31 C
আবহাওয়া
১২:৫৪ পূর্বাহ্ণ - মে ১৬, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » কে এই হামাস গুরু ইয়াসীন?

কে এই হামাস গুরু ইয়াসীন?


বিএনএ, ডেস্ক : হামাসের আধ্যাত্মিক গুরু শায়খ আহমাদ ইসমাইল হাসান ইয়াসীন। ১৯৩৬ সালের ২৮ জানুয়ারি মাসে আসকালান শহর থেকে বিশ কি. মি দূরে জুরাহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।  তার পিতার নাম ছিল  আব্দুল্লাহ ইয়াসিন। মাতার নাম ছিল সা’দা আল হাবেল। তিন বছর হতে না হতেই তার পিতা মৃত্যু বরণ করেন। লোকে তাকে চিনত তার মাতার নামের সাহায্যে আহমাদ সা’দা হিসেবে। ইয়াসীনরা ছিলেন চার ভাই এবং দুই বোন।

YouTube player

১৯৪৮ সালে তাদের গ্রাম ইসরায়েলের দখলে চলে গেলে তাদের জায়গা হয় গাজার আল সাথি শরণার্থী শিবিরে। তখন তার বয়স মাত্র ১০ বছর। চার ভাই আর দুই বোন নিয়ে শুরু হয়  তাদের শিবির জীবন। বেড়ে ওঠার প্রতিটা সময় তিনি লক্ষ করেছেন শরণার্থী শিবিরের কষ্টের দিকগুলো। সেকারণে তার মনে ইসরাইলীদের প্রতি তীব্র বিদ্বেষ এবং ফিলিস্তিনীদের প্রতি ভালোবাসা জন্ম নেয়। যা পরবর্তীতে তার প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

শরণার্থী শিবিরের দুই বছরের মাথায় আহমাদ ইয়াসীন বন্ধু আব্দুল্লাহ আল খতিবের সঙ্গে কুস্তি লড়তে গিয়ে মেরুদণ্ডে প্রচণ্ড আঘাত। আহমাদ ইয়াসীন সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যান। বারো বছরের বালক তার বন্ধুর হাতে চোট পেলেও দুই পরিবারের মধ্যে যাতে প্রতিশোধের আগুন জ্বলে না ওঠে তার জন্য কারোর কাছেই আব্দুল্লাহ আল খতিবের নাম বলেননি- বলেছিলেন-ব্যাঙ ব্যাঙ খেলতে গিয়ে নিজে নিজেই চোট পেয়েছেন।

কায়রোর বিখ্যাত আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার ইচ্ছা ছিল শায়খ আহমাদ ইয়াসীনের। ভর্তিও হয়েছিলেন। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতা আর অসুস্থতার কারণে তাকে শরণার্থী শিবিরে ফিরে আসতে হয়। সেই ফেরা তার জন্য শাপেবর হয়। বাড়িতে বসে পড়ালেখা করেন দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান,অর্থনীতিসহ ইসলাম ধর্ম  বিষয়ে।  তিনি হয়ে ওঠেন প্রকৃত চৌকষ এক পণ্ডিত ।

মসজিদে জুমার নামাজ পড়ানোর জন্য ডাক আসে শায়খ ইয়াসীনের।  তার খুৎবার বয়ান ছিল খুবই জ্ঞানগর্ভ। মানুষ মন্ত্রমুগ্ধে তা শুনতো। মানুষ খুঁজে নিত কোন্ মসজিদে আহমদের বয়ান হবে। তরুণদের আকৃষ্ট করত তার যুক্তিযুক্ত বয়ান।

বক্তৃতা,খুৎবায় মানুষের ঢল নামলেও জীবন-জীবিকার জন্য একটা চাকরি বা ব্যবসা খুব প্রয়োজন। কিন্তু কোনোটাই তার কাছে ধরা দেয় না। শেষ পর্যন্ত চাকরি মেলে এক প্রাথমিক স্কুলে আরবি শেখানোর। স্কুলের হেড মাস্টার মোটেও রাজি ছিলেন না। সাধারণ শিক্ষকদের পক্ষেই ক্লাসে শান্তি বজায় রাখা যখন কঠিন সেখানে হুইল চেয়ারে বসা এক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের কীভাবে সামাল দেবে?

পরে বিস্ময়ের সঙ্গে তিনি লক্ষ করেন,তার আশঙ্কা কতটা ভুল ছিল। ছাত্রদের কাছে তিনি হয়ে যান হ্যামিলনের বংশীবাদক-সবচেয়ে চঞ্চল ছাত্রটিকেও বশীভূত করে ফেলেন শিক্ষক আহমদ ইয়াসীন। শুধু ক্লাসে নয়,ছাত্ররা তার পিছু পিছু মসজিদেও যেতে থাকে। অনেক অভিভাবকের আপত্তি ছিল ক্লাসের বাইরে তাকে অনুসরণের। কিন্তু তিনি ক্রমশই সবাইকেই তার অনুরাগী করে তোলেন।

অন্যের কষ্ট অনুধাবনের এক অলৌকিক ক্ষমতা ছিল শায়খ আহমাদ ইয়াসীনের।  সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরতে ঘুরতে তিনি এতোটাই জীবনঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন যে,তাকে এক কথা দু’বার বলতে হতো না।  তিনি মূখ দেখে  বুঝে নিতেন  সব কিছু।  অপরিসীম জ্ঞান আর আধুনিক বিশ্ব সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা শারিরীকভাবে অক্ষম শায়খ আহমাদ ইয়াসীনের।

১৯৬৭ সালের আরব ইসরাইল যুদ্ধের পর শায়খ তার বক্তব্যে ফিলিস্তীনিদের প্রতিরোধের দিকে উদ্বুদ্ধ করতে শুরু করেন। তিনি এসময় ইসলামী সমাজ সংস্থার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে অবরুদ্ধ জনগণ, আহত এবং বন্দীদের জন্য ত্রাণ ও সাহায্যের ব্যবস্থা করেন। বিভিন্ন সামাজিক কাজের মাধ্যমে তিনি ফিলিস্তিনী জনগণের প্রিয় পাত্রে পরিণত হন। ১৯৮৩ সালে তিনি প্রথমবারের মত গ্রেফতার হন এবং ইহুদী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণে জনগণকে উস্কানী দেয়ার অভিযোগে তার ১৩ বছরের জেল হয়। ১৯৮৫ সালে তিনি ছাড়া পান।

১৯৬০ সালে হালিমা নামে তার একজন আত্নীয়াকে বিয়ে করেন শায়খ আহামাদ ইয়াসীন । তখন তার বয়স ছিল ২২ বছর। শায়খ আহমাদ ইয়াসিনের ১১ জন সন্তান রয়েছে। খুব সাধাসিধে জীবন যাপন কারী এই নেতা গাযায় তিন রুমের একটি এপার্টমেন্টে বাস করতেন।

১৯৮৭ সালে শায়খ আহমাদ ইসমাইল হাসান ইয়াসিন  হামাস প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম দিকে হাসপাতাল, এনজিও, স্কুল, লাইব্রেরী গঠনের মাধ্যমে জনগণের মন আকর্ষণ করলেও ধীরে ধীরে হামাস ইসরাইলীদের বিরুদ্ধে একটি স্বশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলনে রূপ নেয়। ১৯৯১ সালে তিনি দ্বিতীয়বারের মত গ্রেফতার হন। ১৯৯৭ সালে ছাড়া পেয়ে দ্বিগুন উদ্যমে প্রতিরোধ আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েন। তাকে হত্যার জন্য ইসরাইল বেশ কয়েকবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। অবশেষে  ২০০৪ সালের ২২  মার্চ  ভোরে ফজরের নামাজে যাবার সময় ইসরাইলী বাহিনী হেলিকপ্টার থেকে মিসাইল ছুঁড়ে তাকে হত্যা করে।

কে জানতো ১৯৮৭ সালে শেখ আহমাদ ইয়াসীনের প্রতিষ্ঠিত সেই হামাসই ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ভোরে ইসরাইলে প্রবেশ করে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে বিশ্বের ভূ-রাজনীতির চিত্র পাল্টে দিবে?

বিএনএ নিউজ/ শাম্মী, ওজি

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ