23 C
আবহাওয়া
১২:৫১ পূর্বাহ্ণ - মে ৬, ২০২৪
Bnanews24.com
Home »  কুতুবদিয়ায় তিন বছরে পানিতে ডুবে ২২৩ শিশুর মৃত্যু

 কুতুবদিয়ায় তিন বছরে পানিতে ডুবে ২২৩ শিশুর মৃত্যু


।। এইচ এম ফরিদুল আলম শাহীন।।

কক্সবাজারের সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়ায় গত তিন বছরে ২২৩ শিশু পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে। কুতুবদিয়া চ্যানেল দ্বারা দেশের মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়া। দেড় লক্ষাধিক মানুষের এ দ্বীপের আয়তন ২১৫ বর্গকিলোমিটার । দ্বীপের লোকজনের প্রধান পেশা লবণ চাষ, মৎস্য আহরণ, ক্ষেত খামার এবং অন্যান্য চাষাবাদ ছাড়া বড় কোন আয়ের কিংবা বিকল্প কোন পথ নাই।

এ দ্বীপের লোকজন প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগে এবং সাগরের ভাঙ্গনে বসতভিটা এবং ফসলি জমি হারিয়ে উদ্বাস্তু হচ্ছে। ফলে অনেকে দ্বীপের আবাসস্থল ত্যাগ করে অন্যত্রে বসতভিটা গড়ে তুলেছে ।  যে সকল লোক নিম্ন আয়ের কিংবা কোন রকমে খেয়ে পরে বাঁচতে পারে বা যাদের অন্যত্রে মাথা গুঁজার মতো বিকল্প কোন আবাস নেই তারাই মূলত দ্বীপে স্থায়ী আবাস হিসেবে বসবাস করে আসছে। পরিবারের মা গৃহস্থলীর কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে ফলে বাড়ীতে থাকা শিশু/কিশোরদের অনেক সময় দেখাশুনা করার সুযোগ থাকে না। এ দ্বীপে অসংখ্য পুকুর খাল, নালা নর্দমা এমনকি চারদিকে পানিতে থৈথৈ তাই শিশুরা বাড়ি থেকে বের হলেই পানির কিনারায় চলে যায়।তা ছাড়া এ অঞ্চলের শিশুরা পানিতেই খেলাধুলা করে বেড়ে উঠে।

স্থানীয় এক ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, খেলাধুলার ফাঁকে মায়ের অজান্তেই  বাড়ীর আঙ্গিনায় থাকা কুয়া, ছোট গর্ত, পুকুর কিংবা বাড়ীর পার্শ্বস্থ খাল/বিলের পানিতে নেমে পড়ে। যার পরিণতি পানিতে ডুবেই শিশুর মৃত্যু। এ ভাবে ধারাবাহিকহারে দ্বীপে শিশুরা পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। সকাল কিংবা বিকালে প্রায়শই সংবাদ আসে এক বা একাধিক শিশু পানিতে ডুবে মার গেছে কুতুবদিয়ায়।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বেসরকারী তথ্যমতে দ্বীপে ১৮ সেপ্টেম্বর পুকুরের পানিতে ডুবে আব্দুল মোকাররম (৭) ও জান্নাতুল বকয়ো (৪) এবং তাবাসুম(১৫) সহ  গত তিন বছরে পানিতে ডুবে মারা গেছে ২২৩ শিশু। যার মধ্যে ২০২০ সালে ৮১ জন। ২০২১ সালে ৫৪ জন। ২০২২ সালে ৫৬ জন এবং ২০২৩ সালে চলতি মাস পর্যন্ত ৩৮ জন।

দ্বীপে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর হার রোধে সরকারী/বেসরকারীভাবে দৃশ্যমান কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এ বিষয়ে দ্বীপে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর হার রোধে কিংবা নিরসনে ভুক্তভোগী পরিবারসহ সর্বস্তরের মানুষের সাথে কথা বলে বেশ কিছু বিষয় উঠে আসে।

এই বিষয়গুলো অবলম্বন করলে কেবল দ্বীপে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর হার রোধ করা সম্ভব বলে অভিজ্ঞ মহলের অভিমত।

যে সকল পরিবারের বসতবাড়ীর আঙ্গিনায় কুয়া, ছোট কূপ, জলাশয়, পুকুর, ডোবা, খাল ইত্যাদি আছে এ গুলো সনাক্ত করা কিংবা জরীপ করে চিহ্নিত করা, এ সব এলাকায় শিশুর দেখা শুনায় আরো বেশী যত্নশীল কিংবা সচেতন হওয়ার জন্য ব্যাপকহারে প্রচার করা। প্রতিটি মসজিদ/মন্দির বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ হাট বাজারে প্রচার কার্যক্রম জোরদার করা। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে একটি করে শিশুদের জন্য সাঁতার শেখানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।  জনপ্রতিনিধিদের এ কাজে সম্পৃক্ত করা। যে সকল বসতবাড়ীর অঙ্গিনায় কুয়া, ছোট কূপ, জলাশয়, পুকুর, ডোবা, খাল কিংবা নদী আছে সে সব স্থান থেকে শিশুদের নিরাপদে রাখতে প্রয়োজন মতে ঘেরাবেড়া দিয়ে প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা করা

্এ ছাড়া  বাঁধ/উচু দেয়াল দিয়ে শিশুর গমনাগমনে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে শিশুদের প্রতি আরো যত্নশীল হওয়া। বছরের বেশিরভাগ সময় দ্বীপের দক্ষিণ ধুরুং এবং উত্তর ধুরুং সহ এই দুই ইউনিয়নে খাবার পানির তীব্র সংকট থাকে। ফলে তারা গর্ত খুড়ে পানি জমিয়ে রাখে। এসব ইউনিয়নে পানির সংকট দূরীকরণে গভীর নলকূপ স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ৫ বছরের বেশী বয়সীদের সাঁতার শেখানো।কর্মব্যস্ত অভিভাবকদের শিশুদের জন্য ডে-কেয়ার চালুকরণ এবং বুদ্ধিভিত্তিক বিকাশ ত্বরান্বিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুরোধে গেল বছর সরকার মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রালয়ের অধীনে প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সাঁতার শেখানোসহ নানা কার্যক্রম চালু করলেও কক্সবাজার এ প্রকল্পের আওতাভুক্ত হয়নি।

তাই শিশুদের ভালেভাবে গড়ে তুলতে কিংবা শিশুদের জীবন বাঁচাতে দ্বীপে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুহার রোধে জরুরী ভিত্তিতে সরকারী/বেসরকারীভাবে পদক্ষেপ নেয়া দরকার বলে মনে করেন দ্বীপের সচেতন মহল।

কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপঙ্কর তঞ্চঙ্গা বলেন,দ্বীপ কুতুবদিয়ার ৭০/৭৫ শতাংশ শিশু কিশোররা বয়স্কদের সাথে সামুদ্রিক মৎস্য শিকার এবং লবণ উৎপাদন করে জীবিকা নির্বাহ করে। তাই পানিই হচ্ছে তাদের জীবন জীবিকা। এ জন্য পানিতে তারা ভয় পায়না। এই ভয় না পাওয়াটার কারণে পানিতে পড়ে শিশু মৃত্যুর হার দিন দিন বাড়ছে।

বিএনএ/ ওজি/এইচ এ মুন্নী

Loading


শিরোনাম বিএনএ