30 C
আবহাওয়া
৬:২৩ পূর্বাহ্ণ - মে ৩০, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » কবিতা ও গানে একুশ

কবিতা ও গানে একুশ


।। মীম ওসমান ।।

একুশে ঘটেছিল ঢাকায় অথচ কবিতার ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে তার অনুরণন উঠেছিল চট্টগ্রামে। সেই দিনই রচিত হয়েছিল মাহবুব-উল-আলম চৌধূরীর  কবিতা ’কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি”।

’যে শিশু আর কোনো দিন তার পিতার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ার সুযোগ পাবে না,
যে গৃহবধূ আর কোনোদিন তার স্বামীর প্রতীক্ষায় আঁচলে প্রদীপ
ঢেকে দুয়ারে আর দাঁড়িয়ে থাকবে না,
যে জননী খোকা এসেছে বলে উদ্দাম আনন্দে সন্তানকে আর
জড়িয়ে ধরতে পাবে না,
যে তরুণ মাটিতে লুটিয়ে পড়ার আগে বার বার একটি প্রিয়তমার
ছবি চোখে আনতে চেষ্টা করেছিল,
তাদের সবার নামে শাস্তি দাবি করতে এসেছি
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে আমি তাদের ফাঁসির দাবি
নিয়ে এসেছি’

কবি আল মাহমুদ লেখেছিল,

ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ
দুপুর বেলার অক্ত
বৃষ্টি নামে, বৃষ্টি কোথায় ?
বরকতের রক্ত।

হাজার যুগের সূর্যতাপে
জ্বলবে এমন লাল যে,
সেই লোহিতেই লাল হয়েছে
কৃষ্ণচূড়ার ডাল যে !

প্রভাতফেরীর মিছিল যাবে
ছড়াও ফুলের বন্যা
বিষাদগীতি গাইছে পথে
তিতুমীরের কন্যা।

চিনতে না কি সোনার ছেলে
ক্ষুদিরামকে চিনতে ?
রুদ্ধশ্বাসে প্রাণ দিলো যে
মুক্ত বাতাস কিনতে ?

পাহাড়তলীর মরণ চূড়ায়
ঝাঁপ দিল যে অগ্নি,
ফেব্রুয়ারির শোকের বসন
পরলো তারই ভগ্নী।

প্রভাতফেরী, প্রভাতফেরী
আমায় নেবে সঙ্গে,
বাংলা আমার বচন, আমি
জন্মেছি এই বঙ্গে।

একুশের ঘটনা একজন কবিকে কীভাবে আলোড়িত করেছিল , সে আবেগ যে কত তীব্র, বিধ্বস্ত ও উত্তপ্ত ছিল তা অনুভব করতে পারি যখন শামসুর রাহমান-এর কবিতা পাঠ করি–
আর যেন না দেখি কার্তিকের চাঁদ কিংবা
পৃথিবীর কোনো হীরার সকাল,
কোনোদিন আর যেন আমার চোখের কিনারে
আকাশের প্রতিভা, সন্ধ্যানদীর অভিজ্ঞ আর
রাত্রি রহস্যের গাঢ় ভাষা কেঁপে না ওঠে,
কেঁপে না ওঠে পৃথিবীর দীপ্তমান দিগন্তের তারা।

একুশের কবিতা রচিত হয়েছিল তাৎক্ষণিক আবেগে কিন্তু প্রয়োজন ছিল গানেরও, তাই একটি কবিতা গান হয়ে উঠেছিল। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর কবিতা আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী একটি কবিতা হিসেবেই রচনা করেছিলেন যা আবৃত্তি করা হয়েছিল গেণ্ডারিয়া ধূপখোলা মাঠে যুবলীগের এক উন্মুক্ত অনুষ্ঠানে। আবদুল লতিফের সুরে ওই কবিতা প্রথম গান হয়ে ওঠে আবদুল লতিফ ও আতিকুল ইসলামের কণ্ঠে। তিপ্পান্ন সালের একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবসে ঢাকা কলেজের অনুষ্ঠানে ওই গান গেয়ে আর ঢাকা কলেজ প্রাঙ্গণে শহীদ মিনার তুলে আতিকুল ইসলাম এবং আরও কয়েকজন কলেজ থেকে বহিষ্কৃত হন। পরে আলতাফ মাহমুদ গানটি আবদুল লতিফের কাছ থেকে শিখে নেন এবং আরও পরে নতুন করে সুর করেন। এখন আলতাফ মাহমুদের সুরেই গানটি গাওয়া  হয়।

আলাউদ্দিন আল আজাদের ভাষায়,
স্মৃতির মিনার ভেঙেছে তোমার? ভয় কি বন্ধু আমরা এখনো চার কোটি পরিবার
খাড়া রয়েছি তো।…
ইটের মিনার
ভেঙেছে ভাঙুক। ভয় কি বন্ধু, দেখ একবার আমরা জাগরী
চার কোটি পরিবার।

বাংলাদেশের কবি ও গীতিকবিদের প্রায় সবাই একুশের গান লিখেছেন।  একুশের গানের প্রথম সুরকার আবদুল লতিফ (১৯২৭-২০০৫)।

তিনি লিখলেন কালজয়ী একুশের গান:

‘ওরা আমার মুখের ভাষা/

কাইড়া নিতে চায়,/

ওরা, কথায় কথায় শিকল পরায়/

আমার হাতে পায়।’

এ কথা এখন দ্বিধাহীন চিত্তে বলা যায় যে, এ ভূখণ্ডের বাঙালির যা কিছু অর্জন তার পুরোটারই পশ্চাৎভূমি হিসেবে রয়েছে অমর একুশের অনন্য ভূমিকা। বায়ান্নর একুশে বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছে—তাদের ভাষাকেন্দ্রিক জাতীয়তাবাদী চেতনাকে শানিত করেছে। যার ফলে একাত্তরে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছিল।

বিএনএ/ ওজি

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ