ময়মনসিংহ প্রতিনিধি : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, হাত পা বাঁধা গৃহবধু পুকুরের পানিতে হাবুডুবি খাচ্ছে এক নারী। ওই ভিডিওতে একজন নারীকে বলতে শুনা যায়, ক্যামেরা রেডি অ্যাকশন। পুকুরের পানি থেকে ঘাটে উঠলে এক যু্বক বাঁশের কঞ্চি দিয়ে আঘাত করছে।
মধ্যযুগীয় কায়দায় বউ পেটানোর ঘটনাটি নেত্রকোনা সদর উপজেলার আমতলী ইউনিয়নের ঝগড়াকান্দা গ্রামের। ঘটনার তারিখ গত শুক্রবার (১৩ মে)।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিও সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানায়, নির্যাতনের শিকার গৃহবধুর নাম শিউলি আক্তার (১৯)। তিনি ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ ইউনিয়নের চরশিহারি গ্রামের রিকশা চালক সাইদুল ইসলামের মেয়ে।
নির্যাতনের শিকার গৃহবধুকে তার বাবার বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জে ফেলে রেখে যাবার সময় গৃহবধু চিৎকার করলে স্থানীয়রা স্বামী রাজন মিয়া ওরফে রফিকুল ইসলামকে আটক করে পুলিশ সোপর্দ করেন। এই ঘটনার পর রবিবার (১৫ মে) দুপুরে গৃহবধু শিউলি আক্তার বাদী হয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় আটক রফিকুল ইসলামকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। শিউলি আক্তারের অভিযোগ যৌতুকের জন্য নির্যাতন করা হয়েছে।
রাজন মিয়া ওরফে রফিকুল ইসলাম নেত্রকোনা সদর উপজেলার আমতলী ইউনিয়নের ঝগড়াকান্দা গ্রামের মৃত লালচাঁন মিয়ার ছেলে।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) জহিরুল হক মুন্না বলেন, মামলা দায়েরের পর গ্রেপ্তার রফিকুল ইসলামকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অপর আসামীদের গ্রেপ্তারে অভিযানে চলছে বলেও জানান তিনি।
মামলার এজাহার ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর পারিবারিকভাবে শিউলি আক্তার ও রফিকুল ইসলামের বিয়ে হয়। সে সময় ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দেয়া হলেও গত রমজানের আগে থেকে আবারও যৌতুক চেয়ে শিউলির ওপর নির্যাতন শুরু করে রাজন। শিউলির বাবা একটি মোবাইল কিনে দেন রাজনকে। এরপর ২০ হাজার টাকা ও ঘরের আসবাব যৌতুক হিসেবে চাইলে তা দিতে অস্বীকার করে শিউলি। এরপরই শুরু হয় শিউলির ওপর নির্যাতন।
শিউলি জানায়, ঘটনার দিন শুক্রবার (১৩ মে) শিউলি আক্তারের স্বামী রাজনসহ কয়েকজন মিলে তাকে মারধর করেন। একপর্যায়ে শিউলির হাত-পা বেঁধে মারধর শেষে শরীরে মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে দেয়া হয়। এ সময় পানি খেতে চাইলে মরিচের গুঁড়া মিশিয়ে পানি দেয়া হয় শিউলিকে। পানি খেয়ে যন্ত্রণায় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় হামাগুড়ি দিয়ে বাড়ির পাশে পুকুরের পানিতে পড়ি। ওই সময় ভিডিও ধারণ করা হয়।
শিউলি আক্তার আরও বলেন, বেধড়ক মারধরের পর, তাকে হাত-পা বেঁধে রাখা হয়। পানি চাইলে মরিচের গুঁড়া মিশিয়ে পানি দেয়া হয়। পরে যন্ত্রণায় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় হামাগুড়ি দিয়ে বাড়ির পাশে পুকুরের পানিতে পড়ে সে। পানি থেকে উঠতে চাইলে তার স্বামী আবারও বাঁশের কঞ্চি মারধর করে। পরে সেই মারধরের ভিডিও তার জা রুমা আক্তার ফোনে ধারণ করে।
বিএনএনিউজ২৪, হামিমুর রহমান,জিএন