30 C
আবহাওয়া
৪:১১ পূর্বাহ্ণ - মে ৩১, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১০৬ (সাতক্ষীরা-২)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১০৬ (সাতক্ষীরা-২)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে সাতক্ষীরা-২ আসনের হালচাল।

সাতক্ষীরা-২ আসন 

সাতক্ষীরা-২ সংসদীয় আসনটি সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও সাতক্ষীরা পৌরসভা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ১০৬ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: জামায়াতে ইসলামীর কাজী সামশুর রহমান বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৭০ হাজার ১ শত  ৪ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ১৭ হাজার ৯শত ৫১ জন। নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর কাজী সামশুর রহমান বিজয়ী হন। দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ৪৫ হাজার ৫ শত ৪৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের এ এফ এম এন্তাজ আলী। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩০ হাজার ৭শত  ৬৭ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির অ্যাডভোকেট সামশুল হককে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে বিএনপির অ্যাডভোকেট সামশুল হককে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: জামায়াতে ইসলামীর কাজী সামশুর রহমান বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ  ৯৭ হাজার ১ শত ১৮ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৬৯ হাজার ৩ শত ৫৫ জন। নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর কাজী সামশুর রহমান বিজয়ী হন। দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ৫৪ হাজার ৯৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির সৈয়দা রাজিয়া ফায়েজ। লাঙ্গল  প্রতীকে  তিনি পান ৫৩ হাজার ৭শত ৮৭ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: জামায়াতে ইসলামীর মাওলানা আব্দুল খালেক মণ্ডল  বিজয়ী হন

২০০১ সালের ১ অক্টোবর  অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৩শত ৫ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৭ হাজার ১ শত ৬ জন। নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর মাওলানা আব্দুল খালেক মণ্ডল  বিজয়ী হন। দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২৪ হাজার ২শত ৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের নজরুল ইসলাম। নৌকা  প্রতীকে তিনি পান ৬৯  হাজার ৮ শত ৬১ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: জাতীয় পার্টির এম. এ জব্বার বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৭৯ হাজার ২ শত ৪৮ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৫৪ হাজার ১ শত ২২ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির এম. এ জব্বার বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৩৩ হাজার ৪ শত ২২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর মাওলানা আব্দুল খালেক মণ্ডল। দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ১৪ হাজার ৫ শত ৫৮ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মীর মোস্তাক আহমেদ রবি বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ১৩ হাজার ৫ শত ৪৯ জন। ভোট প্রদান করেন ৫১ হাজার ৭ শত ৯৭ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মীর মোস্তাক আহমেদ রবি বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩২ হাজার ৮ শত ৫৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুল করিম সাবু। হরিণ প্রতীকে তিনি পান ১৫ হাজার ৭শত ৮৯ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মীর মোস্তাক আহমেদ রবি বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৫৬ হাজার ২ শত ৬৮ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৮৮ হাজার ১ শত ৭২ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৬ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, ধানের শীষ প্রতীকে জামায়াতে ইসলামীর মুহাম্মাদ আব্দুল খালেক, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির শেখ মাতলুব হোসেন লিয়ন, আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির জুলফিকার রহমান, মই প্রতীকে বাসদের নিত্যানন্দ সরকার, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনের মুফতী রবীউল ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মীর মোস্তাক আহমেদ রবি বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৫৫ হাজার ৬ শত ১১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপি সমর্থিত জামায়াতে ইসলামীর মুহাম্মাদ আব্দুল খালেক। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ২৭ হাজার ৭ শত ১১ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, সাতক্ষীরা-২ আসনে পঞ্চম, সপ্তম ও অষ্টম সংসদে জামায়াতে ইসলামী। ষষ্ঠ সংসদে বিএনপি,  নবম সংসদে জাতীয় পার্টি এবং  দশম ও একাদশ  সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

YouTube player

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর সাতক্ষীরা -২ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৯.৩৪% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৬.০৮ %, বিএনপি ১৫.১৬%, জাতীয় পার্টি ১৯.৫০% , জামায়াতে ইসলামী ৩৮.৬১%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৬৫% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৫.৯২% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৬.৮৪%, বিএনপি ৮.৬৭%, জাতীয় পাটি ৩১.৭৬%, জামায়াতে ইসলামী ৩১.৯৪ %, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৭৯% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৬.৯১% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৩.৭৩%, ৪দলীয় জোট ৫৯.৯৭%, জাতীয় পার্টি ৬.১০%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.২%  ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯০.৩৪% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫২.৮৯%, ৪দলীয় জোট ৪৫.৪১%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৭% ভোট পায়।

সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের মীর মোস্তাক আহমেদ রবি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। কিন্তু দলে তার শক্ত প্রতিপক্ষ রয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে আরও মনোনয়ন চাইবেন সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবু, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম ও সহসভাপতি আবু আহমেদ।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করা জামায়াতে ইসলামী সম্প্রতি ঢাকায় বড় সমাবেশ করার পর সাতক্ষীরায় তাদের বেশ চাঙ্গা দেখা যাচ্ছে। এবারও সাতক্ষীরা সদর আসনে জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থী গতবার ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক। তিনি জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ ইফতেখার আলী।

জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শেখ আজহার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান আশু।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসনটি জামায়াতে ইসলামীর শক্ত ঘাঁটি। এটিকে বলা হয় জামায়াতে ইসলামীর রাজধানী! এ আসনে জামায়াতে ইসলামী জিতেছে তিনবার। ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামী ব্যাপক ধ্বংসাত্মক রাজনীতি করে নিন্দিত হয়। ২০১৪ সালে সরকার গঠনের পরে রাজনৈতিকভাবে তারা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। তবে সংখ্যাগত ও সাংগঠনিক বিবেচনায় এখানে জামায়াতে ইসলামী এখনো শীর্ষে রয়েছে।

সাতক্ষীরা সদর আসনে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা বরাবরই দুর্বল। দলের মধ্যেও রয়েছে বিভাজন। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালনে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থান দেখা যায়।

একসময় সাতক্ষীরায় জাতীয় পার্টির বেশ দাপট ছিল। ২০০৮ সালে এম এ জব্বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু এখন দলের সাংগঠনিক সুচক নিচের দিকে বলা যায় ।

জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে নেই দলীয় কোন্দল। তবে আওয়ামী লীগে চরম অন্তকোন্দল রয়েছে। তার ওপর ভর করে  জামায়াত – বিএনপি জোট চাইবে আওয়ামী লীগকে বিতাড়িত করতে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১০৬তম সাতক্ষীরা-২ সংসদীয় আসনে বিএনপি- জামায়াত জোট বিজয়ী হলে অবাক হবার কিছু থাকবে না।

বিএনএ/ শিরীন, রেহানা ইয়াসমিন, ওজি, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ