29 C
আবহাওয়া
৯:৪৩ পূর্বাহ্ণ - এপ্রিল ২৮, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২৭০( নোয়াখালী-৩)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২৭০( নোয়াখালী-৩)


বিএনএ, ঢাকা:  বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে নোয়াখালী-৩ আসনের হালচাল।

YouTube player

প্রসঙ্গত, অনেকের কাছে এই আসনটির সংসদ সদস্যদের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে বিভ্রান্ত বা খটকা লাগতে পারে। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুয়ায়ি জাতীয় সংসদের ২৭০তম সংসদীয় আসনটি ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচন থেকে নোয়াখালী ৩ হিসাবে উল্লেখ রয়েছে। জাতীয় সংসদের প্রথম ও দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে এটি নোয়াখালী-৪ নামে পরিচিত ছিল। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত ২৭০তম আসনটি নোয়াখালী-২ নামে পরিচিত হয়। ২০০৮ সালের নবম সংসদ থেকে বর্তমান পর্যন্ত এই আসনটি নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ) নামে পরিচিতি পেয়েছে। অর্থাৎ এই পর্যন্ত ২৭০ সংসদীয় আসন থেকে যারা নির্বাচিত হয়েছেন, প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছেন বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম সেইসব সংসদ সদস্যেদের তালিকা এবং নির্বাচনী তথ্য-উপাত্ত, এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৭১ হাজার ৮ শত ১১ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৩০ হাজার ৮৬ জন। নির্বাচনে বিএনপির বরকত উল্লাহ বুলু বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫৩ হাজার ৬ শত ৭১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের অধ্যাপক মোহাম্মদ হানিফ। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩১ হাজার ৩ শত ৫৩ ভোট ।

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এই নির্বাচনে বিএনপির বরকত উল্লাহ বুলু কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ১ হাজার ৭ শত ৭৭ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৮৪ হাজার ৫৫ জন। নির্বাচনে বিএনপির বরকত উল্লাহ বুলু বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮৪ হাজার ৩ শত ৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের এম এ সাত্তার ভুঁইয়া । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫৩ হাজার ৯ শত ৮৭ ভোট।

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৪ লাখ ২৩ হাজার ৭ শত ৭৫ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৫৫ হাজার ৪ শত ২ জন। নির্বাচনে বিএনপির এম এ হাসেম বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৫৮ হাজার ৭ শত ৩৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের এ বি এম জাফর উল্লাহ। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৭২ হাজার ১ শত ৩৪ ভোট।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে সীমানা পুণ:নির্ধারনের পর জাতীয় সংসদের ২৭০ তম নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ) নামে পরিচিত হয়। যা আগের নির্বাচন গুলোতে নোয়াখালী-২ নামে পরিচিত ছিল ।

২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৭৭ হাজার ৭ শত ৭৩ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ২৬ হাজার ৫ শত ৫ জন। নির্বাচনে বিএনপির বরকত উল্লাহ বুলু বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৯৭ হাজার ৩ শত ৯৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মো: মামুনুর রশিদ কিরন। দোয়াত কলম প্রতীকে তিনি পান ৭৩ হাজার ১ শত ২৯ ভোট।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মো: মামুনুর রশিদ কিরন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে র্নিবাচনের দাবিতে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেনি।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৮২ হাজার ৩ শত ৯৮ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৮২ হাজার ৫ শত ১০ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৮ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মো: মামুনুর রশিদ কিরন, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির বরকত উল্লাহ বুলু, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির ফজলে এলাহী সোহাগ, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মোহাম্মদ নুর উদ্দীন, কাস্তে প্রতীকে সিপিবির মজিবুল হক মজিব, কবুতর প্রতীকে গনতন্ত্রী পার্টির মানিক লাল দাস , গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির বাহার উদ্দীন এবং বটগাছ প্রতীকে খেলাফত আন্দোলনের ওমর ফারুক মিয়া প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মো: মামুনুর রশিদ কিরন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ১৭ হাজার ৪ শত ২৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির বরকত উল্লাহ বুলু । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৫৩ হাজার ৭ শত ৯০ ভোট।

কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম সংসদে বিএনপি এবং দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর নোয়াখালী-৩ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ,বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, জাতীয় সংসদের ২৭০ সংসদীয় আসনটিতে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৩৪.৯৯% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৪.১০%, বিএনপি ৪১.২৬%, জাতীয় পাটি ৭.১১%, জামায়াত ইসলামী ১৪.০৩% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১৩.৫০% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬০.৯৯% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৯.৩৩%, বিএনপি ৪৫.৮১% জাতীয় পাটি ১৪.৮৭%, জামায়াত ইসলামী ৮.০৯% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৯০% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬০.২৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৮.২৪%, ৪ দলীয় জোট ৬২.১৫%, জাতীয় পাটি ৭.৭৫% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৮৬% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৯.৮৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ১.৮১%, ৪ দলীয় জোট ৪৩.৪১% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৫৪.৭৮% ভোট পায়।

সংসদীয় আসন ২৭০ নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ) এর বর্তমান সংসদ সদস্য গ্লোব গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, শিল্পপতি মামুনুর রশিদ কিরন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়া মনোনয়ন চাইবেন সাবেক ডাকসু সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতিএটিএম এনায়েত উল্যাহ, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেত্রী লুৎফুন্নাহার মুন্নি। ২০০৮ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন।

বিএনপি এখন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। চালিয়ে যাচ্ছে এক দফার আন্দোলন। নির্বাচনে গেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্যা বুলু দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। তিনি একক প্রার্থী। একাদশ জাতীয় সংসদে তিনি বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। কোনো কারণে তিনি নির্বাচন করতে না পারলে সে ক্ষেত্রে তার স্ত্রী শামিমা বরকত লাকী মনোনয়ন চাইতে পারেন

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, জাতীয় সংসদের ২৭০ তম এই আসনটি বিএনপির ঘাটি। ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের ষষ্ট ও সপ্তম সংসদে বিএনপির বরকত উল্ল্যাহ বুলু টানা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের অষ্টম সংসদে প্রার্থী বদল করে বিএনপি। মনোনয়ন পান শিল্পপতি এম.এ হাসেম। নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হন। ২০০৮ সালের নবম সংসদে বিএনপির বরকত উল্লাহ ভুলু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের মামুনুর রশিদ কিরন এ আসনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য হওয়ার মধ্যে দিয় ৪১ বছর আসনটি ফিরে পায় আওয়ামী লীগ। একাদশ সংসদেও নির্বাচিত হয় মামুনুর রশিদ কিরন। গত ১০ বছরে নোয়াখালী-৩ বেগমগঞ্জ আসনে প্রায় অন্তত ২৫ কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে তেমন মজবুত হয়েছে বলা যাবে না। তার ওপর রয়েছে দলীয় কোন্দল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তা আরও তীব্র হয়েছে। একই অবস্থা বিএনপিতে। তবে তা আওয়ামী লীগের মতো তীব্র নয়।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ২৭০ তম সংসদীয় আসন (নোয়াখালী-৩) আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে হাড্ডাহাডি লড়াই হবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বিএনএ/ শাম্মী, রেহানা, ওজি, ওয়াইএইচ

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ