বিএনএ, ঢাকা : মাগুরায় শিশু ধর্ষণের বিচারসহ সকল ধর্ষকদের ফাঁসির দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান নিয়েছেন নারী শিক্ষার্থীরা। তারা ব্যর্থতার দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেছেন।
শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টা নাগাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হলের নারী শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যে আসেন। পরে অন্যান্য হলের নারী শিক্ষার্থীরা তাদের সাথে যোগ দেন।
এসময় নারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিভিন্ন হলের পুরুষ শিক্ষার্থীরাও মিছিলে যোগ দিয়েছেন। তারা সম্প্রতি মাগুরায় নিপীড়নের শিকার শিশুর বিচার চেয়েছেন।
এসময় নারী শিক্ষার্থীদের স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজু ভাস্কর্য এলাকা। তারা ‘ধর্ষকের ফাঁসি চাই’, ‘তুমি কে, আমি কে আছিয়া, আছিয়া’, ‘ধর্ষকদের কালো হাত ভেঙে দাও’, ‘স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা গদি ছাড়’সহ একাধিক স্লোগান দেন।
বিক্ষোভে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমাকে স্লোগান ও নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে। তাছাড়া জুলাই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়া অনেক শিক্ষার্থীকেও বিক্ষোভে অংশ নিতে দেখা গেছে।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ছাত্রীরা বলেন, দেশে শিশু থেকে বৃদ্ধা কেউই ধর্ষকদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। ধর্ষকদের গ্রেপ্তার করার পর তাদের বিচার হয় কি না, তা আমরা জানতে পারি না। দেখা যায় ধর্ষকরা জামিন পেয়ে বাইরে অবাধে চলাফেরা করে। ধর্ষকদের শাস্তি সংবিধানে লিপিবদ্ধ থাকলেও তা বাস্তবায়ন হতে দেখি না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে আইন সংশোধনসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
তারা আরও বলেন, মাগুরায় আট বছরের শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত বিচার করতে হবে। যতদিন এ ধর্ষকের ফাঁসি দেওয়া না হবে, ততদিন আমরা রাজপথে থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাবো। একই সঙ্গে তনু, আম্বিয়াসহ অসংখ্য বোনের ধর্ষণের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে।
এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বেগম রোকেয়া হলের সামনে থেকে শিক্ষার্থীরা মশাল মিছিল বের করেন। মিছিলটি রোকেয়া হলের সামনে থেকে ভিসি চত্বর প্রদক্ষিণ করে ফের রোকেয়া হলের সামনে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়। নারী শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে রাস্তায় বসে স্লোগান দিচ্ছেন। তাদের চারপাশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা অবস্থান করছেন। সবাই ধর্ষণের প্রতিবাদে নানা স্লোগানে কণ্ঠ মেলাচ্ছেন। ১৪ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের মিছিলের পর মধ্যরাতের কোনো প্রতিবাদ মিছিলে এত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারীদের উপস্থিতি দেখা যায়নি।
কর্মসূচি থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হলের শিক্ষার্থী উমামা ফাতেমা বলেন, প্রত্যেক ধর্ষককে বাংলার মাটিতে কবর দিতে হবে। যারা আমাদের বোনদের জীবন নষ্ট করে, তাদের বেঁচে থাকার অধিকার নেই।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলে আসছে। আমরা এভাবে চলতে দিতে পারি না। আমরা সকল ধর্ষকদের বিচার চাই। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং আইন উপদেষ্টা তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে হবে।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক বলেন, আন্দোলনের মূল দাবি ধর্ষকদের শাস্তি নিশ্চিত করা। পাশাপাশি ব্যর্থতা স্বীকার করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ। তবে সবার সঙ্গে আলোচনা করে মূল দাবিগুলো পেশ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী বলেন, আজ একদিনে অন্তত ৫ টি ধর্ষণের নিউজ পেয়েছি। আরও থাকতে পারে; আমি সঠিক জানি না। ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এই জাতি কোনোদিন দেখেনি। ধর্ষণ করলে বিচার হবে না, এটাই এই দেশের ধর্ষকের মনস্তত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের পক্ষে আইনজীবী লড়ে, তারা জামিন পায়। আমরা এবার এরকম দেখতে চাই না।
বিএনএনিউজ/ আরএস/শাম্মী