বিএনএ, ডেস্ক : বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি শক্তিশালী করতে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডির ২৯ মিলিয়ন ডলার অর্থায়ন নিয়ে আবারও কথা বলেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শনিবার মেরিল্যান্ডের একটি মিলনায়তনে দলীয় অনুষ্ঠান কনজারভেটিভ পলিটিক্যাল অ্যাকশন কনফারেন্সে এ প্রসঙ্গ তোলেন তিনি।

ট্রাম্প বলেন, ‘বাংলাদেশে ২৯ মিলিয়ন ডলার গেছে রাজনৈতিক পরিসর শক্তিশালী করতে এবং তাদের সহায়তা করতে, যাতে তারা কট্টর বাম কমিউনিস্টদের ভোট দিতে পারে।’
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের বিগত জো বাইডেন প্রশাসনকে সমালোচনার জন্য ট্রাম্প ‘উগ্র বাম কমিউনিস্ট’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করে থাকেন।
গত শুক্রবার হোয়াইট হাউসে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে এ প্রসঙ্গ তুলেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি শক্তিশালী করতে ২৯ মিলিয়ন ডলার এমন এক সংস্থার কাছে গেছে, যে সংস্থার নাম আগে কেউ শোনেনি।
বাংলাদেশের রাজনীতি শক্তিশালী করতে একটি এনজিওকে ২৯ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়া হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ দাবি— নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশে এনজিও সেক্টর, বিশেষ করে বৈদেশিক অর্থায়নে পরিচালিত এনজিওগুলোর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে এত অর্থ কারা পেয়েছে এবং কীভাবে ব্যবহার হয়েছে?
বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যমে অনেকে যুক্তরাষ্ট্রের এই অর্থ ‘বাংলাদেশের রেজিম চেঞ্জ বা সরকার পরিবর্তনে ব্যবহার হয়েছে কি-না’ এমন প্রচারও চলছে।
এনজিও ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোঃ আনোয়ার হোসেন বলছেন “বিষয়টি আমরা এর মধ্যেই চেক করেছি। এই পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশে সক্রিয় কোন এনজিওর মাধ্যমে এসেছে- এমন কোন প্রমাণ আমরা পাইনি । যুক্তরাষ্ট্র সরকার কিছু টাকা আরও কিছু প্রক্রিয়ায় পাঠায়। সেভাবে কোন অর্থ এসেছে কি না তা আমাদের জানা নেই।
দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, “ট্রাম্পের দাবি অস্বাভাবিক। ইউএসএআইডির অর্থায়ন বাতিলকে বৈধতা দিতে এখানে বাংলাদেশের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ এভাবে কোন সংস্থার অর্থ নেয়ারই সুযোগ নেই”।
ড. ইফতেখারুজ্জামান আর বলেন, ১ ডলারই হোক আর ২৯ মিলিয়ন ডলারই হোক- সরকারের অনুমোদন ছাড়া কোন অর্থ ছাড় হওয়া অসম্ভব। আর এককভাবে কোন সংস্থার ২৯ মিলিয়ন ডলার পাওয়ার খবরটিই অস্বাভাবিক।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউএসএইড ও ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর ইলেকটোরাল সিস্টেমস- আইএফইএস -এর সহযোগিতায় গণতন্ত্র চর্চা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও মানবাধিকার বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি ও মৌলিক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ‘অ্যাপ্লায়েড ডেমোক্রেসি ল্যাব’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
এই ল্যাবের পরিচালক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আইনুল ইসলাম বলেছেন “যুক্তরাষ্ট্র বা ইউএসএআইডির উচিত পরিষ্কার করে বলা যে কারা তাদের ফান্ড নিয়েছে।
এদিকে আজকের পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের মার্চ মাসে ‘স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ -এসপিএল ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ইউএসএআইডির পাঁচ বছর মেয়াদি এক প্রকল্প শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে ২০২৩ সাল পর্যন্ত থাকলেও পরে মেয়াদ বেড়ে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ডিআই এই প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা হলেও ইউএসএআইডি বাংলাদেশের পলিটিক্যাল প্রসেস অ্যাডভাইজার লুবাইন চৌধুরী মাসুম এই প্রকল্পের ম্যানেজারের দায়িত্বে আছেন।
গত বছরের ২ রা ডিসেম্বর ওয়াশিংটন ডিসিতে এনডিআই সদর দপ্তর পরিদর্শনের পর লুবাইন চৌধুরী মাসুম লিংকডইন পোস্টে ইউএসএআইডির ২ কোটি ১০ লাখ ডলারের তহবিল প্রতিশ্রুতির তথ্য নিশ্চিত করেন।
এসপিএল প্রকল্প সম্পর্কে লুবাইন মাসুম বলেন, এর লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক চর্চার উন্নয়ন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানো। দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট ও দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশনকে প্রকল্পের প্রধান উপগ্রহিতা হিসেবে তুলে ধরেন তিনি।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, প্রকল্প চলাকালে দ্য হাংগার প্রজেক্টের বাংলাদেশ প্রধান ছিলেন অন্তবর্তী সরকারের নির্বাচন সংস্কারবিষয়ক কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি একই সঙ্গে দ্য হাংগার প্রজেক্টের বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ও গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে অবসরে যান।
বিএনএ/ সৈয়দ সাকিব,ওজি