বিএনএ, বিশ্বডেস্ক : নতুন ও বৈপ্লবিক ধরনের এক চিকিৎসার মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের ডাক্তাররা এই প্রথমবারের মতো নিরাময়ের অযোগ্য রক্তের ক্যান্সার বা লিউকেমিয়া রোগ সারিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন।
এজন্য তারা ব্যবহার করেছেন অত্যাধুনিক সেল ইঞ্জিনিয়ারিং পদ্ধতি।
এই পদ্ধতিতে কোষের জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে সেগুলো রোগীর দেহের ক্যান্সার সেলগুলোকে ধ্বংস করার কাজে ব্যবহার করা হয়েছে।
এসব কোষ ক্যান্সার সেলগুলোকে টার্গেট করে আক্রমণ চালায় এবং ভালো কোষের ক্ষতি না করেই সেগুলোকে নির্মূল করে।
এলিসা নামের এক কিশোরীর দেহে এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা চালিয়ে তার শরীর থেকে ক্যান্সার দূর করা হয়েছে।
কিন্তু এর আগে তার দেহে লিউকেমিয়ার প্রচলিত সব চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যর্থ হয়েছিল।
কিন্তু পরীক্ষামূলকভাবে নতুন ওষুধটি প্রয়োগের পর তার দেহে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয়েছে এবং তার দেহের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা পুনরায় সক্রিয় হয়ে ওঠেছে।
এলিসা এখন ক্যান্সার থেকে মুক্ত।
চিকিৎসকরা বলছেন এলিসার দেহে জিনগত পরিবর্তনের যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে, এই চিকিৎসা বিজ্ঞানে খুব দ্রুত অগ্রগতি ঘটছে এবং নানা রোগের চিকিৎসায় এই পদ্ধতির সফল হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
বায়োলজিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর এই পদ্ধতির নাম ‘বেস এডিটিং।’
গ্রেট অরমন্ড স্ট্রিট হাসপাতালের ডাক্তাররা এই পদ্ধতিতেই এলিসাকে লিউকেমিয়া থেকে সারিয়ে তুলেছেন।
ওষুধ প্রয়োগের ছয় মাস পরে দেখা গেছে এলিসার শরীরে ক্যান্সার শনাক্ত করা যাচ্ছে না।
তবে রোগটি আবারও ফিরে আসে কি না- এই আশঙ্কায় তাকে এখনও পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
ইংল্যান্ডের লেস্টার শহরের মেয়ে এলিসা। বয়স ১৩। গত বছরের মে মাসে তার দেহে টি-সেল একিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া ধরা পড়ে।
টি-সেল হচ্ছে শরীরের অভিভাবকের মতো। এই সেল শরীরের ভেতরে হুমকি সৃষ্টিকারী উপাদান ধ্বংস করে দেয়। কিন্তু এলিসার দেহে ক্যান্সার সেলগুলো বিপদজনক হয়ে উঠেছিল এবং চলে গিয়েছিল নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
তার দেহে ক্যান্সারের কোষগুলো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছিল। কেমোথেরাপি এবং বোন-মেরো ট্রান্সপ্লান্ট করেও সেগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া যাচ্ছিল না।
“আমি হয়তো আসলে মারাই যেতাম,” এলিসা বলেছেন। ওর মা কিওনা বলেন গত বছর তিনি ভেবেছিলেন যে তিনি হয়তো তার মেয়ের সঙ্গে শেষ ক্রিসমাস পালন করতে যাচ্ছেন।
কিন্তু এর পরে যা ঘটেছে কয়েক বছর আগেও তার সবই ছিল অচিন্তনীয়। জেনেটিকসের অসাধারণ অগ্রগতির কারণেই এলিসার জীবন রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।
এজন্য গ্রেট অরমন্ড স্ট্রিট হাসপাতালের ডাক্তাররা যে বেস এডিটিং পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন সেটি মাত্র ছয় বছর আগে উদ্ভাবন করা হয়েছে।
বিএনএনিউজ/এইচ.এম।