38 C
আবহাওয়া
৫:৪৩ অপরাহ্ণ - এপ্রিল ১৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ৭১এর পুরান ঢাকার জিন্দাবাহার গলি

৭১এর পুরান ঢাকার জিন্দাবাহার গলি


বিএনএ,ঢাকা:২৬ মার্চ আব্বা জিন্দাবাহারের তার কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে কারফিউবিহীন সকাল বেলা কী হয়েছে দেখার জন্য ইসলামপুর রোডে বের হলেন আমাকেও নিয়ে গেলেন। হেঁটে আমরা প্রথমে শাঁখারিবাজার মোড়ে বাবুবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে প্রবেশ করলাম। আমাদের মতো অনেকে অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। আমি ফাঁড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে পারিনি। শুনতে পেলাম বেশ কয়েকজন পুলিশ বাহিনীর সদস্যকে পাক বাহিনী গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে। সেই দৃশ্য দেখার আর ইচ্ছে হয়নি। তারপর আব্বা শাঁখারিবাজারে প্রবেশ করলেন।

সরু প্রবেশ দ্বার দিয়ে বিভিন্ন গৃহে ঢুকে সেদিন যে দৃশ্য দেখেছিলাম তা আজও ভাবলে গা শিহরিত হয়ে ওঠে। চৌকির নীচে সারিসারি লাশ। ছড়ানো ছিটানো, এমন কি ছোট শিশুরাও রেহাই পায়নি। বেয়নেট দিয়ে খোঁচানো মৃত শিশুকেও দেখেছিলাম। একরাশ আতংক, ভয়, ঘৃণা মনকে আচ্ছন্ন করেছিল। শাঁখারিবাজারের পুরো এলাকা আর ঘুরে দেখার সাহস করিনি। একা হেঁটে বাসায় চলে এলাম। ২৬ মার্চ রাতটি ছিল আগুনের মহাউৎসব।

এক দিকে জল্লাদ ইয়াহিয়ার ভাষণ অন্য দিকে ইংলিশ রোডের কাঠের দোকানগুলোতে অগ্নিকাণ্ড। পাকিস্তানি সৈন্যরা সুপরিকল্পিতভাবে এক ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টির জন্য এক ধরণের পাউডার ছিটিয়ে পুরো ইংলিশ রোডের দোকানপাটে আগুন ধরিয়ে দেয়। মনে হচ্ছিল সেই আগুন আমাদের পাশের বাড়ীতে লেগেছে। সেই আগুনের ভয়াবহতা এতটা ব্যাপক ছিল যে ঐ অঞ্চলের বসবাসকারী অনেক সাধারণ মানুষ বাড়ী ঘর ত্যাগ করে।

পরদিন ২৭ মার্চ বহু মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে ঢাকা ত্যাগ করতে থাকে। এই ত্যাগে ছিল অনেক ক্ষোভ, অনেক ক্রোধ, অনেক বারুদ। কোথায় যাবে ছিল না তার কোনো নিশানা। রাতের মতো রিক্সায় করে, হেঁটে সোয়ারিঘাট। সেখান থেকে নৌকায় বুড়িগঙ্গা পার হয়ে জিঞ্জিরা। সেই কাহিনী আরেকবার লিখব। লিখতে হবে। কারণ এগুলো বলার মতো লোক এক সময় থাকবে না।

এতো হত্যা, এতো বীভৎসতা, এতো কান্না, এতো আগুন তারপরও কী করে ঐ মার্চের শ্লোগান ‘জয় বাংলা’; ‘তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা, মেঘনা, যমুনা’, ‘জেলের তালা ভাঙবো শেখ মুজিবকে আনবো’ ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর বাংলাদেশ স্বাধীন কর’ হয়ে যায় ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ (যেমনটি পাকিস্তান জিন্দাবাদ) তা অনুসন্ধান করার অনুসন্ধিৎসু মনকে জাগিয়ে তুলতে হবে এ প্রজন্মের মধ্যে। দেশপ্রেম জাগ্রত হবে সেখান থেকেই, জয়বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

লেখক :
অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ
ট্রেজারার
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

বিএনএ/ এসবি

Loading


শিরোনাম বিএনএ