30 C
আবহাওয়া
৫:০৭ পূর্বাহ্ণ - মে ১, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ভারত ইস্যুতে বিএনপি-জামায়াত ‘হিসাবি ও কৌশলী’!

ভারত ইস্যুতে বিএনপি-জামায়াত ‘হিসাবি ও কৌশলী’!


।।শামীমা চৌধুরী শাম্মী।।

বিএনএ, ঢাকা : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে  ভারতকে কাছে পাওয়ার জন্য জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশ তথা জামায়াতকে দূরে ঠেলে দিয়েছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি। কিন্তু ভারত বিএনপির পাশে দাড়ায়নি উল্টো আওয়ামী লীগের পাশে দাড়িয়েছে। বিএনপি’র অভিযোগ ভারত আওয়ামী লীগকে সহযোগীতা না করলে আওয়ামী লীগ বিএনপি বিহীন নির্বাচন করে ক্ষমতার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারতো না! এতে বিএনপি ভারতের ওপর নাখোশ হয়। দলটির অনেক নেতা প্রকাশ্যে ভারতের বিরোধীতা করে। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের পণ্য বর্জনের ঘোষণা দিয়ে নতুন করে দেশ-বিদেশে আলোচনা- সমালোচনার ঝড় তুলেছে বিএনপি।

অন্যদিকে বর্জন করা জামায়াত ইসলামীকে আবার বুকে টেনে নিয়ে সরকার বিরোধী আন্দোলনের পালে হাওয়া লাগানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ বেড়েছে। তবে দল দুটির মধ্যে সম্পর্ক যে খুব ঘনিষ্ঠ হয়েছে, তা মনে করছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

সর্বশেষ ২০১৫ সালে রাজনীতিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্মানে জামায়াত ইফতারের আয়োজন করেছিল। দীর্ঘ ৮ বছর পর গত ৩০শে মার্চ অনেকটা ঘটা করে কেন্দ্রীয়ভাবে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে জামায়াতে ইসলামী। রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ওই ইফতার অনুষ্ঠানে বিএনপির ১৮ জন নেতা অংশ নেন। অন্যদিকে  বিএনপির ইফতারে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরোয়ারসহ চারজন নেতা অংশ নিয়েছিলেন।

এরপর দল দুটির সম্পর্ক নতুন করে আলোচনায় আসে। ২০০১ সালে জামায়াতে ইসলামীসহ চারদলীয় জোট গঠন করে ক্ষমতায় এসেছিল বিএনপি। তবে দীর্ঘদিন থেকে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নানা রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশে স্বাধীনতাযুদ্ধে বিরোধিতাকারী দল জামায়াতকে এড়িয়ে চলছিল বিএনপি।

বিএনপির এমন অবস্থানের ক্ষেত্রে  বিগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রতিবেশী দেশ ভারতকে ‘আস্থায়’ আনার একটা লক্ষ্য ছিল। এ লক্ষ্যে নির্বাচন সামনে রেখে জামায়াতকে এড়াতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট ভেঙে দেওয়া হয়। এই জোটের অন্যতম শরিক দল ছিল জামায়াত। পরে ভেঙে দেওয়া ২০ দলের অন্য শরিকেরা জামায়াতকে বাদ দিয়ে নতুন জোট করে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত হয়। এ দলগুলোর সঙ্গে বিএনপি সময়–সময় দ্বিপক্ষীয় সভা ও মতবিনিময়ের মাধ্যমে  সম্পর্ক রক্ষা করে চললেও জামায়াতকে এড়িয়ে চলছিল।

এরপরও জামায়াত শুরুর দিকে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের কয়েকটি কর্মসূচি পৃথকভাবে পালন করে। কিন্তু বিএনপির এড়িয়ে চলার মনোভাব টের পেয়ে একপর্যায়ে জামায়াত নিজস্ব কর্মসূচি শুরু করে। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে প্রতিবেশী দেশের সমর্থন না পাওয়ায় বিএনপির নেতৃত্বে যুগপৎ আন্দোলনের সময় আবার জামায়াতের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ায়। বিশেষ করে, গত বছরের ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনের মহাসমাবেশ থেকে বিএনপিকে অনুসরণ করে কর্মসূচি দেয় জামায়াত। তবে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বিএনপি ও জামায়াত—দুই দলই নীরব হয়ে যায়।

এই বছর রমজানে ইফতার অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে যোগাযোগ কিছুটা বাড়ে। গত ২৮ মার্চ বিএনপির ইফতারে জামায়াতের আমির, সেক্রেটারি জেনারেলসহ চারজনকে দাওয়াত করা হয়। এরপর ৩০ মার্চ জামায়াত তাদের ইফতারে বিএনপির মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সব সদস্য ছাড়াও দলের ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা ও যুগ্ম মহাসচিবসহ প্রায় অর্ধশত নেতাকে আমন্ত্রণ জানায়। ইফতারে দলটির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাসসহ ১৮ জন নেতা অংশ নেন। যদিও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যাননি।

বিএনপি ও জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা স্বীকার করেছেন,  দুই দলের সম্পর্কে এখনো দূরত্ব রয়ে গেছে। তবে বিএনপির নেতৃত্বের মধ্যে একধরনের উপলব্ধি হয়েছে যে সরকারের আগ্রাসী মনোভাব ও দমন-পীড়নের মধ্যে একটি সংগঠিত বিরোধী দল জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব রেখে চলাটা এখন আর সঠিক রাজনৈতিক কৌশল হচ্ছে না। আবার জামায়াতের দিক থেকেও বিএনপির সঙ্গে আগের মতো বোঝাপড়ার মাধ্যমে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখেই রাজনৈতিক পথচলার আগ্রহ রয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের রাজনীতি এবং ক্ষমতার প্রশ্নে আওয়ামী লীগের পক্ষে ভারতের ‘একমুখী’ নীতি দল দুটিকে আবার ঘনিষ্ঠ করার ক্ষেত্র তৈরি করছে বলে মনে করা হচ্ছে।

জামায়াতের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়লেও সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার ক্ষেত্রে বিএনপির ভেতরে-বাহিরে এর বিরুদ্ধেও অবস্থান আছে। বিএনপির ইফতারে জামায়াতকে দাওয়াত করায় যুগপৎ আন্দোলনের অন্যতম শরিক জোট গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম যাননি। আবার জামায়াতের ইফতারে বিএনপির মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সব সদস্যকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও অনেকে নানা কারণ দেখিয়ে এড়িয়ে গেছেন বলে মনে করছেন জামায়াতের নেতারা।

জামায়াত বিএনপির এমন ঘনিষ্ঠতা নিয়ে মুখ খুলেছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম। তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে সম্পর্কটা বেড়েছে, খুব ঘনিষ্ঠতা হয়েছে এটা মনে করেন না। তার ভাষায়, আমরা জাতীয় স্বার্থে শুধু বিএনপি নয়, যেকোনো দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠতা রাখতে চাই। এ ক্ষেত্রে বিএনপির পলিসি কী হবে, তা তো আমরা জানি না।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘এখানে জামায়াত-বিএনপির কোনো ব্যাপার নেই। যারা জামায়াত-বিএনপি সম্পর্ক আলাদা করে দেখতে চায়, তারা এটাকে ইস্যু করতে চায়। সরকারবিরোধী ৬২-৬৩টি দল আছে, তাদের নিয়ে তো কথা নেই। শুধু জামায়াত-বিএনপি নিয়ে কথা আসে কেন? এমন প্রশ্ন করে তিনি বলেন ‘ঘরে আগুন লেগেছে। যারাই আগুন নেভাতে আসবে, আমরা তাদের স্বাগত জানাব।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, সময় এবং প্রেক্ষাপট বিএনপি ও জামায়াতকে আলাদা করেছে। আবার সময়ই বলে দেবে ভবিষ্যতে রাজনীতির মাঠে দুই দলের সম্পর্ক কেমন হবে। তারা মনে করেন, যোগাযোগ যতই বৃদ্ধি পাক, ঘনিষ্ঠতা খুব গভীর হবে না। এর কারণ, দুটি দলই সম্পর্কের ক্ষেত্রে বেশ হিসেবি এবং কৌশলী।

 

বিএনএনিউজ/এইচ.এমএ/এইচমুন্নী

 

 

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ