36 C
আবহাওয়া
৭:৪৮ অপরাহ্ণ - এপ্রিল ২০, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » আত্মহত্যার কথা মানতে নারাজ ফারদিনের বাবা-মা

আত্মহত্যার কথা মানতে নারাজ ফারদিনের বাবা-মা

ফারদিনের আত্মহত্যা উল্লেখ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল

বিএনএ: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফারদিন নূর পরশ নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তদন্ত সংস্থার এমন ভাষ্যে মানতে নারাজ ফারদিনের বাবা-মা।

বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) ফারদিনের বাবা কাজী নূর উদ্দিন বলেন, ‘তার ছেলে আত্মহত্যা করতে পারে না। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে হত্যার পর এখন আত্মহত্যার নাটক সাজানো হচ্ছে।

ফারদিনের সহপাঠীরাও তদন্তের কিছু জায়গায় ‘গ্যাপ’ ও ‘অস্পস্টতার’ কথা বলেছেন। তারা গ্যাপ ও অস্পষ্টতাগুলো পরিষ্কার করার জন্য তদন্ত সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে আহ্বান জানান। বৃহস্পতিবার দুপুরে সহপাঠীরা এই বক্তব্য দেয়ার আগে প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে ডিবির প্রধান হারুন অর রশীদসহ তদন্ত-সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা ফারদিনের সহপাঠীদের পুরো তদন্তের নানা বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন বলে জানান সহপাঠীরা।

পরে গণমাধ্যমে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, ফারদিনের মানসিক অবস্থার কথা আমরা আপনাদের বলেছি। তিনি এটেম্পট নিয়েছিলেন বাবুবাজার ব্রিজের ওখানে, কিন্তু সেখানে অনেক লোক থাকায় ঝাঁপ দেননি। সেখান থেকে গেলেন জনসন রোড, সেখান থেকে গুলিস্তান, এরপর গেলেন যাত্রাবাড়ী, যাত্রাবাড়ী থেকে লেগুনায় করে সুলতানা কামাল ব্রিজের ওখানে গেছেন।

হারুন অর রশীদ বলেন, ৩৮ দিন তদন্তের পর তারা বলেছেন এটা একটা সুইসাইডাল ঘটনা, কেউ তাকে মারেনি। আজকে বুয়েটের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ ধরে সব তথ্য-প্রমাণ দেখানো কথা উল্লেক করে তিনি বলেন, সব যুক্তি পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে উপস্থাপন করা হয়েছে।

ফারদিনের আত্মহত্যার কথাটি বিশ্বাসও করতে পারছে না তার পরিবার। বাবা কাজী নূর উদ্দিন রানা তদন্তে অসন্তুষ্টি জানিয়ে বলেন, ছোটবেলা থেকেই তার ছেলেরা অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছে। সব ধরনের পরিস্থিতির সঙ্গে চলতে পারা তার ছেলে আত্মহত্যা করতে পারে না। তাকে পরিকল্পিতিভাবে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্যই আত্মহত্যার কথা বলা হচ্ছে। এজন্য শুরু থেকেই মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয়েছে। সবাইকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে।

কারী নূর উদ্দিন বলেন, ঘটনার দিন বুয়েটের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার আগে সে চুল কাটিয়েছিল এবং শেভ করেছিল। আত্মহত্যার আগে কি কেউ চুল কাটায়, শেভ করে? আমি ফারদিনের লাশ দেখেছি, তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল।’ তিনি নিজেই সাংবাদিকদের সামনে সুলতানা কামাল ব্রিজ থেকে লাফ দিয়ে কোথায় আঘাত লাগে তা দেখানোর কথা জানান।

বুয়েট প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে ফারদিনের বাবা বলেন, ‘বুয়েটের ভিসি এবং প্রশাসন কি জানত, ফারদিন আত্মহত্যা করেছে, যে কারণে তারা আমার পরিবারকে সান্ত্বনা পর্যন্ত দেয়নি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেউ আমাদের সঙ্গে দেখাও করেননি। বলেন তার ছেলে বুয়েটে ভর্তি না হলে এমন পরিণতি হতো না।

এদিকে ডিবি কার্যালয়ে তদন্ত-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা শেষে বুয়েট শিক্ষার্থী তাহমিদ হোসেন বলেন, ‘তদন্তের যে আলামতগুলো ছিল, ডিবির তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তা দেখিয়েছেন। আলামতগুলো তাদের কাছে প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়েছে। তবে কিছু কিছু জায়গায় গ্যাপ ও অস্পস্টতা রয়েছে বলেও জানান তিনি। এগুলো নিয়ে আরও পরিষ্কার হওয়া দরকার আছে। এগুলো নিয়ে তারা সামনে আরও কাজ করবে বলে আশা করেন তিনি।

গ্যাপের বিষয়ে তাহমিদ হোসেন বলেন, একটা গ্যাপ হলো, ব্রিজের যে পাড়ে নামিয়ে দেয়া হয়েছিল, সেখান থেকে যে মাঝখানে ব্যাক করেছে, ওই জায়গায় তার সঙ্গে কে ছিল বা সে একদম একা ছিল কি না-এ বিষয় পরিষ্কার নয়। লেগুনাচালক নাকি বলেছেন, দুজনকে নামানো হয়েছিল। তার সঙ্গে আরেকজন নেমেছিলেন। কে নেমেছিলেন, সেটা পরিষ্কার নয়। এর বাইরে অন্য জিনিসগুলোর কংক্রিট এভিডেন্স তারা টু অ্যান এক্সটেন্ট দেখিয়েছেন। বলেন, ডিবি তাদের কিছু সারকামস্ট্যানশিয়াল অ্যাভিডেন্স দেখিয়েছেন, যা দেখে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে মনে হতে পারে। কিন্তু ওই রকম কংক্রিট, সলিড কোনো তথ্য, অতটা তারা দেখাননি। আত্মহত্যার মোটিভটা পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায় কি না, এ জায়গায় ভবিষ্যতে কাজ করা যেতে পারে। ডিবি বলেছে, তারা এটি নিয়ে কাজ করবে।

বুয়েট ক্যাম্পাসে যাওয়ার কথা বলে গত ৪ নভেম্বর ডেমরার কোনাপাড়ার বাসা থেকে বের হন ফারদিন। ওই দিনই তিনি নিখোঁজ হন। নিখোঁজের তিন দিন পর ৭ নভেম্বর বিকেলে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ।

চার্জশিট থেকে বুশরাকে অব্যাহতি দেয়া হবে

আলোচিত এই ঘটনার পর ফারদিনের বাবার করা মামলায় আসামি করা হয়েছিল আমাতুল্লাহ বুশরা নামে তার এক বান্ধবীকে। নিখোঁজের দিন রাত পৌনে ১০টা পর্যন্ত ফারদিন তার এই বান্ধবীর সঙ্গেই ঘুরে বেড়িয়েছেন। যদিও প্রাথমিক তদন্তের পর থেকেই ঘটনার সঙ্গে বুশরার কোনো সম্পৃক্ততা না পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে মামলায় আসামি করার পর পুলিশ তাকে রিমান্ডে নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে আদালতের মাধ্যমে বুশরাকে পাঠানো হয় কারাগারে।

ডিবি প্রধান জানান, এই ঘটনায় বুশরার কোনো সম্পৃক্ততা তারা পাননি, এটা আমরা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করবেন। এরপর বুশরাকে ছাড়া হবে কি না সেটা আদালত সিদ্ধান্ত জানাবেন।

বিএনএ/এ আর

Loading


শিরোনাম বিএনএ