বিএনএ, ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্টে নব-নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষ থেকে বিএনপির তিন নেতাকে আমন্ত্রণ জানায়নি। আমন্ত্রণ জানিয়েছে ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট ফাউন্ডেশন। এই আমন্ত্রণ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেছে বিএনপি। বিষয়টি স্পষ্ট করে রোববার (১২ জানুয়ারি) রাতে বিএনপির মিডিয়া সেলের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। দলটি জানিয়েছে, অনুষ্ঠানটি মার্কিন সরকার আয়োজন করে না। এটি ‘জাতীয় প্রার্থনা প্রাতরাশ ফাউন্ডেশন’ আয়োজন করে থাকে, যা একটি নির্দলীয় সংস্থা।
মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মওদুদ হোসেন আলমগীর স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ৬ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিতব্য ‘জাতীয় প্রার্থনা প্রাতরাশ’ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আমন্ত্রণ সম্পর্কে কিছু সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে, বিএনপি মিডিয়া সেলের পক্ষ থেকে আমরা জানাতে চাই যে, অনুষ্ঠানটি মার্কিন সরকার আয়োজন করে না।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জাতীয় প্রার্থনা প্রাতরাশের পক্ষ থেকে, অনুষ্ঠানের সহ-সভাপতি, রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য বেন ক্লাইন এবং ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্য থমাস আর. সুজি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে আমন্ত্রণটি জানিয়েছেন। এ সত্ত্বেও যদি কোনো ব্যক্তি, মিডিয়া সূত্রে প্রকাশিত সংবাদের বিভ্রান্তির কারণ সৃষ্টি করে থাকে, তবে আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট অনুষ্ঠানে মার্কিন নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষ থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
বিষয়টি দ্রুত দেশের গণমাধ্যম ব্রেকিং নিউজ হিসাবে প্রকাশ করে। গণমাধ্যমের টক-শোতেও স্থান পায় ট্রাম্পের এই আমন্ত্রণের খবরটি। সারাদেশে হৈ-চৈ পড়ে যায়। বিএনপি নেতাকর্মীরা বলতে থাকে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে শুধু আওয়ামী লীগের সুসর্ম্পক আছে তা নয়- বিএনপির সঙ্গেও সুসর্ম্পক রয়েছে। এতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে থাকে দলটির কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। কিন্তু এই উচ্ছ্বাস একদিনের মধ্যে চুপসে যায়। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট অনুষ্ঠানের আয়োজনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কোনো সম্পর্ক নেই।
বিএনপি’র বিরোধী পক্ষ বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্টে নব-নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষ থেকে বিএনপির তিন নেতাকে আমন্ত্রণ জানানোর সংবাদ দলটির মিডিয়া উইং থেকে প্রকাশ করা, এক ধরনের জাতীয় রাজনৈতিক প্রতারণা ও রসিকতা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয় প্রার্থনা প্রাতরাশ ১৯৫৩ সাল থেকে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এবং এতে মার্কিন রাষ্ট্রপতি, সিনেটর, কংগ্রেস সদস্য, ব্যবসায়ী এবং ১০০টিরও বেশি দেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানটি ‘জাতীয় প্রার্থনা প্রাতরাশ ফাউন্ডেশন’ আয়োজন করে থাকে, যা একটি নির্দলীয় সংস্থা এবং রাজনৈতিক, সামাজিক ও ব্যবসায়িক অভিজাতদের একত্র হওয়ার, দেখা করার, আলোচনা করার এবং একসঙ্গে প্রার্থনা করার জন্য একটি বিশেষ ফোরাম। যা বিশ্ব শান্তি ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় নিবেদিত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্টে আমন্ত্রিত অতিথি ছাড়াও যে কেউ টিকেট কেটে অংশ নিতে পারে। এবারের টিকেটের সর্বনিম্ম দাম ১৩৪ দশমিক ৪৬ ডলার। ইভেন্ট ব্রাইট নামে একটি প্রতিষ্ঠান এই টিকেট বিক্রি করছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠেয় ‘ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট’ অনুষ্ঠানের সঙ্গে মার্কিন সরকারের কোনো সম্পর্ক নেই বলে ইতিমধ্যে স্পষ্ট করেছেন ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস। দূতাবাসের মুখপাত্র আশা বে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট’ নামে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে না। এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সরকার কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নয়।
বিএনএনিউজ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী/ বিএম