বিএনএ ডেস্ক: মায়ের ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠায় যারা প্রাণ দিয়েছেন, সেই ভাষাশহীদদের আজ স্মরণ করছে জাতি। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৫২ সালের এই দিনে রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ঢাকার রাজপথ। শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে অকুতোভয় বীর সন্তানদের আত্মত্যাগের দিনটি মহান শহীদ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। বাঙালির ইতিহাসের অবিস্মরণীয় এই দিনটি সারা বিশ্ব আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করছে।
ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। করোনার সংক্রমণ কম থাকায় এবার শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানাতে কোনো বিধিনিষেধ রাখা হয়নি। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সশরীরে উপস্থিত হয়ে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। আজ ধর্মীয় উপাসনালয়ে ভাষাশহীদদের রুহের শান্তি কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করা হবে।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণের দেয়াল ও পিচঢালা রাস্তা তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মায়ের ভাষার অধিকার রক্ষায় সংগ্রামের সেই ক্ষণ। ভাষা আন্দোলন থেকে একাত্তরের গৌরবগাথা এবং সংগ্রামে উত্তাল দিনের ঘটনাবলি চিত্রায়ণ করা হয়েছে। ‘বহুভাষায় শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থা রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তা’ প্রতিপাদ্যে আজ শহীদ দিবস পালন করা হবে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেসকো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এর পর থেকে সারা বিশ্বে দিবসটি পালিত হচ্ছে।
গত দুই বছর করোনার সংক্রমণ থাকায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ পাঁচজন এবং ব্যক্তিপর্যায়ে সর্বোচ্চ দুজনকে একসঙ্গে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ দেয়া হয়েছিল। গত দুই বছর রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তাদের কর্মকর্তারা শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
এবার বিধিনিষেধ উঠে গেলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন কেন্দ্রীয়ভাবে শহীদ দিবস উদযাপনের দায়িত্বে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘গত বছর আমরা নানা ধরনের প্রতিকূলতার মধ্যে অমর একুশ উদযাপন করেছি। এবার যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে সবার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে তা উদযাপন করতে পারব। সবার প্রতি অনুরোধ রাখব, যাতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করি।’
একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা জানানোর পর মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দলের নেতা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন এবং সর্বসাধারণের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার উন্মুক্ত থাকবে।
মহান শহীদ দিবসের বাণীতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় অমর একুশের চেতনা আজ অনুপ্রেরণার অবিরাম উৎস। তবে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির যথাযথ চর্চা ও সংরক্ষণে আমাদের আরও যত্নবান হতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে আজ আমরা গ্লোবাল ভিলেজের বাসিন্দা। তাই উন্নত বিশ্বের সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে যেতে বর্তমান প্রজন্মকে বাংলার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃত বিভিন্ন ভাষার ওপর প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে হবে। নিজ ভাষার উন্নয়ন ও সংরক্ষণের পাশাপাশি বহুভাষিক শিক্ষার মাধ্যমে টেকসই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ করতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন ইতিবাচক অবদান রাখবে- এটাই সকলের প্রত্যাশা।’
প্রধানমন্ত্রী তার শহীদ দিবসের বাণীতে ভাষা আন্দোলনের পুরো ইতিহাস তুলে ধরেছেন। ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাঙালি জাতির মুক্তি-সংগ্রামের ইতিহাসে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনের ভিত রচিত হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মহান ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শকে ধারণ করে গত ১৪ বছরে বাংলাদেশকে আমরা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করেছি। ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ।’
বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ