32 C
আবহাওয়া
১১:২০ অপরাহ্ণ - মে ১৭, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » শেখ মুজিব থেকে যেভাবে ‘বঙ্গবন্ধু’ হলেন

শেখ মুজিব থেকে যেভাবে ‘বঙ্গবন্ধু’ হলেন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

বিএনএ, ঢাকা: শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতি ছিল দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে। স্কুল জীবন থেকেই তিনি অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেন। যখন একটু বড় হলেন তখন বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে লাগলেন। আর যখন নেতা হলেন তখন তিনি বুঝতে পারলেন বাংলার মানুষের মুক্তির একমাত্র উপায় হলো পাকিস্তানিদেরকে তাড়ানো। আর তাই মানুষদের জাগিয়ে তোলার জন্য তিনি ছুটে বেরিয়েছেন বাংলার আনাচে-কানাচে, পথে-প্রান্তরে। এ সময়ে শহর-বন্দর, গ্রামবাংলার মানুষ ভালোবেসে তাঁকে অনেক নামে ডেকেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল ‘মুজিব ভাই’।

ক্ষণজন্মা এই পুরুষের জন্ম গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ। শিশুকাল থেকে তিনি ছিলেন বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান। বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তার মাঝে প্রকাশ পায় নেতৃত্বের গুণাবলী। তার কথা বলার ভঙ্গি ছিল অসাধারণ। যা সহজে মানুষের আকৃষ্ট করতো। যেখানে অন্যায় কিছু দেখতেন, সেখানেই প্রতিবাদ করতেন শেখ মুজিব। বহুমাত্রিক গুণের অধিকারী হওয়ার কারণে ছোটবেলা থেকে সবার প্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি।

শেখ লুৎফর রহমান এবং সায়েরা খাতুনের আদরের খোকা, টুঙ্গিপাড়ার শেখ মুজিবের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। স্কুল জীবন থেকে তিনি বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে লাগলেন। যখন একটু বড় হলেন, নেতা হয়ে উঠলেন; তখন বুঝতে পারলেন বাংলার মানুষের মুক্তির একমাত্র উপায় পাকিস্তানিদের বিতাড়ন। তখন মানুষকে জাগিয়ে তোলার জন্য তিনি ছুটে বেড়ান বাংলার আনাচে-কানাচে, পথে-প্রান্তরে। এ সময়ে শহর-বন্দর, গ্রাম-বাংলার মানুষ তাকে অনেক নামে ডেকেছে। এর মধ্যে তার কাছে সবচেয়ে প্রিয় ছিল ‘মুজিব ভাই’।

১৯৬৬ সাল থেকে তার নামের আগে তরুণ সমাজ ‘সিংহশার্দূল’, ‘বঙ্গশার্দূল’ ইত্যাদি খেতাব জুড়ে দিতে থাকে। তবে ‘মুজিব ভাই’, ‘শেখের বেটা’, ‘বাংলার মুজিব’, ‘শেখ মুজিব’, ‘বঙ্গশার্দূল’, ‘সিংহশার্দূল’- এ সব ছাপিয়ে তিনি হয়ে উঠলেন বাংলার বন্ধু। বাংলাদেশের মানুষের বন্ধু। আর সবকিছু ছাপিয়ে বিশ্বের কাছে তিনি হয়ে ওঠেন ‘বঙ্গবন্ধু’। এ উপাধি তিনি এমনি এমনি পাননি। এর পিছনে রয়েছে সংগ্রামমুখর ইতিহাস। বাংলার প্রাণের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তারের পর ফুঁসে ওঠে বাংলার মানুষ। তৎকালীন শাসক আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে রাজপথে নামে ছাত্র-জনতা। উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো দেশ। আন্দোলনের দাবানল দেখে আঁতকে ওঠে স্বৈরাচারের চেয়ার। মামলা থেকে শেখ মুজিবুর রহমানসহ অভিযুক্তদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী।

শেখ মুজিবুর রহমান বাংলার মানুষের খাদেম বা সেবক হিসেবে ‘তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির সাধনায়’ নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। ৬ দফার বক্তব্য জনগণের কাছে ব্যাখ্যা করতে বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন জেলায় জনসভা করেন। এই জনসভায় প্রচুর জনসমাগম হয়। আইয়ুবের তাবেদার গভর্নর মোনায়েম খান তার সভাসমাবেশে বলেন, ‘শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র করছেন।’ পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র সব সময়েই তাকে ঘিরে রেখেছিলো। সংগ্রাম-আন্দোলনে বাংলার মানুষকে দাবিয়ে রাখতে শেখ মুজিবুর রহমানকে শত শতবার কারাগারে পাঠায় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী।

১৯৬৮ সালের ৩ জানুয়ারি আইয়ুব সরকার শেখ মুজিবুর রহমানকে ১ নম্বর আসামি করে মোট ৩৫ জনের বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য’ মামলা করে। এটি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে বেশি পরিচিতি পায়। ১৯৬৯ সালে গঠিত কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী ছাত্র আন্দোলন শুরু করে। এই গণআন্দোলনে কেন্দ্রীয় সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে বঙ্গবন্ধুসহ অন্যান্য আসামিকে মুক্তিদানে বাধ্য হয়। পাকিস্তানে ২৩ বছর শাসনামলে বঙ্গবন্ধু ১৮ বার জেলে গিয়েছেন এবং সাড়ে ১১ বছর কারাভোগ করেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুকে সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। সেই সমাবেশে শেখ মুজিবুর রহমানকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

১৯৭০ সালের ৫ ডিসেম্বর জনগণের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঘোষণা দেন আজ হইতে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির নাম ‘পূর্ব পাকিস্তানে’র পরিবর্তে শুধুমাত্র ‘বাংলাদেশ’। অবশেষে ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ৭ মার্চ রেসকোর্সের জনসমুদ্র থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ বঙ্গবন্ধুর ডাকে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা বাংলা।

সেই জাতির পিতাকে ষড়যন্ত্রকারীরা হত্যা করে সমাহিত করেছিল গোপালগঞ্জের নিভৃত গ্রাম টুঙ্গিপাড়ায়। তারা ভেবেছিল, এই সমাহিত করার মধ্য দিয়ে গোটা বাঙালি জাতিকে নিঃশেষ করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু সেই টুঙ্গিপাড়া থেকে দুর্জয় বাঙালিকে জাতির পিতা এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগাচ্ছেন এবং যুগে যুগে প্রেরণা জুগিয়ে যাবেন।

বিএনএ/এমএফ

Loading


শিরোনাম বিএনএ