষ্কার নয়। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি -সিপিবি গত চারটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট কিংবা সমঝোতা করেনি এবং নির্বাচনেও অংশ নেয়নি।

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, অনলাইন মাধ্যম ও সাংবাদিকদের মাধ্যমে রিটে তাঁদের দলের নাম থাকার কথা জেনেছেন। তবে সিপিবিকে নিয়ে এ ধরনের উদ্যোগ অবান্তর ও ষড়যন্ত্রেরই অংশ।

প্রসঙ্গত, সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ’র দায়ের করা রিট দুটি সোমবার বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের কার্যতালিকায় যথাক্রমে ২৮৩ ও ২৮৪ নম্বর ক্রমিকে ছিল। তবে শুনানিতে অপারগতা প্রকাশ করেছিলেন হাইকোর্টের ওই বেঞ্চ।

আদালত রিটকারীর আইনজীবী আহসানুল করিমের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, রিট দুটিতে অনেক সাংবিধানিক ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন-বিষয় উঠে এসেছে। যেহেতু অনেক সাংবিধানিক বিষয় জড়িত তাই আবেদন দুটি এখতিয়ারাধীন হাইকোর্টের সিনিয়র বেঞ্চ আছে, সেখানে শুনানি করলে ভালো হয়।

পরে মামলাটি বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের কার্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিলো।

সুপ্রিম কোর্টের কজ লিস্ট থেকে পাওয়া তথ্য মতে, আবেদন দুটি বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে মঙ্গলবারের কার্যতালিকায় ২০৮ ও ২০৯ নম্বর ক্রমিকে রাখা হয়েছিলো।

মঙ্গলবার আদালতে রিট ২টি না চালানোর কথা জানিয়েছেন আবেদনকারীদের আইনজীবী আহসানুল করিম। এরপর আদালত রিট আবেদন দুটি উত্থাপিত হয়নি উল্লেখ করে খারিজ করে দেন। লেজে গোবরে করা রিট ২টি প্রত্যাহার করার মধ্য দিয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের বড় ধরনের রাজনৈতিক পরাজয় বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

এদিকে সারজিস ও হাসনাতের রিট দুটি দায়েরের বিষয়ে রাজধানীর হেয়ার রোডে ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, সরকার শুধু ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর কোনও রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে সরকারের এই মুহূর্তে কোনও সিদ্ধান্ত নেই।

প্রশ্ন উঠেছে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে চাপে রাখার জন্য, নাকি কোন রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের অংশ হিসাবে একের পর এক রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া ও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কর্মকান্ডে যুক্ত হচ্ছেন?

বিএনএনিউজ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী/ বিএম/এইচমুন্নী 

Loading


শিরোনাম বিএনএ