27 C
আবহাওয়া
৫:০২ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ১, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৪৭ (ময়মনসিংহ-২)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৪৭ (ময়মনসিংহ-২)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে ময়মনসিংহ-২ আসনের হালচাল।

ময়মনসিংহ- ২ আসন 

ময়মনসিংহ- ২ সংসদীয় আসনটি ফুলপুর এবং তারাকান্দা উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ১৪৭তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের শামসুল হক বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩৪ হাজার ৩ শত ১৮ জন। ভোট প্রদান করেন ৯২ হাজার ৬ শত ৩৩ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শামসুল হক বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩৫ হাজার ৪ শত ৩২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির জুলমত আলী খান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ২১ হাজার ৯১ ভোট।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আবুল বাসার আকন্দকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে বিএনপির আবুল বাসার আকন্দকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের শামসুল হক বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪৫ হাজার ৪শত ৮ জন। ভোট প্রদান করেন ১লাখ ৪২ হাজার ৪ শত ৫১জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শামসুল হক বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫০ হাজার ৪ শত ৯৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আশরাফ উদ্দিন সরকার। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৪৩ হাজার ৩৭ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির শাহ্‌ শহীদ সরোয়ার বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ১৬ হাজার ১ শত ৭৫ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ২৫ হাজার ৮ শত ৯৮ জন। নির্বাচনে বিএনপির শাহ্‌ শহীদ সরোয়ার বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১লাখ ১৪হাজার ৪৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের শামসুল হক। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৮৯ হাজার ৬ শত ৩১ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের হায়াতুর রহমান খান বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ২০ হাজার ৯শত ১১ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৩ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হায়াতুর রহমান খান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৭২ হাজার ৫ শত ৩৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির শাহ্‌ শহীদ সরোয়ার । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৯৪ হাজার ৯০ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শরীফ আহমেদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শরীফ আহমেদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের শরীফ আহমেদ বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৪ লাখ ৫১ হাজার ১ শত ৫ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ৬৮ হাজার ১ শত ১৩ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৪ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের শরীফ আহমেদ, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির শাহ্ শহীদ সরোয়ার, সিংহ প্রতীকে স্বতন্ত্র পাটির আবু বকর ছিদ্দিক, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গোলাম মাওলা ভুইয়া প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শরীফ আহমেদ, বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৯৩ হাজার ৪ শত ৮৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির শাহ্‌ শহীদ সরোয়ার। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৬২ হাজার ২ শত ৩৪ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদে বিএনপি এবং পঞ্চম, সপ্তম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ময়মনসিংহ-২ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ময়মনসিংহ – ২ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৩৯.৫৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৮.২৫%, বিএনপি ২২.৭৭%, জাতীয় পাটি ২০.৬৬%, জামায়াতে ইসলামী ৩.৩২%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১৫.০০% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫৮.০৫% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৫.৪৫%, বিএনপি ৩০.২১%, জাতীয় পাটি ২৯.৯৬%, জামায়াতে ইসলামী ২.৯৬ %, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৪২% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭১.৪৫ % ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৯.৬৮ %, ৪ দলীয় জোট ৫০.৪৯%, জাতীয় পার্টি ৯.৩০%,স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৫৩% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৪.২০% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৬৩.০০%, ৪দলীয় জোট ৩৪.৮৪%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২.১৬% ভোট পায়।

ময়মনসিংহ-২ সংসদীয় আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রয়াত ভাষাসংগ্রামী এবং আওয়ামী লীগ থেকে সাবেক সংসদ সদস্য শামছুল হকের ছেলে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ। তিনি এই আসনের একক প্রার্থী হলেও সাবেক সংসদ সদস্য হায়াতুর রহমান খান বেলাল মনোনয়ন চাইবেন।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন ফুলপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ এনায়েতুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল বাশার আকন্দ, ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক ছাত্রদল নেতা মোতাহার হোসেন তালুকদার এবং সাবেক পৌর মেয়র আমিনুল হক। জাতীয় পার্টির থেকে মনোনয়ন চাইবেন প্রয়াত রজব আলী ফকিরের ছেলে সাবেক এমপি শাহ শহীদ সারোয়ার।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর এবং তারাকান্দা) আসনটি আওয়ামী লীগের শক্তিশালী দুর্গ হিসেবে পরিচিত। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ উন্নয়ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে এলাকায় নিজের এবং দলের একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন।

আওয়ামী লীগের এ দুর্গে হানা দিয়ে আসন পুনরুদ্ধার করতে চায় বিএনপি। তবে দলটি বিভক্ত ও কোন্দলে জর্জরিত। এরই মধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে শাহ শহীদ সারোয়ার ও মোতাহার হোসেন তালুকদারের গ্রুপ। তাদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। এই আসনে নির্ভার রয়েছে আওয়ামী লীগ।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১৪৭ তম সংসদীয় আসনটিতে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বিএনএ/ শিরীন, রেহানা, ওজি, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ