বিএনএ, কক্সবাজার : কক্সবাজার শহরের শ্বাস প্রণালী বাঁকখালী নদী ভরাট করে প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা অবৈধ স্থাপনা ও সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। তাদের সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে বাঁকখালী নদীর গতি প্রকৃতি ফিরিয়ে দেয়ার দাবীতে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা কক্সবাজার জেলা শাখার পক্ষ থেকে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বরাবর স্মারক লিপি দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) এ স্মারকলিপি দেয়া হয়।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারী ও ১ মার্চ দুই দিনে বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট পয়েন্টে অভিযান চালিয়ে প্রায় চার শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে এই সাহসী অভিযান চালিয়েছেন। এতে প্রভাবশালী ভূমিদস্যুদের প্রবল বাঁধার মুখে পড়েন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন ও গনমাধ্যম কর্মীরা। এমনকি তারা প্রভাবশালীদের হামলারও শিকার হন। এ উচ্ছেদ অভিযানের ফলে সর্বমহলে উচ্ছ্বসিত প্রশংসিত হয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অত্যান্ত পরিতাপের বিষয় যে, হঠাৎ চলমান উচ্ছেদ অভিযান থেমে যাওয়ায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাই ঐতিহ্যবাহী বাঁকখালী নদীর তীর ভরাট করে যে সব প্রাসাদ ও স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে, সবকটি গুড়িয়ে দিয়ে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার দাবীতে বাপাসহ একাধিক পরিবেশবাদী সংগঠন বিক্ষোভ মিছিল, স্মারকলিপি, প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানব বন্ধন করে আসছে কক্সবাজারে। এমনকি বেলার পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে হাইকোর্টে মামলা ও করা হয়েছে বাঁকখালী নদী দখলদারদের বিরুদ্ধে।
কউক চেয়ারম্যানের কাছে দেয়া স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয় যে নদীর তীরে গড়ে উঠেছিলো পর্যটন শহর কক্সবাজার,সেই বাঁকখালী নদীর প্রাকৃতিকভাবে গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় গড়ে ওঠা নদীর বিস্তৃত তীরভূমি দখল করে নিয়েছে অনেক প্রভাবশালী মহল। দখলবাজ ভূমিদস্যু চক্রটি বাঁকখালী নদীর বিভিন্ন অংশে আবাসিক এলাকা গড়ে তুলেছে।
অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী দখলবাজরা দখল করা নদীর জায়গা পৈতৃক সম্পত্তির মতো করে নন জুডিসিয়াল ষ্ট্যাম্পে নোটারী: পাবলিকের মাধ্যমে চুক্তিপত্র সম্পাদন করে উচ্চমূল্যে বেচা-বিক্রি করে নিরীহ লোকজন থেকে হাতিয়ে নিয়েছে শত শতকোটি টাকা।
বর্তমানে বাঁকখালী নদীর বাংলাবাজার থেকে শুরু করে জেলা শহরের উত্তর নুনিয়াছড়া পর্যন্ত নদীর প্রায় ১০ কিলোমিটার তীরভূমিতে কমপক্ষে ৫/৭ হাজার অবৈধ স্থাপনা আজো পর্যন্ত বিদ্যমান। জেলা নদী রক্ষা কমিটি, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিআইডব্লিউটিএ সহ সরকারী বিভিন্ন সংস্থার মাঠ পর্যায়ে জরিপ করে বাঁকখালী নদীর দখলদারদের তালিকা তৈরী করেছে। যে তালিকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নাম ও রয়েছে । তাদের এসব অবৈধ স্থাপনা এখনো উচ্ছেদ করা হয়নি।
উল্লেখ্য বাঁকখালীকে দখল প্রক্রিয়া থেকে মুক্ত করতে গত ২০১৪ সনের ১৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রুল জারি করে। বাঁকখালী দখলকারীদের তালিকা তৈরি করে উচ্ছেদ এবং দূষণের উৎস চিহ্নিত করে তা বন্ধের নির্দেশ দেন হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ। ওইসময় ১০ সরকারি কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যেন কোন কারণে বাঁকখালী নদী ভরাট না হয় তার যথাযথ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার। সচেতন মহলের দাবি, শীঘ্রই যদি বাঁকখালীকে বর্জ্য দিয়ে ভরাট এবং অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া না হয় তবে দ্রুত বাঁকখালী তার নাব্যতা হারাবে এবং জেলার ঐতিহ্য থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে এ নদী ও ।ফলে আপদকালীন নৌযান সমূহের অন্যতম পোতাশ্রয়টি দূষণ ও দখলে অস্তিত্ব হারাবে এতে কোন সন্দেহ নেই।
বাঁকখালী নদীর তীরভূমিসহ কক্সবাজারে সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে সরকারী জমিগুলো পুনরুদ্ধার করাটা জরুরী বলে ও উল্লেখ করা হয় স্মারকলিপিতে।এর আগে জেলা প্রশাসক ও বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষকে জেলা বাপার পক্ষ থেকে দেয়া হয় স্মারকলিপি।
কক্সবাজার জেলা বাপার সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী, সিনিয়র সহসভাপতি এইচ এম ফরিদুল আলম শাহীন, সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ,যুগ্ম সম্পাদক এম জসিমউদদীন ও সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম নজরুলসহ অর্ধশতাধিক নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে এই স্মারক লিপি দেয়া হয়।
স্মারকলিপি গ্রহন করেন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান (অবঃ কমোডর) নুরুল আবছার। তিনি এ সময় বলেন, বাঁকখালী দখলদারদের চিহ্নিত করা হয়েছে। নদী তীর ভূমি উদ্ধারে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা আছে। কোন অবৈধ দখলদারকে ছাড় দেয়া হবেনা।
বিএনএনিউজ/এইচ এম ফরিদুল আলম শাহীন/এইচ.এম।
Total Viewed and Shared : 19