29 C
আবহাওয়া
৯:৫৪ অপরাহ্ণ - মার্চ ২৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » কক্সবাজারে ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় দুর্নীতির মহোৎসব

কক্সবাজারে ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় দুর্নীতির মহোৎসব


বিএনএ, কক্সবাজার : ব্যাপক লুটপাট,অনিয়ম ও আইনের তোয়াক্কা না করে ফ্রি স্ট্যাইলে চলছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখার দুর্নীতি।

দালাল ও অফিস স্টাফদের দৌরাত্ম্য এত বৃদ্ধি পেয়েছে যে,ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকরা এক প্রকার জিম্মি হয়ে পড়েছে দালাল ও অফিসের দূর্নীতিবাজ স্টাফদের কাছে। অনেক তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী এখন শতকোটি টাকার মালিক। এমন অভিযোগ খোদ এল এ শাখার দালালদের।

বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বাপ দাদা ও নিজের পরিশ্রমে কেনা ভূ সম্পত্তি ছেড়ে আসা ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকদের জিম্মি করে লুটপাটের এ মহোৎসবে মেতে উঠেছেন শক্তিশালী একাধিক দালাল সিন্ডিকেট। কানুনগো, সার্ভেয়ার, কম্পিউটারম্যান থেকে শুরু করে কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ক্ষতিপূরণের টাকার উপর ভাগ বসাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

অধিগ্রহনে দুর্নীতির দায়ে সাবেক এক ডিসি, এডিসি,তহশীলদার সার্ভেয়ারসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারি কারাগারে গেলেও আজ পর্যন্ত দায়েরকৃত মামলাগুলোর বিচার শেষ হয়নি।

এলএ শাখা ঘিরে ভূক্তভোগীদের অভিযোগ রয়েছে অহরহ, জেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসব বিষয় জেনেও না জানার মতো রহস্যজনকভাবে নীরব ভূমিকা পালন করে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।গত সপ্তাহের মঙ্গলবার কক্সবাজার এল এ শাখায় (২) এ মারাত্মক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।

মহেশখালী কালারমারছড়া ইউনিয়নের ইউনুচখালী ও ঝাপুয়া মৌজার জমির ক্ষতিপূরণের চেক উত্তোলন করতে গিয়ে শত শত নারী পুরুষ দুই সার্ভেয়ার যথাক্রমে সাইদুর রহমান সবুজ ও মাসুদুর রহমানের হাতে নাজেহাল ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। কারণ সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ও ১৫/২০ শতাংশ নগদ কমিশন না পেলে ফাইল ছাড়ছেন না বলে দাবি ক্ষতিগ্রস্তদের।

এসব ভূক্তভোগী ভূমি মালিকরা জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জাহিদ ইকবালের কাছে গিয়ে মৌখিক বিচার দেন। জেলা প্রশাসক ও এডিসির যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে বিক্ষুব্ধ ভূমি মালিকেরা শান্ত হন।কিন্তু তাদের ভোগান্তি যে শেষই হচ্ছেনা।

ভুক্তভোগী ইউনুচখালীর মোহাম্মদ হোসেন, নাছির উদ্দীন ও মকছুদ জানান, সার্ভেয়ার সাইদুর রহমান সবুজ ও মাসুদুর রহমান প্রায় সময় বলে থাকেন টাকা দিয়ে এ সেকশনে এসেছি। তাই টাকা না দিলে আমরা ফাইলে হাতই দেবনা।এদিকে অফিস সহকারী সোনামিয়া দীর্ঘদিন ধরে এ সেকশনে থাকায় খুঁটিনাটি সব তার জানা।

একজন দালাল নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,সোনামিয়া বর্তমানে অর্ধ শত কোটি টাকার মালিক। তার এ অবৈধ টাকার মূল উৎস হচ্ছে কমিশনের টাকার ভাগ বাটোয়ারা।

স্বচ্ছতা আনতে এলএ শাখায় বসানো হয়েছে সিসি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। তার পরও দালালদের তৎপরতা দেখা যায় চোখে পড়ার মত।

সূত্র জানায়, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ভূমির অবকাঠামোগত অবস্থান নির্ণয়ের জরিপ, জমি অধিগ্রহণের সময় ক্ষতিগ্রস্তদের জমির মূল্য নির্ধারণ এবং চেক প্রদানের সময়ই মূলত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা লুটপাটে জড়িয়ে পড়েন। অহেতুক হয়রানি করা হয় ক্ষতিগ্রস্তদের। এ থেকে পরিত্রাণ পেতেই অনেকেই তাদের উৎকোচ দিতে বাধ্য করা হয়। উৎকোচ না দিলে বিভিন্ন মামলায় ফাইল আটকে দেওয়া হয়। এলএ শাখার অধীনে এসব হরিলুটের জন্য কাজ করে শক্তিশালী কয়েকটি সিন্ডিকেট। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মোটা অংকের ভাগ দিয়ে এসব কাজ করেন দালাল ও সার্ভেয়াররা এমনটাই অভিযোগ।

জানাগেছে, অসংখ্য মামলা নিয়ে জমির মূল মালিক ও কৌশলী দিনের পর দিন জেলা প্রশাসনের রাজস্ব শাখায় আসা-যাওয়ায় অতিষ্ঠ। এমনকি শারীরিক প্রতিবন্ধী ভূমি মালিকদেরও ভোগান্তির নজির রয়েছে। অথচ এসব বিষয় দ্রুত নিষ্পত্তি করতে এডিসি (রাজস্ব)’র লিখিত নির্দেশনাও রয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, কক্সবাজারে চলমান মেগা প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণ শুরুর পর এলএ শাখা কেন্দ্রিক সৃষ্ট দালাল চক্র সার্ভেয়ারদের হাত করে নিখুঁত জমিতেও কৌশলে সমস্যা সৃষ্টি করে, যেন জমির মালিক তাদের সাথে যোগাযোগ করেন। এ সুযোগে ১৫-২০ থেকে ৪০ শতাংশ কমিশন দিতে বাধ্য করানো হচ্ছে জমি মালিকদের। দালাল চক্রের চাহিদা পূরণ না হলে এডিসি (রাজস্ব) কিংবা ডিসির কঠোর নির্দেশনার পরও চেক ছাড় হয় না।

আবার ভাগবাটোয়ারা ঠিক মতো মিলে গেলে জমির ভূঁয়া মালিককেও চেক হস্তান্তর হয়। আর এ পুরো প্রক্রিয়াটি করেন সার্ভেয়ার এবং দালাল।

এলএ শাখা ২ ও ৩ নম্বারে সর্বাধিক দূর্নীতি হচ্ছে বলে ভূমি মালিকদের অভিযোগ। সেখানেও চলছে সার্ভেয়ার সাইদুর রহমান সবুজ, মাসুদুর রহমান ও শিশির চাকমা সিন্ডিকেটের রাজত্ব!

এ দিকে ঘুষের টাকাসহ আটক সার্ভেয়ার আতিকের জবানবন্দিতে উঠে এসেছে ৪০ জন জমির মালিকের কাছ থেকে ২৩ লাখ টাকা ঘুষ নেয়া হয়েছে। কক্সবাজার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট আদালতে দেয়া ১৬৪ ধারা জবানবন্দিতে ঘুষ নেয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

কক্সবাজার চীফ জুডিশায়াল আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশেক এলাহি গনমাধ্যমকে বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দূদক) রিমান্ডে থাকা সার্ভেয়ার আতিকুর রহমান স্বেচ্ছায় স্বপ্রনোদিত হয়ে দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি ঘুষের ২৩ লাখ ৬৩ হাজার ৯০০ টাকা নিয়ে কক্সবাজার থেকে ঢাকা যাবার পথে দূদকের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের মীর পুর এলাকায়। তার সহযোগী বা ক্যাশিয়ার হিসাবে পরিচিত দালাল মিজান।আতিক গ্রেফতারের পর সে ও গা ঢাকা দেয়।এখন আবার ও এলএ শাখায় তাকে রীতিমতো দেখাযাচ্ছে।

উল্লেখ্য গত ২০২০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারী কক্সবাজার শহরের বাহারছড়া থেকে সার্ভেয়ার ওয়াসিম কে দুদক ৯৩ লাখ টাকাসহ আটক করেন।এ ছাড়া ১৫ লাখ টাকার চেক ও ঘুষ গ্রহনের বিভিন্ন নথি জব্দ করে দুদক।

 

বিএনএনিউজ/এইচ. এম ফরিদুল আলম শাহীনন/ এইচ.এম।

Loading


শিরোনাম বিএনএ