29 C
আবহাওয়া
৮:৫২ পূর্বাহ্ণ - এপ্রিল ২০, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ৫৫ হাজার রোহিঙ্গা ভোটার: দুদকের দুই মামলায় ১১ জন আসামি

৫৫ হাজার রোহিঙ্গা ভোটার: দুদকের দুই মামলায় ১১ জন আসামি

দুদকের মামলা

বিএনএ,চট্টগ্রাম: ২০১৫ সালের হালনাগাদ ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাসহ ৫৫ হাজার ৩১০ জনকে অবৈধভাবে ভোটার তালিকায় অর্ন্তভূক্ত করায় নির্বাচন কমিশনের পরিচালকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ঘটনার সময় তারা সকলেই চট্টগ্রামে কর্মরত ছিলেন। এছাড়া রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে ভোটার তালিকায় সংযুক্ত করতে ডেল ৬৩০ নামীয় একটি নির্বাচন কমিশনের একটি ল্যাপটপ আত্মসাৎ করেন অভিযুক্তরা। এ ল্যাপটপ ছাড়া আরও কয়েকটি ল্যাপটপ ব্যবহার করে অবৈধভাবে ভোটার করার বিষয়টি জানতে পেরেও ঊর্ধ্বতনরা পদক্ষেপ নিতে গাফিলতি করেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

বুধবার (১৬ জুন) চট্টগ্রামের দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে মোট দু’টি মামলা দায়ের হয়। এর মধ্যে ৫৫ হাজার ৩১০ জনকে অবৈধভাবে ভোটার করার নিয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) শরীফ উদ্দিন। অন্যদিকে এক রোহিঙ্গা দম্পতিকে অবৈধভাবে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করায় আলাদা আরেকটি মামলা করেছেন একই কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সুভাষ চন্দ্র দত্ত। দুই মামলায় মোট ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে।

ডিএডি শরীফ উদ্দিনের দায়ের করা মামলার আসামিরা হলেন- চট্টগ্রাম জেলা সাবেক সিনিয়র নির্বাচন অফিসার ও বর্তমানে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের পরিচালক খোরশেদ আলম, জেলা নির্বাচন অফিসের সাবেক উচ্চমান সহকারী মাহফুজুল ইসলাম, সাবেক অফিস সহায়ক রাসেল বড়ুয়া, পাঁচলাইশ থানা নির্বাচন অফিসের টেকনিক্যাল এক্সপার্ট মোস্তাফা ফারুক।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন অফিসের কর্মরত ছিলেন খোরশেদ আলম। এ সময় মিরসরাই উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে কাজের জন্য Dell Latitude 630, Service Tag Number-GYSPSIS- 4214 নম্বর সম্বলিত ল্যাপটপটি পাঠানো হয়। কাজ শেষে মিরসরাই উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ওই ল্যাপটপটি ফেরত দিলে সেটি আর জেলা নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে জমা হয়নি।

সেই ল্যাপটপ দিয়েই খোরশেদ আলমের মদদে জালিয়াতিতে নেমে পড়েন মাহফুজুল ইসলাম, রাসেল বড়ুয়া ও মোস্তফা ফারুক। অবৈধভাবে রোহিঙ্গা নাগরিকদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি করে হাতিয়ে নেন বিপুল পরিমাণ টাকা। এভাবে তারা ৫১ হাজার ৩১০ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশের ভোটার বানান। এমনকি ল্যাপটপটি হারিয়ে যাওয়ার বিষয়ে কোনো থানায় জিডিও করা হয়নি।

এজাহার সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার জাদিমুরা ২৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশে পাহাড়ে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয় রোহিঙ্গা ডাকাত নুর আলম। তার কাছ থেকে পাওয়া যায় বাংলাদেশের ভোটার আইডি কার্ড।

কীভাবে রোহিঙ্গা ডাকাতের হাতে ভোটার আইডি কার্ড? এই প্রশ্নের তদন্ত করতে গিয়েই বের হয় থলের বিড়াল। সেই সঙ্গে হদিস পাওয়া যায় ‘হারিয়ে যাওয়া’ ল্যাপটপের। সেসময় তদন্ত কমিটিতে ছিলেন খোরশেদ আলম। ডাকাত নিহতের ঘটনায় তিনি একটি প্রতিবেদনও দাখিল করেন। কিন্তু প্রতিবেদনে ল্যাপটপ হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান।

দুদক বলছে, এ ঘটনায় দায়ি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বাঁচাতে খোরশেদ আলম নিজ দায়িত্ব লঙ্ঘন করেন। অবৈধ যোগসাজশের ভিত্তিতে পক্ষাবলম্বন করেন। তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২১০, ৪০৯ ও ১০৯ ধারায় মামলাটি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন বলেন, অভিযুক্তরা পরস্পর যোগসাজশে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ৫৫ হাজার ৩১০ রোহিঙ্গাকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। এসব কাজ সহজে করতে নির্বাচন কমিশন থেকে আত্মসাৎ করে একটি ল্যাপটপও। একই সঙ্গে অবৈধ ভোটার তালিকায় ব্যবহার করেছে আরও কয়েকটি ল্যাপটপও। তদন্তে আরও কেউ জড়িত পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে- যোগ করেন এই কর্মকর্তা।

এদিকে রোহিঙ্গা দম্পতিকে অবৈধভাবে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সুভাষ চন্দ্র দত্তের দায়ের করা মামলায় সাতজনকে আসামি করা হয়েছে। এরা হলেন- চট্টগ্রামের ডবলমুরিং নির্বাচন অফিসের অফিস সহায়ক মো. জয়নাল আবেদীন, জেলা নির্বাচন অফিসের অফিস সহায়ক মো. নূর আহম্মদ, টেকনাফ উপজেলা নির্বাচন অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর (অস্থায়ী) নাঈম উদ্দীন, মুছনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ওবায়দুল্লাহ, কক্সবাজারের ঈদগাঁও থানার পূর্ব গোমতলীর সাবেক প্রধান শিক্ষক শামসুর রহমান, কক্সবাজারের দক্ষিণ পাহাড়তলীর ফয়জউল্লাহ ও মাহমুদা খাতুন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ফয়জুল্লাহ একজন আত্মস্বীকৃত রোহিঙ্গা হলেও ভোটার তালিকায় ভুয়া নাম অর্ন্তভূক্ত করেন তিনি। কক্সবাজার নির্বাচন অফিসের ফরম নম্বর থাকলেও তিনি মূলত অবৈধভাবে ভুয়া নিবন্ধন ফরমের মাধ্যমে ভোটার তালিকায় অর্ন্তভূক্ত হন। একইভাবে রোহিঙ্গা ফয়জুল্লাহর স্ত্রী মাহমুদাও কক্সবাজার নির্বাচন অফিসের তালিকায় ভুয়া ভোটার হন। কিন্তু দুদকের তদন্তে দেখা যায়, কক্সবাজার উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর নাঈম উদ্দীন ভুয়া ফরমে নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে তাদের নিবন্ধন ফরম আপলোড করেন। এ দুই জনের যাবতীয় ফরম পূরণ ও ভুয়া কাগজপত্র তৈরী করে দেন ডবলমুরিং থানা নির্বাচন কার্যালয়ের অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদীন।

আর কক্সবাজার নির্বাচন অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর নাঈম উদ্দীন থেকে সব ডাটা সংগ্রহ করেন জয়নালের বোন জামাই চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের অফিস সহায়ক নুর আহমেদ। রোহিঙ্গা ফয়জুল্লাহ ও তার স্ত্রী মাহমুদা খাতুনকে কক্সবাজারে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর নাঈম উদ্দীনের কাছে নিয়ে আসেন দালাল ওবায়দুল্লাহ ও ঈদগাঁও পূর্ব গোমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুর রহমান।

মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, মূলত তারা একে অপরের সহযোগিতায় অবৈধভাবে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে অসৎ উদ্দেশ্যে অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণার আশ্রয়ে ভুয়া পরিচয়, নাম ঠিকানা ব্যবহার করে ভোটার তালিকায় অর্ন্তভূক্ত করে দণ্ডবিধি’র ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা সহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছে।

দুদক সমন্বিত কার্যালয়ের চট্টগ্রাম-১ এর উপ সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন বলেন, রোহিঙ্গাদের ভোটার করতে একটি সংঘবদ্ধচক্র কাজ করেছে। তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট প্রমাণও মিলেছে। ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বিএনএনিউজ/মনির

Loading


শিরোনাম বিএনএ