বিএনএ, বোয়ালখালী : জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সারাদেশের মানুষের কাছে তীর্থভূমি হিসেবে সমাদৃত চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার শ্রীপুর খরণদ্বীপ ইউনিয়নে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী শ্রীপুর বুড়া মসজিদ। এ মসজিদ কখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার সঠিক দিনক্ষণ কারও জানা নেই। জনশ্রুতি রয়েছে ৩০০ বছর আগে মোগল আমলের শেষ দিকে এটি নির্মিত হয় বলে অনেকেরই ধারণা বরকত, ফজিলত ও পূর্ণের আশায় এখানে দেশ-বিদেশ থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সমাগম ঘটে।
চট্টগ্রামের তৎকালীন প্রশাসক থানাদার ওয়াসিন চৌধুরী এ মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। তার দাদা শেখ নাছির উদ্দিন তৎকালীন অবিভক্ত ভারতের গৌড় এলাকা থেকে এ এলাকায় দ্বীন প্রচারের উদ্দেশ্যে আসেন। তার কাছে দীক্ষিত লোকদের নামাজ আদায়ের সুবিধার্থে এ মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।
মসজিদের নামকরণ সম্পর্কে জানা যায়, ওয়াসিন চৌধুরীর বাবা ইবাদত-বন্দেগিতে এতই মশগুল থাকতেন যে, পারিপার্শ্বিক অবস্থার কোনো খবর রাখতেন না। তিনি এতই পরহেজগার ছিলেন যে, তাকে সবাই বুড়া হুজুর নামে ডাকতেন। ইবাদত করতে করতে একদিন তিনি এই মসজিদ থেকে হারিয়ে যান। পরবর্তীকালে তার কোনো সন্ধান কেউ পাননি বলে কথিত আছে। তাই তার নামানুসারে এটি ‘বুড়া মসজিদ’ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। অন্য একটি সূত্র মতে, থানাদার সাহেবের দুই স্ত্রী ছিল।
একজনের সন্তান থাকলেও আরেকজন ছিলেন নিঃসন্তান। সন্তান না থাকায় বুড়ো বয়সে তাকে কোনো অর্থবিত্ত না দিয়ে তার নামে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করে নামকরণ করেন বুড়া মসজিদ। অল্প ক’জন মুসল্লী নামাজ পড়ার মতো জায়গা নিয়ে শন পাতার বেড়া এবং উপরে দু’নালি শন দিয়ে মসজিদের প্রথম ঘর নির্মিত হয়। প্রতি বছর ছাউনি ও বেড়া পাল্টাতে পাল্টাতে ২০ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত চলে এ মসজিদের কার্যক্রম।
পরবর্তি সময়ে চারপাশে বাঁশের বেড়া এবং উপরে শনের ছাউনি দিয়ে ১০ থেকে ১৫ হাত লম্বা করে মসজিদ নির্মাণ করা হয়।
খুব সম্ভবত ১৮৮৬ সালে প্রবল ভূমিকম্পে বেড়া ও শনের ছাউনিঘর ভেঙে যায়। ভাঙা অবস্থায় জোড়াতালি দিয়ে ২০ থেকে ২৫ বছর চলছিল এ মসজিদের কার্যক্রম। পরে স্থানীয় লোকজন মাটির দেয়াল তুলে পুনঃনির্মাণ করেন। এভাবে ৪ থেকে ৫ বার নির্মাণ করা হয়। এখন থেকে প্রায় ১০০ বছর আগে মসজিদের কিছু অংশ পাকা করা হয়। ১৯৪০ সালে মসজিদের পুরাতন ভিত্তি ভেঙে নতুন করে ছাদ পাকা করা হয়। ১৯৭৪ সালে মসজিদ সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা হয়। ১৯৮৬ সালের দিকে দ্বিতীয় তলায় উন্নীত করা হয় মসজিদটি। ১৯৭৫ সালের দিকে মসজিদের পাকা ভবনের গেট নির্মাণ হয়।
জানা যায়, মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে বহু আলেম ওলামা বুজর্গদের সমাহিত করা হয়েছে। প্রতি শুক্রবার দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য মুসল্লি জুমার নামাজ আদায় করতে ছুটে আসেন এ মসজিদে। গত (২২ এপ্রিল ২০ রমজান) শুক্রবার পবিত্র রমজান মাসের ৩য় জুমায় চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানার পোমরা থেকে নামাজ আদায় করতে আসা মো. মোসলেম উদ্দিন ও নগরীর পশ্চিম মাদারবাড়ি থেকে আসা মো. ইলিয়াছ জানান, পুর্ব পুরুষের কাছ থেকে এ মসজিদের গুরুত্ব সম্পর্কে জেনেছি। এখানে নামাজ আদায় করে প্রশান্তি লাভ হয়। তাই সুযোগ পেলেই ছুটে আসি।
মসজিদের মতোওয়াল্লী মো. নুরুন্নবী চৌধুরী বলেন, মসজিদটি জরাজীর্ণ, সংকটাপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। বহুমাত্রিক পরিকল্পনায় সম্পূর্ণ নতুন অবয়বে আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন এ মসজিদকে নির্মাণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। চারতলা বিশিষ্ট মসজিদের প্রস্তাাবিত নকশা ও মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। এতে একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন তিন হাজার মুসল্লি।
তিনি বলেন, মসজিদটির অবকাঠামো অনেক পুরনো। বর্ধিত অংশও পাঁচ বছর পূর্বের। সময়ের বাস্তবতায় মসজিদটির নতুন অবয়ব দেওয়া জরুরি। তাই নতুন করে আধুনিক নির্মাণ স্থাপত্যশৈলীর মাধ্যমে মসজিদটি নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। প্রথমে কয়েকজন বিত্তবান ব্যক্তি আর্থিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসলে কাজ শুরু করতে সুবিধা হবে। আশা করি সবার আন্তরিক সহযোগিতায় কাজটি সুসম্পন্ন করা যাবে।
বিএনএ/ বাবর মুনাফ, ওজি