বিএনএ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: শিক্ষকদের পেনশন আন্দোলন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সমাজের কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং সবশেষে শেখ হাসিনা সরকারের পতন—এসব কারণে কার্যত স্থবির ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও সহ-শিক্ষা কার্যক্রম। তবে ছাত্র আন্দোলনে রাবি শিক্ষার্থীদের ভূমিকাও ছিল বেশ প্রশংসনীয়।
তবে ধীরে ধীরে চাঙ্গা হতে শুরু করেছে দেশের অন্যতম বৃহৎ এই ক্যাম্পাসটি। গতকাল (১৭ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীরচর্চা শিক্ষা বিভাগের তত্ত্বাবধানে আয়োজন করা হয় রাবি ও রুয়েটের মধ্যকার একটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। ম্যাচটিকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যেও ছিল উচ্ছ্বাস-উত্তেজনা, দর্শক উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এতে রুয়েটকে ২-০ গোলে হারায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
চলতি বছর রাবিতে অনুষ্ঠিত হওয়া আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট টুর্নামেন্টে ঢাবি খেলোয়াড়দের সঙ্গে ঘটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পর এটিই ছিল প্রথম কোনো প্রীতি ম্যাচ। সুশৃঙ্খলভাবেই ম্যাচটি সম্পন্ন হওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে ম্যাচটি উপভোগ করেছেন।
আন্দোলন-সংগ্রামের পর এমন একটি প্রীতি ম্যাচ গোটা ক্যাম্পাসকেই চাঙ্গা করে তুলেছে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে নতুন উপাচার্য দায়িত্ব নেবার পর আবাসিক হল, ইন্সটিটিউট এবং বিভিন্ন অফিস প্রধানদের নিয়োগ প্রক্রিয়াও চলছে জোরেশোরে। ১১ সেপ্টেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে ক্লাস-পরীক্ষা। ২২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে ২০২৩-২৪ সেশনের (৭১তম ব্যাচ) শিক্ষার্থীদের ক্লাস। সবমিলিয়ে স্থবিরতা কাটিয়ে অনেকটাই স্বাভাবিক রাবি ক্যাম্পাস।
এরই মধ্যে রুয়েটের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত হওয়া এই প্রীতি ম্যাচটি শিক্ষার্থীদের ভেতরেও একটা চাঙ্গা ভাব নিয়ে এসেছে।
ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ গতকাল তার বক্তব্যে বলেন, “খেলার যে শক্তি আছে যেটা আমাদেরকে উজ্জীবিত করে। খেলাধুলার মাধ্যমে যে ঐক্য তৈরি হয় সেটিকে আমাদের জাতীয় শক্তিকে রূপান্তরিত করতে হবে। স্পোর্টসের জন্য আমরা কাজ করে যাব, কিন্তু অংশগ্রহণ খুব গুরুত্বপূর্ণ। ইদানিং দেখা যাচ্ছে স্মার্টফোনে আসক্তিসহ বিভিন্ন দিকে আমরা চলে যাচ্ছি। তাই আমাদের নিজেদের জায়গা থেকে অংশগ্রহণ করতে হবে খেলাধুলাতে।”
শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. শাহীন আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, “এত বড় একটি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা দিন অতিবাহিত করেছি; নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যেই সময়গুলো গেছে। এমন একটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচ আয়োজনের ফলে সত্যিই আমাদের মধ্যে একটি উন্মাদনা কাজ করেছে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক একটি ম্যাচে ক্রীড়া উপদেষ্টাও উপস্থিত ছিলেন; সবমিলিয়ে উপাচার্য স্যারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ সুন্দর এই আয়োজনটির জন্য।”
প্রীতি ম্যাচটির আয়োজন প্রসঙ্গে শরীরচর্চা শিক্ষা বিভাগের পরিচালক এম. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, “বেশ শর্ট টাইমের মধ্যেই এই প্রীতি ম্যাচটি আয়োজন করতে হয়েছিল। এতে ক্যাম্পাসটাও চাঙ্গা হয়েছে, আর শিক্ষার্থীরাও বেশ উৎফুল্ল ছিল।”
সুষ্ঠুভাবে ম্যাচটি সম্পন্ন হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব বলেন, “এই প্রীতি ম্যাচের সময় মাননীয় উপদেষ্টার উপস্থিতি নিঃসন্দেহে অংশগ্রহণকারী দুটি দলকে অনুপ্রাণিত করেছে। ক্যাম্পাসে একটা চাঙ্গা ভাব এসেছে; আসলে স্পোর্টসে যেটা হয়, খেলে অল্প কিছু মানুষ কিন্তু সব মানুষকেই একত্রিত করতে পারে। ধীর ধীরে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। আমি আজকেও দেখেছি শিক্ষার্থীরা বেশ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই ক্যাম্পাসে বিচরণ করছে; আশা করি আর কিছুদিন পর পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থাটা ফিরে আসবে।”
বিএনএ/ সৈয়দ সাকিব, ওজি/এইচমুন্নী