বিএনএ, নোবিপ্রবি: নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) নিয়োগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেছে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ। মঙ্গলবার (৯ মার্চ) সকালে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি, অফিসার সমিতি ও কর্মচারী নেতৃবৃন্দের আয়োজনে অবস্থান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মজনুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর কাতারে যাওয়ার জন্য কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছি। তবে স্বাধীনতা বিরোধীরা আল জাজিরার মত তথাকথিত গণমাধ্যমকে দিয়ে চক্রান্ত করছে। একটি দেশকে উন্নত বিশ্বের সাথে তুলনা করতে হলে সেই দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোকে উন্নত করতে হবে। বর্তমানে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মধ্যে অন্যতম। সুতরাং এই বিশ্ববিদ্যালয়কে উন্নত করতে না পারলে বাংলাদেশকেও উন্নত বিশ্বের কাতারে নেওয়া সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ দিনের নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অচল অবস্থা কাটিয়ে উঠার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি। আমরা আশা করছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে এই সমস্যা সমাধান করবেন।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মজনুর রহমান বলেন, দীর্ঘ দুই বছর নিয়োগ নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টাররোল এবং চুক্তি ভিত্তিক তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা মানবেতর জীবন জাপন করছে। এসময় দ্রুত নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।
শিক্ষকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ এন্ড লিবারেশন ওয়ার স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. দিব্যদ্যুতি সরকার, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো. জসীম উদ্দিন, অফিসার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন। অস্থায়ী শিক্ষকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অঞ্জন কুমার নাথ, এ কিউ এম সালাউদ্দিন পাঠান। কর্মকর্তাদের মাঝে বক্তব্য রাখেন পরিচালক হিসাব (ভারপ্রাপ্ত) সাইদুর রহমান। কর্মচারীর মধ্যে বক্তব্য রাখেন সোহরাব হোসেন, মাকসুদুর রহমান, গিয়াস উদ্দিন সোহাগ।
অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে বক্তারা বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিষেধাজ্ঞার কারণে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। শিক্ষাছুটির বিপরীতে, অস্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের স্থায়ীকরণ প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। তাদের পরবর্তী পদে পদোন্নতির সময়ও প্রায় ১ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। এদিকে অস্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও মাস্টার রোল কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ী হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মনে স্থবিরতা বিরাজ করছে। তাই বক্তারা নোবিপ্রবিতে সব ধরনের নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানান।
বক্তারা আরও বলেন, মাননীয় উপাচার্য নোবিপ্রবিতে যোগদানের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ ঐক্যবদ্ধভাবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তথা একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। করোনা মহামারীতেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোভিড ল্যাব পরিচালনাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকগুলো বিভাগেই পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই, মাত্র ২ জন শিক্ষক দিয়ে ২টি শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম চলছে। ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে। এমতাবস্থায় শিক্ষামন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অচিরেই যেন এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে উদ্যোগী হন, মানববন্ধনে এমনটাই দাবি করেন নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি, অফিসার সমিতি ও কর্মচারী নেতৃবৃন্দ।
বক্তারা তাদের দাবি পূরণে তিনটি আলটিমেটাম দিয়েছেন। ঘোষিত আলটিমেটামের মধ্যে রয়েছে- আগামী ১৪ মার্চ নোয়াখালী প্রেসক্লাবে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি, ২১ মার্চ ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবে মানববন্ধন, প্রেসকনফারেন্স ও স্মারকলিপি বিতরণ এবং ২৮ মার্চ থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন।
বিএনএনিউজ/শাফি,মনির