১৯৫৩ সালে কারাগারে একুশের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে কালো ব্যাজ তৈরি হয়েছিল অজিত কুমার গুহের মোজা কেটে। এ প্রসঙ্গে ভাষাসংগ্রামী ফজলুল করিম বলেন, ‘আ- মরা জেলে বন্দি অবস্থায় থাকতেই প্রথম একুশে উদযাপনের দিন ঘনিয়ে এল। ঢাকা কেন্দ্রিয় কারাগারে পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের দোতলায় বায়ান্ন সালের ভাষা-আন্দোলনে ধৃত যে কয়জন নিরাপত্তাবন্দি তখনও আটক ছিলেন, তারা হলেন-অধ্যাপক অজিত গুহ, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক মুজাফফর আহমদ চৌধুরী, অলি আহাদ, মোহাম্মদ তোয়াহা, পাবনার আবদুল মতিন এবং টাঙ্গাইলের শামসুল হক।
২০ ফেব্রুয়ারি রাতে ওয়ার্ডে বসে আমরা ঠিক করেছি যে পরদিন আমরা একুশে ফেব্রুয়ারি উপবাস করব, কালো ব্যাজ ধারণ করব, শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করব। কালো ব্যাজ নিয়ে আমরা সবাই চিন্তিত। রাতে কারও চোখে ঘুম নেই। ভোর হতে তখনও অনেক বাকি। অজিত দা রাত ৪টায় ওঠেন। চোখে-মুখে একটু পানি দিয়েই তিনি বই নিয়ে পড়তে বসেন। এটা তাঁর দীর্ঘদিনের অভ্যাস। সেদিন আমরাও সবাই খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেছি। হঠাৎ দেখতে পেলাম অজিত দা কালো ব্যাজ সম্পর্কে অজিত দা আগের রাতেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিলেন, শুধু আমাদের ব্যাপারটি জানতে দেননি। অজিত দা’র এক জোড়া সিল্কের কালো মোজা ছিল। একেবারে মিশি কালো। তিনি তাঁর একটি মোজা কেটে কালো ব্যাজ তৈরি করেছেন সবারই জন্য’। এটি ছিল একুশের প্রথম বার্ষিকীতে সেন্ট্রাল জেলে কালো ব্যাজ এবং কালো পতাকা তৈরির প্রথম ঘটনা। রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলন ছিল একটি গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক আন্দোলন। অজিত কুমার গুহ তাঁর মমতাসুলভ মহানুভবতায় শত বাধা অতিক্রম করে এ আন্দোলনে নিজেকে জড়িত রেখেছেন।
বাংলা ভাষার উন্নয়ন ও সংস্কারে অজিত কুমার গুহ বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি পূর্ববাংলা ভাষা কমিটির সদস্য নির্বাচিত এবং বাংলা ভাষার সংস্কার ও সহজীকরণের জন্য গঠিত সাব-কমিটিরও সদস্য নিযুক্ত হন। ১৯৬৯ সালের ১২ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র: যারা অমর ভাষা সংগ্রামে, লেখক: এমআর মাহবুব
সম্পাদনায়: মনির ফয়সাল
পড়ুন আগের পর্ব: ভাষা সৈনিক(২) অজিত কুমার গুহ পর্ব :০২
Total Viewed and Shared : 111