26 C
আবহাওয়া
৭:৫৭ অপরাহ্ণ - জুন ১, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » শূন্য মাঠে নাহিদ-আখতার! কাকে সতর্ক করলেন হাসনাত?

শূন্য মাঠে নাহিদ-আখতার! কাকে সতর্ক করলেন হাসনাত?


বিএনএ,ডেস্ক :চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি নানা জল্পনা ও রাজনৈতিক বিতর্কের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ছায়ায় আত্মপ্রকাশ করে নতুন রাজনৈতিক দল— জাতীয় নাগরিক পার্টি সংক্ষেপে এনসিপি। রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংসদ ভবন চত্তরে জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এনসিপির এই আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান ছিল একটা জনসমুদ্র! এনসিপির আত্মপ্রকাশের মধ্যদিয়ে বিলুপ্ত হয় জুলাই আন্দোলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং আগষ্ট পরবর্তীতে গঠিত রাজনৈতিক প্লাটফরম জাতীয় নাগরিক কমিটি।

YouTube player

পরবর্তীতে ১১ মার্চ হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বিলাসী ইফতার পার্টির আয়োজন করে নানা আলোচনা- সমালোচনার জন্ম দেয়। গত ১৪ই এপ্রিল পয়লা বৈশাখের সকালে রাজধানীর ইস্কাটনের নেভি গলিতে বৈশাখ উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এনসিপি।

বৈশাখ উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানে এনসিপি’র নাহিদ ইসলাম বলেন, বিচার, সংস্কার ও গণপরিষদ নির্বাচনের এজেন্ডা সামনে নিয়ে এগোচ্ছে এনসিপি। জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলো এখন আর সমভাবে ধারণ করছে না।

এনসিপির এই আয়োজনের সমাবেশ স্থল ফাঁকা ছিল। সব মিলিয়ে শ’খানেক নেতাকর্মী ও দর্শক উপস্থিত ছিল। যাদের ডাকে হ্যামিলনের বাঁশির সূরের মতো মূহুর্তে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা উপস্থিত হতেন তারা কোথায় গেল? তাহলে কী দিন দিন চুপসে যাচ্ছে এনসিপি? বৈশাখের তপ্ত আবহাওয়ায় এমন প্রশ্ন যখন রাজনৈতিক অঙ্গনে ঘুরপাক খাচ্ছে, তখন দলটির দক্ষিণাঞ্চলের মূখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর এক ফেসবুক পোস্ট রাজনৈতিক অঙ্গনে যেন বারুদের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।

১৫ এপ্রিল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে হাসনাত আবদুল্লাহ লিখেছেন, ‘যেদিন থেকে আমাদের আওয়ামীবিরোধী অবস্থান এবং কম্প্রোমাইজের রাজনীতির বিরোধিতাকে “শিষ্টাচারবহির্ভূত” বলা শুরু হয়েছে, সেদিন থেকেই আওয়ামী লীগের মিছিল বড় হতে শুরু করেছে। যাঁরা কম্প্রোমাইজের রাজনীতি করছেন, তাঁদের সতর্ক করছি—অতিশিগগিরই আওয়ামী লীগ নিয়ে সিদ্ধান্তে আসুন। না হলে আপনারা করবেন কম্প্রোমাইজের রাজনীতি আর আমি করব শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণ। আমি শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণ শুরু করলে নিতে পারবেন না। সাবধান হয়ে যান।’

প্রসঙ্গত, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পদত্যাগের দাবিতে রাজধানীতে ঝটিকা মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ। ১৫ এপ্রিল মঙ্গলবার সকালে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ঢাকা ১১ আসন, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে এই মিছিল করেন তারা।

নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী তার ফেসবুকে মিছিলটির ভিডিও পোস্ট করে লিখেন, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাজহার আনামের নেতৃত্বে স্থানীয় নেতাকর্মীদের আয়োজনে আজ বাড্ডা-ভাটারা-রামপুরা প্রধান সড়কে এই প্রতিবাদী মিছিল করা হয়।

আওয়ামী লীগের এই মিছিলটির ভিডিও ভাইরাল হয়। এরপর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফেসবুকে ওই পোস্ট দিয়েছেন হাসনাত আবদুল্লাহ।

যদিও ফেসবুক পোস্টে হাসনাত আসলে কাদের দিকে ইঙ্গিত করেছেন তা খোলাসা করেনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অনেকেই আপোসের রাজনীতি করছেন। পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রয়োজনে আমি তাঁদের নাম প্রকাশ করব। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে মানুষের রক্তের সঙ্গে কোনো বেইমানি মেনে নেওয়া হবে না।’

প্রসঙ্গত, গত ২০ মার্চ মধ্যরাতে ফেসবুকে হাসনাত আবদুল্লাহ লেখেন— কিছুদিন আগে আমি আপনাদের বলেছিলাম যে, ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নামে নতুন একটি ষড়যন্ত্র নিয়ে আসার পরিকল্পনা চলছে। এই পরিকল্পনা পুরোপুরি ভারতের। সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরিন শারমিন, তাপসকে সামনে রেখে এই পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে।

হাসনাত লিখেন আমি সহ আরও দুইজনের কাছে ক্যান্টনমেন্ট থেকে এই পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয় ১১ মার্চ দুপুর ২:৩০এ। আমাদেরকে প্রস্তাব দেওয়া হয় আসন সমঝোতার বিনিময়ে আমরা যেন এই প্রস্তাব মেনে নিই। আমাদেরকে বলা হয়- ইতোমধ্যে একাধিক রাজনৈতিক দলকেও এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে- তারা শর্তসাপেক্ষে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনে রাজি হয়েছে। একটি বিরোধী দল থাকার চেয়ে একটি দুর্বল আওয়ামী লীগসহ একাধিক বিরোধী দল থাকা না-কি ভালো। ফলশ্রুতিতে আপনি দেখবেন গত দুইদিন মিডিয়াতে আওয়ামীলীগের পক্ষে একাধিক রাজনীতিবিদ বয়ান দেওয়া শুরু করেছে।

আমাদেরকে আরো বলা হয়-রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ যাদের দিয়ে করা হবে, তারা এপ্রিল-মে থেকে শেখ পরিবারের অপরাধ স্বীকার করবে, হাসিনাকে অস্বীকার করবে এবং তারা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ করবে এমন প্রতিশ্রুতি নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হবে।

আমাদেরকে এই প্রস্তাব দেওয়া হলে আমরা তৎক্ষণাৎ এর বিরোধিতা করি এবং জানাই যে, আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের বিচার নিয়ে কাজ করুন।

এর উত্তরে আমাদের বলা হয়, আওয়ামী লীগকে ফিরতে কোন ধরণের বাধা দিলে দেশে যে সংকট সৃষ্টি হবে, তার দায়ভার আমাদের নিতে হবে এবং ‘আওয়ামী লীগ মাস্ট কাম ব্যাক’।

আলোচনার এক পর্যায়ে বলি-যেই দল এখনো ক্ষমা চায় নাই, অপরাধ স্বীকার করে নাই,সেই দলকে আপনারা কিভাবে ক্ষমা করে দিবেন!

অপরপক্ষ থেকে রেগে গিয়ে উত্তর আসে, ‘ইউ পিপল নো নাথিং। ইউ ল্যাক উইজডোম এন্ড এক্সপিরিয়েন্স। উই আর ইন দিজ সার্ভিস ফর এটলিস্ট ফোর্টি ইয়ার্স। তোমার বয়সের থেকে বেশি। তাছাড়া আওয়ামী লীগ ছাড়া ‘ইনক্লুসিভ’ ইলেকশন হবে না।’

উত্তরে বলি, ‘আওয়ামীলীগের সাথে কোন ইনক্লুসিভিটি হতে পারে না।আওয়ামীলীগকে ফেরাতে হলে আমাদের লাশের উপর দিয়ে ফেরাতে হবে।আওয়ামী লীগ ফেরানোর চেষ্টা করা হলে যে সংকট তৈরি হবে, তার দায়ভার আপনাদের নিতে হবে’। পরে—মিটিং অসমাপ্ত রেখেই আমাদের চলে আসতে হয় লিখেন হাসনাত আব্দুলাহ।

হাসনাত আব্দুল্লাহর দাবি বিষয়ে সেনাবাহিনীর প্রতিক্রিয়া জানায়নি আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। তবে ‘সুইডেনভিত্তিক নেত্র নিউজ ২৩শে মার্চ সেনাসদরকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, হাসনাত আবদুল্লাহর পোস্ট ‘সম্পূর্ণ রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি বৈ অন্য কিছু নয়’।

দীর্ঘদিন নিরব থাকার পর এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ আবারও নতুন করে সরব হয়েছেন। আগে আওয়ামীকে পূর্নবাসনের জন্য সেনাবাহিনী প্রধানকে ঈঙ্গিত করে পোস্ট দিলেও, এবার বিএনপিকে ঈঙ্গিত করে হুশিয়ারিমূলক পোস্ট দিয়েছে হাসনাত।
আর ‘শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণ’ তথা বেয়াদবি করা সংক্রান্ত হাসনাতের পোস্টকে কেন্দ্র করে বাংলা নববর্ষের শুরুতে দেশের রাজনীতিতে যে ‘ঝড়’ উঠেছে, তাতে কোন দল লন্ডভন্ড হবে, তা দেখতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে-এমনটাই মনে করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বিএনএ/ সৈয়দ সাকিব,ওজি

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ