29 C
আবহাওয়া
৯:৫২ অপরাহ্ণ - মার্চ ২৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » মুনিরীয়ার ভণ্ডামি-৯ (তাজে গাউছিয়্যত )

মুনিরীয়ার ভণ্ডামি-৯ (তাজে গাউছিয়্যত )


।।ইয়াসীন হীরা।।

২০০৯ সাল থেকে রাউজান কাগতিয়া দরবারের পীর  শায়খ তফজ্জল আহমদ শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। তার তিন ছেলে। বড় ছেলে হাবিবুল্লাহ, মেঝ ছেলে রফিক উল্লাহ এবং কনিষ্ট ছেলে মুনির উল্লাহ। কনিষ্ট ছেলে মুনিরউল্লাহ কাগিতিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পদে আসীন হন। নানা কূটকৌশলে কাগতিয়া মাদ্রাসা ও দরবারের একক নিয়ন্ত্রণ নেন। পীর তফজ্জল আহমদকে গৃহবন্দি রাখেন। গঠন করেন নিজস্ব মাস্তান বাহিনী। মুনির উল্লাহ’র বড় দুই ভাই হাবিবুল্লাহ ও রফিক উল্লাহকে বের করে দেন। তারা নিরুপায় হয়ে চট্টগ্রাম শহরে পরিবার নিয়ে বসবাস করতে থাকেন। কাগতিয়ার দরবার সম্প্রসারণের নামে তাদের বসতবাড়ি দখল করে নেন।মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বড় দুইভাইকে (প্রায় ১০ বছর) পিতা তফজ্জল আহমদ এর সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি।কখনো পিতাকে দেখতে গেলে তার সন্ত্রাসী বাহিনী তাদের বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতে দিতেন না।

বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি (বিএনএ) অনুসন্ধানী টিমের কাছে মোহাম্মদ উল্লাহ ও হাবিউল্লাহ অভিযোগ করেছেন। তাদের পিতা মানুষকে সত্য বলা, মিথ্যা পরিহার করা, কোরআন-হাদিস অনুয়ায়ি সৎ জীবন-যাপন, হালাল উপার্জন ও নামাজ-রোজা কায়েম করার জন্য অনুরোধ করতেন।কখনো ইসলামের নামে ভণ্ডামি, মিথ্যা, বানোয়াট কেরামতি বর্ণনা করেননি। কিন্তু তাদের দুই ভাইকে বাড়ি থেকে বিতাড়িত এবং পিতা তফজ্জল আহমদ’র অসুস্থতার সুযোগটি কাজে লাগিয়ে মুনির উল্লাহ নানা বানোয়াট কেরামতি বর্ণনা করতে থাকেন।তার এহেন কাজের পরামর্শক মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি বাংলাদেশের মহাসচিব ফটিকছড়ি লায়লা কবির কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞানের শিক্ষক মোহাম্মদ ফোরকান মিয়া এবং চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান হিসাব রক্ষক ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। তাদের যোগসাজসে পিতা শায়খ ছৈয়দ তফজ্জল আহমদকে উপাধি দেন গাউছুল আজম, মহান মোর্শেদ, আওলাদে মোস্তফা, খলিফায়ে রাসূল (স.)।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মুনির উল্লাহ অর্থসম্পদ অর্জন ও নিজস্ব একটি বলয় তৈরি করতে বিভিন্ন এশায়েত সম্মেলন ও পুস্তক, স্মরণিকা, ক্রোড়পত্র, বুলেটিন বের করে প্রচার করতে থাকেন নানা কাল্পনিক কেরামতি এবং ভ্রান্ত মতবাদ। সফলও হয়েছে মুনির উল্লাহ এবং কাগতিয়া দরবারের নামে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। নামে বেনামে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কানাডায় রয়েছে বিপুল সম্পদ।

ঢাকার পল্টনে মুনিরীয়ার হোটেল ও জমি

শায়খ সৈয়দ তফজ্জল আহমদকে তাঁর ভক্ত অনুসারীরা ‘গাউছুল আজম’ উপনামে স্মরণ করেন। তাদের কেউ পীর সাহেবের নাম নেন না। সে কারণে অনেক অনুসারী পীর সাহেবের নাম কী তা জানেন না। কেউ ভুল করে নাম বললে তাকে ‘বেয়াদব’ বলে আখ্যায়িত করা হয়। মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি, বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত প্রত্যেকটি প্রকাশনায় শায়খ তফজ্জল আহমদের নাম নেই। লেখা হয়েছে ‘এ যুগের গাউছুল আজম’ ‌‘ছৈয়্যদ গাউছুল আজম’ ‘মাদ্দাজিল্লুহুল আলী’ ‘মহান মোর্শেদ’ ‘আওলাদে মোস্তফা’ খলীফায়ে রাসূল(স:)বিভিন্ন উপ-নামে। এশায়েত সম্মেলন, এশায়েত মাহফিলে বক্তারা শায়খ তফজ্জল আহমেদ এর নাম নেন না। এমনকি পীর সাহেব নামেও ডাকেন না।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১২ সালের ২৮ জানুয়ারি বায়তুল মোকারম জাতীয় মসজিদ এলাকায় অনুষ্ঠিত হয় এক এশায়াত সম্মেলন। ওই এশায়াত সম্মেলন উপলক্ষে প্রকাশ করা হয় ক্রোড়পত্র। (যা ৪ এপ্রিল ২০১৮ সালে ওয়েব পোস্টিং করা হয়)।

এতে উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৯৬ সালে স্বপ্নে অলৈাকিকভাবে প্রিয় রাসূল (স:) এর পক্ষ হতে ‘তাজে গাউছিয়্যত’ লাভ করেন শায়খ সৈয়দ তফজ্জল আহমদ। তাকে নবী ও রসুল ‘যুগের গাউছুল আজম’ পদে ভূষিত করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন ক্রোড়পত্রে। যা বিভিন্ন এশায়েত সম্মেলনে ভাড়াটে মাওলানাদের দিয়ে তা ব্যাপকভাবে প্রচার করেছেন।

 

ক্রোড়পত্রে আরো লেখা হয়, ২০০৩ সালে ওমরা পালন শেষে রওজা শরীফে নবীর(স.) রওয়াজা শরীফ জিয়ারতকালে জাগ্রত অবস্থায় অলৌকিকভাবে রাসুল (স:) এর হাত মোবারকে বাইয়াত হয়ে ‘খলিফায়ে রাসূল’ এর মর্যাদা লাভ করেন। যা বুশরা (সু-স্বপ্ন) দ্বারা প্রমাণিত বলে ক্রোড়পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। (বিস্তারিত জানতে ‘খলীফায়ে রাসুল’ নামক বইটি পড়ার জন্য ওই ক্রোড়পত্রে অনুরোধ করা হয়েছে)।

শুধু ক্রোড়পত্রে নয়, মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি, বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন পুস্তক, বুলেটিন, স্মরণিকায় বারবার লেখা হয়েছে মুনির উল্লাহ’র পিতা শায়খ তফজ্জল আহমদকে রসুল (স:) তাজ, টুপি, পাগড়ি পড়িয়ে দিয়েছেন। যার কোন দালিলিক প্রমাণ নেই।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৪ মে শায়খ তফজ্জল আহমদ ইন্তেকাল করেন। জীবিতকালে তিনি নিজেকে ‘এ যুগের গাউছুল আজম’ ‘মাদ্দাজিল্লুহুল আলী’ ‘মহান মোর্শেদ’ ‘আওলাদে মোস্তফা’ ‘খলীফায়ে রাসূল(স.) হিসাবে পরিচয় দেননি। তিনি এলাকায় মানুষকে নামায কায়েম, রোজা পালন, জাকাত প্রদানসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার আহ্বান জানাতেন। ধর্ম নিয়ে কোন ধরনের গোঁড়ামি, অলৌকিক ক্ষমতার জাহির, প্রচার কোনটাই করেননি।

চলবে-

আগের পর্ব পড়তে ক্লিক করুন :

মুনিরীয়ার ভণ্ডামি-৮(খেলাফতের স্বাক্ষী যারা)

মুনিরীয়ার ভণ্ডামি-৭(ভ্রান্ত যত মতবাদ)

মুনিরীয়ার ভণ্ডামি-৬

মুনিরীয়ার ভণ্ডামি-৫

মুনিরীয়ার ভণ্ডামি-৪
মুনিরীয়ার ভণ্ডামি-৩
মুনিরীয়ার ভণ্ডামি-২
মুনিরীয়ার ভণ্ডামি-১

Loading


শিরোনাম বিএনএ