32 C
আবহাওয়া
৭:৩৮ অপরাহ্ণ - মে ৩০, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১২৮ (পিরোজপুর-২)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১২৮ (পিরোজপুর-২)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে পিরোজপুর-২ আসনের হালচাল।

পিরোজপুর-২ আসন 

পিরোজপুর-২ সংসদীয় আসনটি ভান্ডারিয়া, কাউখালী ও ইন্দুরকানী উপজেলা নিয়ে গঠিত। এ আসনটি জাতীয় সংসদের ১২৮তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মন্জু বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৪৪ হাজার ৪ শত ৬৬ জন। ভোট প্রদান করেন ৬৫ হাজার ৪ শত ৬৯ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মন্জু বিজয়ী হন। বাইসাইকেল প্রতীকে তিনি পান ৩৬ হাজার ৬ শত ৫১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আব্দুল হাকিম। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১৫ হাজার ৫ শত ৬০ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির নুরুল ইসলাম মন্জুরকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে বিএনপির নুরুল ইসলাম মন্জুরকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: জাতীয় পার্টির আনোয়ার হোসেন মন্জু বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৪৫ জন। ভোট প্রদান করেন ৬৪ হাজার ৫শত ৭ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির আনোয়ার হোসেন মন্জু বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৩৩ হাজার ৫শত ১৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আলতাফ হোসেন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১৩ হাজার ৮ শত ১১ ভোট। আনোয়ার হোসেন মন্জু এ আসনটি ছেড়ে দিলে উপ নির্বাচনে তার স্ত্রী তাসমিমা হোসেন বিজয়ী হন।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: আনোয়ার হোসেন মন্জু বিজয়ী বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৪২ হাজার ৪ শত ২৩ জন। ভোট প্রদান করেন ৭৬ হাজার ৫ শত ২২ জন। নির্বাচনে এরশাদের জাতীয় পার্টি থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া আনোয়ার হোসেন মন্জু বিজয়ী হন। বাইসাইকেল প্রতীকে তিনি পান ৩৭ হাজার ৩ শত ৫০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির নুরুল ইসলাম মন্জুর। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ২০ হাজার ৫ শত ৯৪ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ শাহ আলম বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩৩ হাজার ৮ শত ৯৩ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭শত ২১ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ শাহ আলম বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১লাখ ২৮ হাজার ৩ শত ৬০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির নুরুল ইসলাম মন্জুর। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫৮ হাজার ৬ শত ৪৭ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মন্জু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মন্জু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মন্জু বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২০ হাজার ৫ শত ৩২ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৯১ হাজার ৬ শত ৯১ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৫ জন। বাইসাইকেল প্রতীকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মন্জু, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির মুস্তাফিজুর রহমান, কাস্তে প্রতীকে সিপিবির মহম্মদ আবদুল হামিদ, টেলিভিশন প্রতীকে বিএনএফ’র রেজাউল করিম গাজী। হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আবুল কালাম আজাদ প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। জাতীয় পার্টি (মন্জু)র চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সঙ্গে অঘোষিত ঐক্যের কারণে আওয়ামী লীগ এই আসনে প্রার্থী দেয়নি।

নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মন্জু বিজয়ী হন। বাইসাইকেল প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৭৯ হাজার ৪ শত ২৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৬ হাজার ৩শত ২৬ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম, সপ্তম অষ্টম, দশম ও একাদশ সংসদে জাতীয় পার্টি, নবম সংসদে আওয়ামী লীগ এবং ষষ্ঠ, সংসদে বিএনপি বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর পিরোজপুর-২ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, পিরোজপুর-২ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৪৫.৩২% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৩.৭৭%, বিএনপি ৯.৩৮%,জাতীয় পাটি ৫৫.৯৮%, জামায়াতে ইসলামী ৭.১২%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩.৭৫% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৪.৪৮%। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২১.৪১%, বিএনপি ১১.৪৫%, জাতীয় পাটি ৫১.৯৬%, জামায়াতে ইসলামী ৯.৮৪%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৫.৩৪% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫৩.৭৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৭.৫৮%, ৪দলীয় জোট ২৬.৯১%,জাতীয় পার্টি ৬.৪২%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৪৯.০৯% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৪.৭৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৬৫.২০%, ৪দলীয় জোট ৩০.১৪%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৪.৬৬% ভোট পায়।

পিরোজপুর-২, আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ জোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টি (মন্জু)র চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। তিনি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জোটে থাকলে, এবারও প্রার্থী দিবে না আওয়ামী লীগ।
তবুও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন ভান্ডারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলাম মিরাজ এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না।

বিএনপির থেকে মনোনয়ন চাইবেন ভান্ডারিয়া উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আহমেদ সোহেল মনজুর সুমন, কেন্দ্রীয় বিএনপির স্বাস্থ্য ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ডা. রফিকুল কবির লাভলু, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর পুত্র সাবেক ইন্দুরকানী উপজেলা চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী এবং ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, পিরোজপুর -২ আসনটি পিরোজপুরের তিনটি আসনের মধ্যে তারকা আসন। এই আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টি (মঞ্জু)র চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। এই আসন থেকে তিনি ৫ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৯৬ সালে উপ নির্বাচনে তাঁর স্ত্রী তাসমিমা হোসেন একবার সংসদ সদস্য হয়েছেন। সে কারণে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির জন্য বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে বিজয়ী করতে এই আসনে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১২৮ তম সংসদীয় আসন পিরোজপুর-২ আসনে কে জিতবে? তা নির্ভর করছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেওয়া- না দেওয়ার ওপর।

বিএনএ/ শিরীন সুলতানা, এমএফ, ওয়াই এইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ