26 C
আবহাওয়া
১:১৬ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » চট্টগ্রামে সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে জাতীয় পার্টির

চট্টগ্রামে সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে জাতীয় পার্টির

চট্টগ্রামে সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে জাতীয় পার্টির

বিএনএ, চট্টগ্রাম: সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টির। নগর জাতীয় পার্টির সম্মেলন হয়েছে ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর। কমিটি গঠনের এক বছরের মাথায় একটি সভা-সমাবেশ ও মিটিং করতে পারেনি চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টি। বলতে গেলে নগর জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা একেবারেই শোচনীয় পর্যায়ে। দলের এই দু:সময়ে বর্তমানে কোনো নেতাই এখন সংগঠনের কাজে নেই। মূলত দলের দু:সময়ের ত্যাগী-পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের না নিয়ে কমিটি করার কারণে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা অনেকটা অভিমানে নিষ্ক্রিয় হয়ে আছেন।

দেখা গেছে বিশেষ করে নব্বইয়ের দশকে জাতীয় পার্টির শক্ত ঘাটি ছিল এই চট্টগ্রাম। পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রয়াত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ছাড়ার পর তাকে একটি মামলায় চট্টগ্রাম আদালতে আনার জন্য বিমান বন্দরে আনা হলে দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীর তীব্র প্রতিবাদের মুখে বিমান বন্দর থেকে পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রয়াত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে চট্টগ্রাম আদালত ভবনে আনা সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত বিমান বন্দরে আদালত বসাতে হয়েছিল। চট্টগ্রামে জাতীয় পার্টির তেমন শক্ত অবস্থান ছিল।

চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণে জাতীয় পার্টির লাখ লাখ নেতাকর্মী ও অনুসারী ক্রমশ সঠিক নেতৃত্বের অভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন।
জাতীয় পার্টির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অভিযোগ-গত এক দশকের বেশি সময় ধরে চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টি (সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মাহজাবীন মোরশেদ) সঠিক নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তারা দলের এই দু:সময়ে নতুন নেতৃত্ব চান। যারা নব্বইয়ের দশক থেকে জাতীয় ছাত্রসমাজ থেকে তিলতিল করে নিজেকে গড়ে তুলেছেন; দলের সকল দু:সময়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছেন; বিশেষ করে গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর যারা এখন মাঠে আছেন এমন ত্যাগী নেতাদের মধ্যে থেকে মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করা হলে নেতাকর্মীরা আবার আগের মতোই উজ্জীবিত হবেন বলে মনে করেন জাতীয় পার্টির নব্বইয়ের দশকের নেতা নাছির উদ্দিন সিদ্দিকী ও নগর জাপার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা। তাদের অভিযোগ দলের সক্রিয় এবং ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে করা কমিটির বেশির ভাগ নেতা আগে থেকেই নিষ্ক্রিয়।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জোট থেকে আসন ‘উপহার’ পেয়ে জামানত হারান নগর জাপার সভাপতি সোলায়মান আলম শেঠ। এরপর আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে দলের বেশির ভাগ নেতা লাপাত্তা। সব মিলিয়ে চট্টগ্রামে চরম রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে জাতীয় পার্টি। এই মুহূর্তে ব্যর্থ কমিটি ভেঙে দিয়ে কেন্দ্র থেকে নতুন কমিটি ঘোষণা করা না হলে চট্টগ্রামে জাতীয় পার্টি অস্তিত্বের সংকটে পড়বে বলে মনে করেন নাছির উদ্দিন সিদ্দিকী ও রেজাউল করিম রেজার মত অসংখ্য ত্যাগী নেতাকর্মী। তারা দলের চেয়ারম্যান এবং মহাসচিবের মহানগর জাতীয় পার্টির ব্যর্থ কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটির দাবি জানান।

জানা গেছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে ১৫টিতে প্রার্থী দেয় জাপা। এর মধ্যে জোটের হিসাবনিকাশে চট্টগ্রামে দুটি আসনে জাপা প্রার্থীরা জোটের মনোনয়ন পান। এসব প্রার্থীকে সুযোগ করে দিতে নৌকার প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেয় আওয়ামী লীগ। দুজনের মধ্যে চট্টগ্রাম-৫ আসনে জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সেই নির্বাচনে জিতলেও চট্টগ্রাম-৮ আসনে জামানত হারান নগর জাপার সভাপতি সোলায়মান আলম শেঠ। এর বাইরে চট্টগ্রাম-৯ আসনে দলের চেয়ারম্যানের বিশেষ উপদেষ্টা সানজীদ রশিদ চৌধুরী এবং বাকি ১২টি আসনের প্রার্থীরাও জামানত হারান। যেখানে চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা জাপার সিনিয়র নেতারা প্রার্থী হয়েছিলেন। তারাও জামানত হারিয়েছেন।

এদিকে গত আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর খোঁজ নেই জাপা নেতাদের। গত দুই মাসেও তাদের কাউকে জনসম্মুখে দেখা যায়নি। নেতাদের মধ্যে কে কোথায় আছেন সেটাও জানেন না কর্মীরা। চট্টগ্রাম জাতীয় পার্টির এই দুরবস্থার জন্য নগর সভাপতি সোলায়মান আলম শেঠের স্বেচ্ছাচারিতা, জনসম্পৃক্তহীন রাজনীতি ও সাংগঠনিক দুর্বলতাকে দায়ী করা হচ্ছে। সোলায়মান আলম শেঠ তার রাজনৈতিক জীবনে তিনবার সংসদ ও একবার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে জামানত হারিয়েছেন। চট্টগ্রামে তার সাংগঠনিক তেমন কোনো অবস্থান নেই। অভিযোগ রয়েছেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির বিভিন্ন নেতাদের কাছে থেকে চাঁদা তুলে সভাপতির পকেট ভারী করেন। গত বছরের ১০ অক্টোবর সম্মেলনের দলের নেতাদের কাছ থেকে প্রচুর চাঁদা তুলেছেন। এসব চাঁদা দিয়েই বিগত সময়ের অনুষ্ঠান গুলো করা হতো।

অভিযোগ আছে, সংগঠনের সাবেক সভাপতি মাহজাবীন মোরশেদ দায়িত্বে থাকার সময় চট্টগ্রামে জাতীয় পার্টির রাজনীতি জমজমাট থাকলেও সোলায়মান আলম শেঠ দায়িত্ব নেওয়ার পর নগর জাতীয়  পার্টির অবস্থা শোচনীয় পর্যায়ে নেমে আসে। নতুন কমিটি গঠনের সময় বর্তমানে চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহজাবীনের অনুসারীদের বাদ দেওয়া হয়। বেছে বেছে সোলয়মান আলম শেঠ তার অনুসারীদের দিয়ে কমিটি গঠন করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে তৃণমূলে। বর্তমান কমিটির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতাকর্মী জাতীয় পার্টির কোনো রাজনৈতিক কর্মকান্ডে নেই।

এই ব্যাপারে জানতে নগর জাপার সভাপতি সোলায়মান আলম শেঠকে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এ ব্যাপারে জাপা চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও নগর জাপার সহসভাপতি আলহাজ্ব আবু তাহের বলেন, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে চট্টগ্রামে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা খুবই শোচনীয়। বছরের পর বছর দলের ত্যাগী নেতাদের কমিটি থেকে-দলের সাংগঠনিক কর্মসূচি থেকে বাদ দেয়ায় তারা অভিমানে এখন নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে। চট্টগ্রামে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের লাখ লাখ অনুসারী রয়েছে। তারা সঠিক নেতা পেলে আবার দলের জন্য রাজপথে ঘুরে দাঁড়াবে। চট্টগ্রামের নেতাকর্মীরা সঠিক নেতৃত্ব পেলে আবার দলের ব্যানারে সক্রিয় হবে।

উপদেষ্টা ও নগর জাপার সহসভাপতি আলহাজ্ব আবু তাহের বলেন, বর্তামানে চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টির কমিটিতে যারা দায়িত্বে আছেন (সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক) তারা দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে দলীয় ভাবে সাংগঠনিক কোনো কর্মসূচি পালন করেননি। উনাদের কমিটিতে দলের ত্যাগী কোনো নেতাকর্মীদের রাখা হয়নি। ৯০ দশক থেকে যারা চট্টগ্রামে জাতীয় পার্টিকে সমৃদ্ধ করেছেন তাদের কাউকে কমিটিতে রাখা হয়নি। যার কারনে জাতীয় পার্টির ত্যাগী নেতাকর্মীরা অনকেটা নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে। এখন দলের দু:সময়; এই মুহূর্তে দলের নেতাকর্মীদেরকে উজ্জীবিত করার জন্য চট্টগ্রামে একজন ক্লিন ইমেজের দলের পরীক্ষিত গ্রহনযোগ্য নেতার হাতে দলের নেতৃত্ব দেয়া দরকার। দলের বর্তমান চেয়ারম্যান-মহাসচিবের কাছে আমি একজন তৃণমূলের ত্যাগী নেতা হিসেবে অনুরোধ করবো-চট্টগ্রামে জাতীয় পার্টির অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হলে বর্তমান কমিটি ভেঙে দিয়ে অতিদ্রুত নতুন তৃনমূলের গ্রহণযোগ্য নেতার হাতে নেতৃত্ব তুলে দেয়ার জন্য।

জাতীয় পার্টির নব্বইয়ের দশকের নেতা নাছির উদ্দিন সিদ্দিকী বলেন, এক সময়ে এই চট্টগ্রাম জাতীয় পার্টির শক্ত ঘাটি ছিল। সোলায়মান আলম শেঠ দায়িত্ব নেয়ার পর ক্রমশ চট্টগ্রামে জাতীয় পার্টি দুর্বল হয়ে পড়ে। দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বছরের পর বছর কমিটিতে না রেখে অবমূল্যায়ন করায় তারা এখন নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। চট্টগ্রামে জাতীয় পার্টির লাখ লাখ অনুসারী আজ সঠিক নেতৃত্বের অভাবে ঝিমিয়ে পড়েছে। তারা যোগ্য-ত্যাগী নেতা চান। তারা সঠিক নেতা পেলে আবার দলের জন্য রাজপথে ঘুরে দাঁড়াবে। দলের বর্তমান চেয়ারম্যান-মহাসচিবের কাছে আমি একজন তৃণমূলের ত্যাগী নেতা হিসেবে অনুরোধ করবো-চট্টগ্রামে জাতীয় পার্টির অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হলে বর্তমান কমিটি ভেঙে দিয়ে অতিদ্রুত নতুন তৃনমূলের গ্রহণযোগ্য নেতার হাতে নেতৃত্ব তুলে দেয়ার জন্য।

নগর জাপার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা বলেন, ‘দলীয় সভা দূরে থাক, চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পর থেকে আজ পর্যন্ত চট্টগ্রামে একটি সভা-সমাবেশ ও মিটিং করতে পারেনি। এই কমিটিতে দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত কোনো নেই। দলের দু:সময়ের ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে নিজের পকেটের লোকজন নিয়ে কমিটি করার কারনে তারা আজ পর্যন্ত কোন সভা-সমাবেশ করার সাহস পাচ্ছেন না। চট্টগ্রামে জাতীয় পার্টির ত্যাগী নেতাকর্মীরা সৎ-যোগ্য ও পরীক্ষিত নেতৃত্বে নতুন কমিটি চান। তাহলে চট্টগ্রামে জাতীয় পার্টি আবার নব্বইয়ের দশকের মত ঘুরে দাঁড়াবে।

এদিকে চট্টগ্রাম মহানগরের মত চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলায়ও দলটির সাংগঠনিক অবস্থা অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক নুরুচ্ছফা সরকার চট্টগ্রাম-১২ এবং উত্তর জেলার সাধারণ সম্পাদক সফিক উল আলম চৌধুরী চট্টগ্রাম-৬ আসন থেকে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়ে জামানত হারান। অন্য আসনগুলোতেও পদধারী নেতাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। এ ছাড়া উত্তর জেলা জাপার কমিটি বর্তমানে মেয়াদোত্তীর্ণ। দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক কমিটি থাকলেও দুই সাংগঠনিক জেলায় দৃশ্যমান কোন কর্মকান্ড গত এক বছরে দেখা যায়নি।

বিএনএনিউজ/ নাবিদ/এইচমুন্নী 

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ