37 C
আবহাওয়া
৫:৩৮ অপরাহ্ণ - মে ৩০, ২০২৩
Bnanews24.com
Home » মামলার বাদী কর্ণফুলীর খোয়াজ নগরের শেয়ার আলী কারাগারে!

মামলার বাদী কর্ণফুলীর খোয়াজ নগরের শেয়ার আলী কারাগারে!


বিএনএ, চট্টগ্রাম : প্রতারণার মিথ্যা অভিযোগে মামলা করে উল্টো ফেঁসে গেলেন বাদী! মানহানি মামলায় অভিযুক্ত হয়ে কর্ণফুলী উপজেলার খোয়াজ নগরের মৃত গুরা মিয়া চৌধুরীর পুত্র শেয়ার আলী চৌধুরী আদালতের দেয়া এক বছরের কারাদণ্ড ভোগ  করছেন।

আদালত সূত্র জানায়, ২০০৫ সালের ২১ ডিসেম্বর সম্পাদিত অংশীদারী চুক্তিমূলে মানহানি মামলার বাদী মিজানুর রহমান মজুমদার, আসামি শেয়ার আলী চৌধুরী, তার ভাই মহব্বত আলী চৌধুরী ও রফিকুল ইসলাম ২৫% হারে বিনিয়োগ করে ওটি সুফলা-১ নামে একটি জাহাজ ক্রয় করেন। যা মহব্বত আলী চৌধুরীর মালিকানাধীন মেসার্স সুফলা অয়েল সাপ্লাইয়ার্স কোম্পানী পরিচালনা করে আসছে।

২০১২ সালের ৯ জুলাই শেয়ার আলী চৌধুরীর কাছে ৩০ লাখ টাকায় মিজানুর রহমান মজুমদার এ জাহাজের ২৫% শেয়ার বিক্রি করেন। দখলও বুঝিয়ে দেন ।

জাহাজটি ২০১৩ সালের ১৬ জুন অভ্যন্তরীণ নৌ-যান রেজিস্ট্রারের দপ্তরে সহোদর শেয়ার আলী চৌধুরী ও মহব্বত আলী চৌধুরীর নামে রেজিস্ট্রেশন হয়। ৬ বছর পর শেয়ার আলী চৌধুরী ২০১৮ সালের ২২ অক্টোবর চট্টগ্রাম চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালতে মামলা (সি. আর মামলা নং-১২৯৯/ ২০১৮) দায়ের করেন।

মামলায় অভিযোগ করা হয় ৩০ লাখ টাকা গ্রহণ করেও মিজানুর রহমান মজুমদার জাহাজটি নিজের দখলে রেখেছে। শেয়ার আলী চৌধুরী আদালতে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে মিজানুর রহমান মজুমদারকে একজন প্রতারক, ছলনাময়ী , দুষ্ট প্রকৃতির লোক বলে অভিহিত করেন। শুধু তাই নয়, মামলার কপি বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে দেখিয়ে মিজানুর রহমান মজুমদারের সম্মানহানি করার পাশাপাশি ব্যবসায়িক ক্ষতি সাধন করেন।

মিথ্যা মামলার বিষয়টি মিজানুর রহমান মজুমদারের আইনজীবী মোহাম্মদ আলাউদ্দিন আদালতের নজরে নিয়ে জাহাজটি জব্দ করার পাশাপাশি তদন্ত করার দাবি জানান। একই সঙ্গে মিজানুর রহমান মজুমদারের জামিন আবেদন করেন তিনি। আদালত জামিন মঞ্জুর ও জাহাজটি জব্দ করে প্রকৃত ঘটনা তদন্ত করার জন্য ডবলমুরিং থানাকে নির্দেশ দেন।

এ পর্যায়ে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে। শেয়ার আলী চৌধুরীর ভাই মহব্বত আলী আদালতকে জানান, জাহাজটি তার কাছে রয়েছে। মামলার বাদি শেয়ার আলী ওটি সুফলা-১ এর ৫০% শেয়ার ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি তার কাছে বিক্রি করে দেয়।

মহব্বত আলী চৌধুরী আদালতকে আরও জানান, শেয়ার আলী চৌধুরী প্রতারণার উদ্দেশ্যে মিজানুর রহমান মজুমদারের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেছেন।

এ অবস্থায় গত ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল ফৌজদারি দণ্ডবিধি ২৪১ ধারায় এবং সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ৪র্থ আদালতের বিচারক ইমরান খান মিজানুর রহমান মজুমদারকে মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদান করেন। আদালত আদেশে বলেন, বাদী কর্তৃক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করে আদালত থেকে মামলা আমলে গ্রহণ সম্পর্কিত আদেশ হাসিল করায় এবং আসামির বিরুদ্ধে প্রকৃত অর্থে অত্র মামলায় চার্জ গঠনের কোন উপাদান না থাকায় আসামিকে অত্র মামলার দায় থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হল’।

আদালত থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর গত ২০১৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পোর্টল্যান্ড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান মজুমদার কর্ণফুলী উপজেলার খোয়াজনগর গ্রামের মৃত গুরা মিয়ার পুত্র শেয়ার আলীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। চট্টগ্রাম চীফ মেট্রোপলিটন আদালতে দায়ের করা এ মামলায় ২০৯/২১১/৫০০/ ৫০৬ দণ্ডবিধির অভিযোগ আনা হয়।

মামলায় বলা হয়, বাদী (মিজানুর রহমান মজুমদার) একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ি ও পোর্টল্যান্ড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ বাংকার সাপ্লাইয়ার্স এসোসিয়েশন এর সভাপতি, বাংলাদেশ পেট্টোলিয়াম ট্যাংকার ওনার্স এসোসিয়েশন এর সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি (বিএনএ) এর সম্পাদকসহ অসংখ্য দাতব্য ও জনকল্যাণমূলক সংগঠনের পরিচালক ও আজীবন দাতা সদস্য। আসামি শেয়ার আলী অসৎ উদ্দেশ্যে বাদী মিজানুর রহমানের সম্মানহানি ও ব্যবসায়িক সুনাম নষ্ট করার জন্য কথিত প্রতারণার মামলা দায়ের করেছেন।

আদালত মিজানুর রহমান মজুমদারের দায়ের করা মামলাটি আমলে নিয়ে মিথ্যা মামলা দায়েরকারি শেয়ার আলী চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এ অবস্থায় শেয়ার আলী চৌধুরী পলাতক হন। ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-৪ এর বিচারক কাজী শরীফুল ইসলাম প্রতারক শেয়ার আলী চৌধুরীকে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।

রায়ে বলা হয়, অভিযোগকারী পক্ষের উপস্থাপিত সাক্ষ্য প্রমাণে আসামি শেয়ার আলীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনীত পেনাল কোড ৫০০ ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় এ সাজা দেয়া হয়। তাঁর বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা ইস্যু পেয়ে কর্ণফুলী থানা পুলিশ শেয়ার আলী চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোর্পদ করেন। আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন।

এ বিষয়ে মামলার বাদী মিজানুর রহমান মজুমদার বলেন, শেয়ার আলী চৌধুরী একজন প্রতারক। তার মানহানি ও ব্যবসায়িক ক্ষতি করার জন্য কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানি করেছেন। তিনি আদালতে ন্যায় বিচার পেয়েছেন।

মিজানুর রহমান মজুমদারের নিযুক্ত আইনজীবী মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, শেয়ার আলী চৌধুরী আদালতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে কল্পকাহিনী সাজিয়ে বিশিষ্ট ব্যবসায়ি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করেছিলেন। আদালতে দলিলাদি উপস্থাপন করার পর আদালত বুঝতে পেরেছেন যে, মিজানুর রহমান মজুমদারের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বাদী শেয়ার আলী একজন প্রতারক।

বিএনএ/এমএফ,ওয়াইএইচ

Total Viewed and Shared : 110 


শিরোনাম বিএনএ