বিএনএ, কুবি : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের শিক্ষার্থী এবং দৈনিক যায়যায়দিনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মোহাম্মদ ইকবাল মনোয়ারকে বহিষ্কারের কারণ জানতে চেয়েছে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান শুভ। তবে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিষয়টিকে ‘সরকার বিরোধী অপচেষ্টা’ হিসেবে দেখছেন বলে জানান।
বৃহস্পতিবার (৩ আগষ্ট) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান শুভ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কিত গ্রুপে ও নিজের ব্যক্তিগত পোস্টের মাধ্যমে কারণ জানতে চান।
সামাজিক মাধ্যমে তার দেয়া পোস্টে উল্লেখ ছিলো, ‘রুদ্র ইকবাল একজন শিক্ষার্থী তাঁর পাশাপাশি সে একজন সংবাদকর্মী। রুদ্র একজন শিক্ষার্থী হিসেবে ভিসির দেয়া বক্তব্য প্রকাশ করেনি, করেছে একজন সংবাদপত্র কর্মী হিসেবে। তাকে কোন আইনের দোহাই দিয়ে কোন জিজ্ঞাসাবাদ না করে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে বহিষ্কার করা হলো সকল সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল ও জানতে চায়! আমি সম্পূর্ণ বক্তব্যটি শুনেছি, রুদ্র সেটাই প্রকাশ করেছে যেটি ভিসি নিজে বলেছে। সত্য প্রকাশিত হওয়ায় উনার গাত্রদাহ হওয়ার কোন কারণ দেখিনি। অবশ্য উনি নিজে যেহেতু দুর্নীতিকে সমর্থন করে এবং লালন করে তার মানে এটাই বুঝায় যে উনার নিয়োগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক দুর্নীতির পেছনে উনার হাত রয়েছে। ভিসি/বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক ইকবালের বহিষ্কারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই আমি একজন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে এবং এই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের পক্ষ থেকে। অনতিবিলম্বে ইকবালের বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার চাই।’
এই বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান শুভ বলেন, ইকবাল মনোয়ারকে আমি চিনি। সে সবসময় সত্য এবং যথাযথ সংবাদ লিখে। উপাচার্য যা বলেছেন তা ক্রিটিকাল থিংকিং হোক আর যাই হোক তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হিসেবে এ ধরনের কথা বলতে পারেন না। একজন সংবাদককর্মী সংবাদ প্রকাশ করেছে তার ভিত্তিতে প্রশাসন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে, শোকজ জানাতে পারে। সেটা না করে সরাসরি তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করতে পারেন না। এই বহিষ্কারের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের পক্ষ থেকে আমি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। প্রশাসনকে দ্রুত এই বহিষ্কারাদেশ নিঃশর্তে তুলে নিতে আহবান করছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আগামী কমিটিতে পদপ্রত্যাশী রেজা-ই-ইলাহী এ ব্যাপারে বলেন, ‘এটা পুরোটাই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং রাজনৈতিক। জামাত-শিবিরের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য এরা কাজ করছে। ইকবাল মনোয়ার এর পক্ষ নিয়ে যারা এই পোস্ট করছে তাদের কেউ ছাত্রশিবিরের পোস্টে আছে কেউ ছাত্রদলের পোস্টে আছে। এরা নিঃসন্দেহে একটা সরকার বিরোধী অপচেষ্টা চালাচ্ছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের আগামী কমিটিতে পদপ্রত্যাশী মোমিন শুভ বলেন, ‘ছাত্রদলের একাংশ ফেসবুকে বিভিন্ন জায়গাতে ইকবাল মনোয়ারকে নিয়ে পোস্ট দিতেছে। তার প্রতি এই মায়াকান্না কেনো তা খতিয়ে দেখার বিষয়। তারা কি ছাত্রদলের এজেন্ড, না কি সাংবাদিক? এই বিষয়টা আমাদের সবার মনে সন্দেহ তৈরী করে। আমরা সবাই অবগত যে, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদনের কেনো অস্তিত্ব নেই। তারা জেনে বুঝে কাজটা করছে কিনা এই বিষয় টি খতিয়ে দেখতে হবে।’
এই বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান শুভ বলেন, ছাত্রলীগ কিংবা সরকারদলীয় লোকদের কাজই হচ্ছে যখনই তাদের করা কাজের বিরুদ্ধে কেউ আওয়াজ তুলে তখনই সেটাকে সরকার বিরোধী বা সরকার পতনের জন্য ষড়যন্ত্র বলে চালানো। আমরা ছাত্রদলের যারা তারা সবসময় ছাত্রদের অধিকারের জন্য কথা বলে গেছি, এবং বলে যাবো এবার এটা সরকার বিরোধী হলে সরকার বিরোধী-ই।
তবে কিছুদিন আগে এনায়েত এবং সালমান নামে দুইজন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছিলো তখন ছাত্রদল কোনো পদক্ষেপ নেয় নি। এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তারা দুইজনই ছাত্রলীগের নেতা ছিলো। তারা নিজেদের করা কোন্দলের কারণে বহিষ্কার হয়েছে সেটাকে নিয়ে আমরা কথা বলবো কেনো? আমরা তখনই কথা বলি যখন কোনো শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অন্যায় হচ্ছে বলে মনে হয়।
উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে ‘দুর্নীতি হচ্ছে তাই বাংলাদেশে উন্নয়ন হচ্ছে: কুবি উপাচার্য’ শীর্ষক শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। যা মোহাম্মদ ইকবাল মনোয়ার ওরফে রুদ্র ইকবাল দৈনিক যায়যায়দিনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হওয়ায় প্রচার করে। এই সংবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বক্তব্য বিকৃত করে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে দাবি করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। পরবর্তীতে তাকে গত বুধবার (২ আগষ্ট) সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
বিএনএ/আদনান,ওজি