বিএনএ,ঢাকা:চলচ্চিত্রের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সঠিক ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।সমৃদ্ধ ও আধুনিক আর্কাইভ গড়ে তোলাসহ তৃণমূল পর্যায়ে চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
রোববার (১৭ জানুয়ারি) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন,চলচ্চিত্রকে টিকিয়ে রাখার জন্য কাজ করছে সরকার।পরিবার নিয়ে যাতে দেখা যায় নির্মাতাদের সিনেমাগুলো সেভাবেই তৈরি করতে হবে। শিশুদের জন্যও সিনেমা তৈরি করতে হবে যেন তারা সিনেমা দেখে শিক্ষা নিয়ে জীবনকে প্রস্তুত করতে পারে।ঐতিহ্য ধরে রাখতে ও পুরানো সিনেমাগুলো পুনরুদ্ধারে ফিল্ম আর্কাইভ আধুনিক করা হচ্ছে। বন্ধ হযে যাওয়া সিনেমা হলগুলো শুধু চালু নয়, আধুনিক করে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।সিনেমার প্রতি তরুন সমাজের আগ্রহ বেড়েছে জানিয়ে এ প্রবণতাকে সাধুবাদ জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশটাকে সমৃদ্ধ করার জন্য জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পরপরই বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন। এফডিসির উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছিলেন, কিন্তু সম্পন্ন করে যেতে পারেননি। ১৫ আগস্ট বাঙালির জীবনটাকেই পাল্টে দিয়েছে। এরপর বাঙালির সংস্কৃতিটাই নষ্ট হতে বসেছিল। জাতির পিতার অধরা কাজগুলো সম্পন্ন করাই বর্তমান সরকারের দায়িত্ব বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
সরকার প্রধান বলেন, উপস্থিত থেকে এই পুরস্কার দেয়ার ইচ্ছা থাপকলেও করোনা ভাইরাসের কারণে একরকম বন্দি জীবনযাপন করতে হচ্ছে। ভার্চুয়ালি যোগদান করতে হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ হওয়ার কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। করোনার হাত থেকে দেশে মুক্তি পাবে, সবাই আবারও এক হতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এছাড়া, শিল্পী ও কলাকুশলীদের যে কোন বিপদে সহায়তার জন্য শিগগিরই বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী কল্যান ট্রাস্ট করা হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
২০১৯ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্য থেকে ২৫টি ক্যাটাগরিতে ৬টি যুগ্মসহ ৩১ জনকে দেয়া হয়েছে জাতীয় পুরস্কার। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শিল্পী ও কলাকুললীকে সম্মাননা চেক, সনদ ও স্মারক তুলে দেন তথ্যমন্ত্রী ডক্টর হাসান মাহমুদ।এর সঙ্গে চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য মাসুদ পারভেজ (সোহেল রানা) ও কোহিনুর আক্তার সুচন্দা এ বছর আজীবন সম্মাননায় অভিষিক্ত হয়েছেন।
যারা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৯ পেলেন তারা হলেন,শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র (যুগ্ম): ন ডরাই ও ফাগুন হাওয়ায়,শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র: নারী জীবন,শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র: যা ছিলো অন্ধকারে,শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক: তানিম রহমান অংশু (ন ডরাই),শ্রেষ্ঠ অভিনেতা প্রধান চরিত্রে: তারিক আনাম খান (আবার বসন্ত,শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী প্রধান চরিত্রে: সুনেরাহ বিনতে কামাল (ন ডরাই),শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পার্শ্ব চরিত্রে: এম ফজলুর রহমান বাবু (ফাগুন হাওয়ায়),শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পার্শ্ব চরিত্রে: নারগিস আক্তার (হোসনে আরা) (মায়া দ্য লস্ট মাদার)
শ্রেষ্ঠ অভিনেতা/অভিনেত্রী খল চরিত্রে: জাহিদ হাসান (সাপলুডু),শ্রেষ্ঠ শিশু শিল্পী (যুগ্ম) নাইমুর রহমান আপন (কালো মেঘের ভেলা) ও আফরীন আক্তার (যদি একদিন),শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক: মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ইমন (মায়া দ্য লস্ট মাদার),শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালক: হাবিবুর রহমান (মনের মতো মানুষ পাইলাম না),শ্রেষ্ঠ গায়ক: মৃনাল কান্তি দাস (শাটল ট্রেন)
শ্রেষ্ঠ গায়িকা (যুগ্ম): মমতাজ বেগম (মায়া দ্য লস্ট মাদার) ও ফাতিমা-তুয-যাহরা ঐশী (মায়া দ্য লস্ট মাদার),শ্রেষ্ঠ গীতিকার (যুগ্ম): নির্মলেন্দু গুণ (কালো মেঘের ভেলা) ও ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী (কবি কামাল চৌধুরী) (মায়া দ্য লস্ট মাদার),শ্রেষ্ঠ সুরকার (যুগ্ম): প্লাবন কোরেশী (আব্দুল কাদির) (বাড়ির ওই পূর্বধারে) ও সৈয়দ মো. তানভীর তারেক (মায়া দ্য লস্ট মাদার)
শ্রেষ্ঠ কাহিনিকার: মাসুদ পথিক (মাসুদ রানা) (মায়া দ্য লস্ট মাদার),শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার: মাহবুব উর রহমান (ন ডরাই),শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা: জাকির হোসেন রাজু (মনের মতো মানুষ পাইলাম না)
শ্রেষ্ঠ সম্পাদক: জুনায়েদ আহমদ হালিম (মায়া দ্য লস্ট মাদার),শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক (যুগ্ম): মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বাসু ও মো. ফরিদ আহমেদ (মনের মতো মানুষ পাইলাম না),শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক: সুমন কুমার সরকার (ন ডরাই),শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক: রিপন নাথ (ন ডরাই),শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজ-সজ্জা: খোন্দকার সাজিয়া আফরিন (ফাগুন হাওয়ায়) এবং শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান: মো. রাজু (মায়া দ্য লস্ট মাদার)।
বিএনএনিউজ/আরকেসি