25 C
আবহাওয়া
৩:২৮ অপরাহ্ণ - ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » রাজনৈতিক ঐক্যমত, আফগানিস্তানের সংঘাতের আদর্শ সমাধান

রাজনৈতিক ঐক্যমত, আফগানিস্তানের সংঘাতের আদর্শ সমাধান

রাজনৈতিক ঐক্যমত, আফগানিস্তানের সংঘাতের আদর্শ সমাধান

নানা জাতিগোষ্ঠীর প্রতিটিরই অঞ্চলভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ রয়েছে আফগানিস্তানে। তাই সরকার গঠনে সবার সঙ্গে কোনো ধরনের সমঝোতা ছাড়া তালেবানের পক্ষে আফগানিস্তানের ওপর পুরো নিয়ন্ত্রণ কার্যকর করা প্রায় অসম্ভব। তাতে বন্ধ হবে না চলমান আফগান যুদ্ধ এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা।

দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের ফলে গত কয়েক দশক ধরে আফগানিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলের এবং প্রদেশের বহু নাগরিক, পরিবার তাদের পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছে। হাজার হাজার পরিবার একেবারে পথে বসেছে। বহুলোক উপার্জন হারিয়েছে। পঙ্গুত্ববরণ করছে অনেকে।

তালেবানদের মহা সুযোগ সৃষ্টি করেছে

আফগানিস্তানের জনগন এই অবিরাম যুদ্ধ থেকে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে এবং রাজনৈতিক সমঝোতা এবং ক্ষমতা ভাগাভাগি পদ্ধতির মাধ্যমে রাষ্ট্রপরিচালনা করে দেশে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও শান্তি আসবে বলে এখন আশা পোষন করছে।

হঠাৎ করে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন ও ন্যাটো যুদ্ধ বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।  আফগান নিরাপত্তা বাহিনী এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তালেবানদের মহা সুযোগ সৃষ্টি করেছে।

প্রকাশ্যে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা, প্রতিশোধ না নেয়ার প্রতিশ্রুতি  তালেবান যোদ্ধারা রক্ষা করছে না। তাদের আক্রমণাত্মকতা বাড়িয়ে অঞ্চল ভিত্তিক জাতিগোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে থাকা জেলাগুলো দখল  এবং তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় সহিংসতার মাত্রা বাড়িয়েছে।

তালেবান

কাবুল দখলে নিয়ে তালেবানরা রাজধানীতে থাকা দেশটির সব সরকারি সম্পত্তি, অস্ত্রাগার,কোষাগার নিয়েন্ত্রণে নিয়েছে।ফলে তারা বিভিন্ন প্রদেশের সরকার ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতি গোষ্টির নেতাদের ওপর নানাভাবে আত্মসমর্পনের জন্য চাপ সৃষ্ঠি করছে।  এ জন্য তারা অস্ত্র ব্যবহারেও পিছপা হচ্ছে না।

কাতারের রাজধানী দোহায় আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা ভুলে দখলদার তালেবান যোদ্ধারা তাদের বিরোধীদের বাড়িঘর ও গবাদি পশুও ছেড়ে দিতে বাধ্য করছে। হাজার হাজার আফগান ভয়ে সীমান্ত দিয়ে ও আকাশ পথে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে।

আফগানিস্তানের রাজনৈতিক নেতারা বলছেন, প্রকৃত রাজনৈতিক সংলাপে তালেবানের অনীহা দেশটির ভবিষ্যত নষ্ট করছে।

২০ বছরের অর্জন সংরক্ষণ করতে বদ্ধপরিকর

তালেবানের সাম্প্রতিক বর্ধিত আক্রমণ এবং বিভিন্ন প্রদেশ ও শহর দখলের প্রতিবাদে স্থানীয় জনগণ আফগান জাতীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বাহিনীর (ANDSF) পাশে দাঁড়ানোর জন্য এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য মিলিশিয়া এবং প্রতিরোধী গোষ্ঠী গঠন করেছে। মাজার-ই-শরীফ, হেরাত, বাদাখশান, কুন্দুজ, ফারিয়াব, পারওয়ান এবং বামিয়ানসহ বড় বড় শহরে তালেবান যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে স্থানীয় মিলিশিয়া বাহিনী প্রস্তুত হয়ে আছে। মিলিশিয়ারা তালেবানদের প্রতিহত করতে এবং সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং নারীর অধিকারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গত ২০ বছরের অর্জন সংরক্ষণ করতে বদ্ধপরিকর।

আফগান জাতীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বাহিনী (ANDSF)

তালেবানরাও বুঝতে পারে যে, এ মুহুর্তে যতক্ষন বহুজাতিক বাহিনী আফগানিস্তানে রয়েছে তারা ANDSF কে পরাজিত  এবং শক্তি প্রয়োগ করে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ লাভ করতে পারে না। আফগান জাতীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বাহিনী (ANDSF)কে বিভিন্ন প্রাদেশিক মিলিশিয়া বাহিনীগুলো শক্তি যুগিয়ে যাচ্ছে। এই বাহিনী এখনও তালেবানদের কাছে আত্ম সমর্পন করে নি। সরকারের বিশাল অস্ত্রভান্ডার রয়েছে এই বাহিনীর হাতে।

এটা স্পষ্ট যে, আফগান সরকারের পক্ষে যুদ্ধের ইন্ধন দিয়ে তালেবান গোষ্ঠীকে যেমন নিশ্চিহ্ন করা অসম্ভব, তেমনি আঞ্চলিক গোষ্টির মিলিশিয়া বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে তালেবানের লড়াই, দেশটিতে শান্তি বজায় রাখবে। সবপক্ষকে বুঝতে হবে যুদ্ধ সমাধানের পথ নয়। তালেবানরা জোর করে নেতা হওয়ার চেষ্ঠা করছে, কিন্ত গুরু হতে পারবে না। সকল ধর্মীয় ও  রাজনৈতিক দলের ঐক্যমত প্রতিষ্টা করে আফগানিস্তানে বিরাজমান সংঘাতের আদর্শ সমাধান  হতে পারে।

আল-কায়েদা ছাড়া তালেবানের কোন বন্ধু নেই

দায়েশ (আল-কায়েদা) ছাড়া অন্য কোন রাজনৈতিক দল বা উপদল তালেবান আন্দোলনের পক্ষে সমর্থন করে না যারা ১৯৯৬-২০০১ সালের রক্ষণশীল শাসনব্যবস্থা প্রয়োগ করতে পছন্দ করে। আফগানিস্তানে আল কায়েদার বড় ঘাঁটি আছে মনে করে বিশ্বের বড় বড় দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।

 

একটি ব্যাপক রাজনৈতিক সমঝোতা তৈরি করা যা তালেবান, রাজনৈতিক দল, ধর্মীয় পণ্ডিত, মহিলা, সংখ্যালঘু এবং সকলের জন্য উপযুক্ত চুক্তি হয়। আফগান শান্তি প্রক্রিয়ার প্রধান আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক অংশীদাররা একটি ন্যায়সঙ্গত এবং দীর্ঘস্থায়ী শান্তি অর্জনের একমাত্র পথ হিসেবে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক সমঝোতার পক্ষে সমর্থন করে যা আফগানিস্তান এবং পুরো অঞ্চলের জন্য উপকারী।

আফগানিস্তানে কংক্রিট রোডম্যাপ প্রণয়নের জন্য এখনই উপযুক্ত সময়

অতীতের অভিজ্ঞতা ইঙ্গিত দেয় যে আফগানিস্তানের সংঘাতের কোন সামরিক সমাধান নেই। এই কারণকে সমর্থনকারী যুদ্ধকারী দল এবং দেশগুলি গত কয়েক দশক ধরে সম্পদ হারিয়েছে এবং সর্বনাশা বেসামরিক হতাহতের সাক্ষী হয়েছে। আফগানরা জীবন হারিয়েছে এবং শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন, শিক্ষা গ্রহণ এবং এগিয়ে যাওয়ার পিছনে টেনে আনা হয়েছে। সব পক্ষেরই আলোচনার টেবিলে আসার, শান্তি প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশের ভবিষ্যৎকে রূপ দিতে পারে এমন একটি কংক্রিট রোডম্যাপ প্রণয়নের জন্য এখনই উপযুক্ত সময়।

লেখক : নিজামুদ্দিন রেজাহি,  বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন শ্রীলঙ্কা ইনস্টিটিউট অফ ইনফরমেশন টেকনোলজি (SLIIT) ২০১৮ থেকে মার্কেটিং ম্যানেজমেন্ট এবং কমিউনিকেশনে বিশেষত্ব নিয়ে। ২০১৯-২০২০ সালে ‘যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ’। বর্তমানে, তিনি এসএমপি -তে টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার/কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করছেন, মানসম্মত বিষয়বস্তু তৈরি করা এবং আফগান শান্তি প্রক্রিয়া সম্পর্কে গণমাধ্যমের নজরদারিতে মনোনিবেশ করেছেন। তিনি একজন যোগ্য লেখক যিনি সমসাময়িক আর্থ-সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক বিষয়, শান্তি আলোচনা এবং সমঝোতা প্রক্রিয়া এবং আরও অনেক কিছু নিয়ে লিখতে পছন্দ করেন।

খামা নিউজ এজেন্সির মতামত কলামে প্রকাশিত নিবন্ধ অবলম্বনে। 

অনুবাদ: এসজিএন

Loading


শিরোনাম বিএনএ