বিএনএ, ফেনী : বাংলাদেশের মানুষের জন্য বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলেন দু:সাহসী মুক্তিযোদ্ধারা। তাঁদের অসীম সাহসীকতার ফসল আজকের এই বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধ বাঙ্গালী’র রক্তগাঁথা মহাকাব্য। বিজয়ের ৫০ বছর পর এই মহাকাব্যের অসখ্য নায়ক ইতিমধ্যেই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন, রয়েছেন হৃদয়ের অন্ত:স্থলে, আনেকেই এখনো আছেন বঙ্গভুমি জুড়ে।
সময়ের সাথে সাথে চিরবিদায় নিচ্ছে অনেক মুক্তিযোদ্ধা। যার ফলে ইতিহাসের অনেক অজানা কথা জানা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এলাকার মানুষ। তবে অনেক হারানোর বেদনাতে আশার প্রদীপ হয়ে কাজ করছে মুক্তিযুদ্ধের ধারক ও বাহক বর্তমান আওয়ামী সরকার। কালান্তরে হারিয়ে যাবার আগে চেষ্টা করছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে। যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অক্লান্ত পরিশ্রম আর আগ্রহের ফসল। আক্ষরিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়সীমা ৯ মাস হলেও এর ইতিহাস সুদীর্ঘ।
সে কারণে বলা হয় ১৯৭১ সালে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের প্রতিটি ঘরেই ছিল দূর্গ আর প্রতিটি মানুষই ছিল মুক্তিযোদ্ধা। সম্মুখ সমরের বীর সেনাদের নানাভাবে সহযোগিতা করেছে শহর গ্রামের নারী, পুরুষ কিশোর কিশোরী সম্মিলিতভাবে। সত্যিকারভাবে আর্মি, ই পি আর, আনসারসহ শহর-গ্রামের এক একজন মুক্তিযোদ্ধা ইতিহাসের এক একটি অংশ। সুতরাং এলাকার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে জানতে হলে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধকালীন সময়কে জানতে হবে। যেতে হবে তাদের কাছে। তারা হয়তোবা ধারবাহিকতা রেখে বলতে পারে না যুদ্ধের সব কিছু। কারণ ৫০ বছর আগের কথা বয়সের কারণে এলোমেলো হয়ে যায়। তবুও তারা আবেগময় হয়ে আপন মনে বলে নিজেদের যুদ্ধের কথা।
এমন প্রেক্ষাপটে বলতে হয়- গোটা মানচিত্র আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। আর এ যুদ্ধের সকল যোদ্ধাদের যুদ্ধকথন শুধু তাদের জীবনের গল্প নয়। এ গল্প জানতে হবে নতুন প্রজন্মকে।
শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে ছাগলনাইয়া উপজেলা ইউনিয়নের উত্তর যশপুর গ্রামে ফেনী জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য, পোর্টল্যান্ড গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও বিশিষ্ট শিল্পপতি মিজানুর রহমান মজুমদারের বাড়ীতে রণাঙ্গনে সম্মুখ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচারণ/সমাবেশ অনুষ্ঠিতব্য “মহামায়ায় মুক্তিযুদ্ধ” অনুষ্ঠান আয়োজনে প্রস্তুতি সভায় মুক্তিযোদ্ধারা এসব কথা বলেন।
তারা বলেন, এ অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধের অন্যতম ঘাঁটি এবং সম্মুখযুদ্ধ হয়েছিল উত্তর যশপুর গ্রামের হাজী বাড়ী বর্তমানে মিজান সাহেবদের বাড়ীর সামনে। মিজান সাহেবের পিতা মুক্তিযোদ্ধের অন্যতম সংগঠক মরহুম আলহাজ্ব সুলতান আহমেদ মজুমদার ও তার বড় ভাই মরহুম আলহাজ্ব সফিকুর রহমান মজুমদার। তারা দুজনই মুক্তিযোদ্ধাদের খাবারসহ সার্বিকভাবে সহযোগীতা করেছেন। তাদের সহযোগীতা, উৎসাহ, উদ্দীপনা এবং অনুপ্রেরণায় মুক্তিযোদ্ধারা দ্বিগুণ উদ্দীপ্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধে অংশগ্রহণ করে পাকিস্তানি বাহিনীদের পর্যদুস্থ করে ৬ ডিসেম্বর ফেনী মুক্ত করে।
মুক্তিযোদ্ধারা মহামায়া তথা ১নং সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে মিজানুর রহমান মজুমদার যে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করছেন এজন্য আমরা এ অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধারা অত্যান্ত আনন্দিত এবং কৃতজ্ঞ তার নিকট। এ অনুষ্ঠানের ফলে বর্তমান প্রজন্ম এ অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে।
এ সময় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বাহার উদ্দিন আজাদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাষ্টার আবদুর রহিম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই, বীর মুক্তিযোদ্ধা সামছুল হুদা মজুমদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল হক খন্দকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা কবির আহাম্মদ মজুমদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই প্রমুখ।
প্রস্তুতি সভাটি সমন্বয় ও পরিচালনা করেন বাংলাদেশ সাংবাদিক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি এবিএম নিজাম উদ্দিন।
উল্লেখ্য, আগামী ১৫ ডিসেম্বর বিশিষ্ট শিল্পপতি মিজানুর রহমান মজুমদার তার বাড়ীতে রণাঙ্গনে সম্মুখ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচারণ/সমাবেশ “মহামায়ায় মুক্তিযুদ্ধ” অনুষ্ঠান আয়োজন করছেন। উক্ত স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে ছাগলনাইয়া উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা অংশ গ্রহণ করবেন।
বিএনএনিউজ/এবিএম নিজাম উদ্দিন/এইচ.এম।
Total Viewed and Shared : 157