28 C
আবহাওয়া
৪:৪৩ অপরাহ্ণ - ডিসেম্বর ৩, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-৮১ (ঝিনাইদহ-১)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-৮১ (ঝিনাইদহ-১)


বিএনএ ডেস্ক :  বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দল গুলোর আসন ভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে ঝিনাইদহ-১ আসনের হালচাল।

ঝিনাইদহ-১ আসন

ঝিনাইদহ-১ আসনটি শৈলকূপা উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ৮১ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে বিএনপির মোহাম্মদ আব্দুল ওহাব বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৮০ হাজার ৬ শত ৮৭ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ২৯ হাজার ৬ শত ৫১ জন। নির্বাচনে বিএনপির মোহাম্মদ আব্দুল ওহাব বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬৩ হাজার ৬ শত ৬৩ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মোঃ কামরুজ্জামান। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৬ হাজার ২৯ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির মোহাম্মদ আব্দুল ওহাবকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। এই নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে। নির্বাচনে বিএনপির মোহাম্মদ আব্দুল ওহাবকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির মোহাম্মদ আব্দুল ওহাব নির্বাচিত

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৭৪ হাজার ৯ শত ৯৮ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩ শত ৪০ জন। নির্বাচনে বিএনপির মোহাম্মদ আব্দুল ওহাব বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৭৫ হাজার ১ শত ৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মোঃ কামরুজ্জামান । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬৮ হাজার ৫ শত ১৪ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ আব্দুল হাই বিজয়ী 

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ১৭ হাজার ৮ শত ২১ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৮৬ হাজার ১শত ৪৫ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ আব্দুল হাই বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৯২ হাজার ৬ শত ৫২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মোহাম্মদ আব্দুল ওহাব । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৯২ হাজার ৩ শত ৬ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ আব্দুল হাই বিজয়ী

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ১৭ হাজার ৮ শত ৪৯ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৩ হাজার ২ শত ৫৮ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ আব্দুল হাই বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৬ হাজার ৬ শত ৬৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মোহাম্মদ আব্দুল ওহাব । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮৪ হাজার ৩ শত ৭ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ আব্দুল হাই বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪৮ হাজার ৪ শত ৮৪ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৩২ হাজার ৫ শত ১৯ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ আব্দুল হাই বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ১১ হাজার ১ শত ৫৩ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ নায়েব আলী জোয়ার্দ্দার। ফুটবল প্রতীকে তিনি পান ১৮ হাজার ৬ শত ২৮ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ আব্দুল হাই বিজয়ী

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৭৬ হাজার ৩ শত ৩৪ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৩২ হাজার ৬ শত ৮৭ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৩ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ আব্দুল হাই, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, হাত পাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রায়হান উদ্দিন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ আব্দুল হাই বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ২২ হাজার ১৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৬ হাজার ৬ শত ৬৮ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ঝিনাইদহ-১ সংসদীয় আসনে পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম সংসদে বিএনপি এবং অষ্টম ,নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

YouTube player

 

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ঝিনাইদহ-১ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭১.৭৫% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৫.৫০%, বিএনপি ৪৯.১০%, জাতীয় পার্টি ০.১৫%, জামায়াতে ইসলামী ৯.২০%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৬.০৫% ভোট পায়।
১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৭.৬২% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৪.৬৮%, বিএনপি ৪৮.৯৮%, জাতীয় পাটি ১.৫০%, জামায়াতে ইসলামী ৩.৮৮ %, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৯৬% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৫.৪৬% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৯.৭৭%, ৪দলীয় জোট ৪৯.৫৯%, জাতীয় পার্টি ০.৫২%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.১২% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯২.৫৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫২.৪২%, ৪ দলীয় জোট ৪১.৯২%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ৫.৬৬% ভোট পায়।

ঝিনাইদহ-১ (শৈলকুপা) : সংসদীয় আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই। এ আসন থেকে তিনি পর পর চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে আরও মনোনয়ন চাইবেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ কামরুজ্জামানের মেয়ে পারভীন জামান কল্পনা, আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বিশিষ্ট শিল্পপতি নজরুল ইসলাম দুলাল, শৈলকুপার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা নায়েব আলী জোয়ার্দ্দার, ঝিনাইদহ কলেজের অধ্যক্ষ বাদশা আলম।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল ওহাব, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির খুলনা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সহসভাপতি ওসমান আলী বিশ্বাস।

জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন জাতীয় পার্টির শৈলকুপা উপজেলা সভাপতি মনিকা আলম ও সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান ফুল।ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে মনোনয়ন চাইবেন একাদশ জাতীয় সংসদের প্রার্থী রায়হান উদ্দিন।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঝিনাইদহ-১ (শৈলকুপা) সংসদীয় আসনটি এক সময় বিএনপির একক নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে চলে যায়। বর্তমান সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আব্দুল হাই গত ১৯বছর এককভাবে এই আসনটি শাসন করে যাচ্ছেন। এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড করেছেন। ফলে আওয়ামী লীগের দলীয় জনপ্রিয়তার পাশাপাশি তার ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তাও রয়েছে।
সাংগঠনিক দিক থেকে আওয়ামী লীগের অবস্থা সুসংহত। বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা সুসংগঠিত নয়। তবে প্রচুর ভোট রয়েছে।

জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক তৎপরতা কাগজে কলমে। দৃশ্যত জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক তৎপরতা দেখা না গেলেও গোপনে সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবে না ধর্মভিত্তিক এই রাজনৈতিক দলটি। তাদের ভোট বিএনপির বাক্সেই যাবে। অপর ধর্মভিত্তিক দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, নির্বাচনকে সামনে নিয়ে প্রকাশ্যে প্রচারণা চালাচ্ছে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ৮১তম ঝিনাইদহ- ১ শৈলকুপা সংসদীয় আসনে বিএনপি চাইবে তাদের হারানো আসনটি পুনরুদ্ধার করতে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ চাইবে ধারাবাহিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে।

বিএনএ/ শিরীন,ওজি,ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ