27 C
আবহাওয়া
৭:০৫ পূর্বাহ্ণ - মে ১৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২০ (রংপুর-২)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২০ (রংপুর-২)

রংপুর-২

বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রকাশ করছে। আজ থাকছে রংপুর-২ আসনের  হালচাল।

রংপুর-২ আসন

রংপুর-২ সংসদীয় আসনটি রংপুর জেলার তারাগঞ্জ এবং বদরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ২০ নাম্বার আসন।

প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন:আওয়ামী লীগের ওয়ালিউর রহমান বিজয়ী 

১৯৭৩ সালের ৭ই মার্চ অনুষ্ঠিত দেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনটি রংপুর-২০ নামে পরিচিত ছিল।নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৪০ হাজার ৫শত ২ জন। ভোট প্রদান করেন ৬৫ হাজার ৬ শত ২৭ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ওয়ালিউর রহমান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫৮ হাজার ৬ শত ১৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ন্যাপ মোজাফফর এর রোস্তম আলী। তিনি পান ৫ হাজার ৯শত ৭২ ভোট।

দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন:  বিএনপির রেজাউল হক সরকার বিজয়ী 

১৯৭৯ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনটি পরিচিতি হয় রংপুর-৯ নামে। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ১৮ হাজার ৭৮ জন। ভোট প্রদান করেন ৫৫ হাজার ৩ শত ৬৮ জন। বিএনপির রেজাউল হক সরকার বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ২৩ হাজার ৯ শত ৮২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন মোজাফফর ন্যাপ এর মোহাম্মদ আফজাল। নৌকা  প্রতীকে তিনি পান ১৪ হাজার  ২ শত ৬ ভোট।

তৃতীয় সংসদ নির্বাচন: বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের আনিছুর হক চৌধুরী 

১৯৮৬ সালের ৭মে অনুষ্ঠিত তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৯ আসনের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়, রংপুর-২।নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন  ৮৪ হাজার ২ শত ৯ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আনিছুর হক চৌধুরী বিজয়ী হন। তিনি পান ৩২ হাজার ৮শত ১৪ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী নলীনী কুমার সরকার। তিনি পান ২৭ হাজার ৬ শত ১৭ ভোট। এই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি।

চতুর্থ সংসদ নির্বাচন: জাতীয় পার্টির কামাল উদ্দিন হায়দার বিজয়ী 

১৯৮৮ সালের ৩রা মার্চ অনুষ্ঠিত চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ পরিচিত রাজনৈতিক দল গুলো অংশগ্রহণ করেনি। প্রতিদ্বন্দ্বীতা বিহীন এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির কামাল উদ্দিন হায়দার বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৬০ হাজার ৮শত ২০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন  সম্মিলিত বিরোধী দলের অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল নজরুল হক। তিনি পান ১৬ হাজার ৬ শত ৩৯ ভোট।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ নির্বাচিত

১৯৯১ সালের ২৭ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে রংপুর-১ আসনে ভোটার  ছিলেন ১ লাখ ৮৬ হাজার  ৯ শত ৩৭ জন। ভোট প্রদান করেন ১লাখ ১০ হাজার ৬ শত ৪৭ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৫০ হাজার ২ শত ২১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আনিছুল হক চৌধুরী। নৌকা  প্রতীকে তিনি পান ৪৫ হাজার ২ শত ৬ ভোট।

৬ষ্ট জাতীয় সংসদ নির্বাচন: কাউকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়নি

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ট জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির শাসনামলে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল শুধু নির্বাচন বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিরোধও করে। ফলে ভোটগ্রহণ পন্ড হয়ে যায়।  ১১ দিন মেয়াদের ৬ষ্ট সংসদে রংপুর-২ আসনে কাউকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়নি!

সপ্তম সংসদ নির্বাচন:জাতীয় পার্টির এইচ এম এরশাদ বিজয়ী

১৯৯৬ সালের ১২ই জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৮১ হাজার ৬ শত ৫৫ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৪০ হাজার ৩ শত ৩৩ জন।  নির্বাচনে  জাতীয় পার্টির এইচ এম এরশাদ বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৬৬ হাজার ৯ শত ২৯ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আনিসুল হক চৌধুরী।নৌকা  প্রতীকে তিনি পান ৫৫ হাজার ৮ শত  ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: জাতীয় পার্টির  মোহাম্মদ আলী সরকার বিজয়ী

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩০ হাজার ৫শত ৭০ জন । ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৮৮ হাজার ৯ শত ৬৬ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির  মোহাম্মদ আলী সরকার বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৯১ হাজার ৯ শত ২১ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন  আওয়ামী লীগের আনিসুল হক চৌধুরী। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৭৮ হাজার ১ শত ৬৩ ভোট।

নবম সংসদ  নির্বাচন: জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মন্ডল বিজয়ী

২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম সংসদ  নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫০ হাজার ৮শত ৩৯ জন । ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ২১ হাজার ৬ শত ৬৯ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মন্ডল বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে  তিনি পান ১ লাখ ৬৬ হাজার ২ শত ৭১ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জামায়াত ইসলামী এটিএম আহজারুল ইসলাম। দাড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ৩৬ হাজার ৫ শত ৮৬ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন:বিজয়ী হন আওয়ামীলীগের আহসানুল হক চৌধুরী 

২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় আওয়ামী লীগের আহসানুল হক চৌধুরী বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আহসানুল হক চৌধুরী বিজয়ী

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে রংপুর- ২ আসনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ১০ হাজার ৫ শত ৮২ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৪৯  হাজার ৪ শত ১৭  জন। নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন  ১০ জন।

নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের আহসানুল হক চৌধুরী, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির মোহাম্মদ আলী সরকার, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির  আসাদুজ্জামান চৌধুরী, কুলা প্রতীকে বিকল্পধারা বাংলাদেশের  হারুন অর রশিদ, মশাল প্রতীকে জাসদের কুমারেশ চন্দ্র রায়, আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস্‌ পার্টির ওয়াসিম আহমেদ,  গোলাপফুল প্রতীকে আশরাফ উজ জামান, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আশরাফ আলী, টেলিভিশন প্রতীকে বিএনএফ এর জিল্লুর রহমান, সিংহ প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আনিছুল ইসলাম মন্ডল প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আহসানুল হক চৌধুরী বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ১৮ হাজার ৩শত ৬৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মোহাম্মদ আলী সরকার,  ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫৩ হাজার ৩ শত ৫০ ভোট।

কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, রংপুর-২ আসনে প্রথম, তৃতীয়, নবম ও দশম সংসদে আওয়ামী লীগ, দ্বিতীয় সংসদে বিএনপি,  চতুর্থ, পঞ্চম, সপ্তম ও অষ্টম  সংসদে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা বিজয়ী হন।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে বিএনএ টিমের জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে ১৯৭৩ সালের প্রথম, ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠ, নিরেপক্ষ ও  অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।

তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর রংপুর-২ আসনের ৫টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৭৩ সালের প্রথম সংসদ নির্বাচনে রংপুর-২ আসনে ভোট প্রদান করেন ৪৬.৭১ % ভোটার। আওয়ামী লীগ ৮৯.৩২%, ন্যাপ ভাসানী ৯.১০%, জাসদ ১.৫৮% ভোট পায়।

১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫৭.৯৩% ভোটার।  আওয়ামী লীগ ৪০.৮৬%, বিএনপি ২.০৯%, জাতীয় পার্টি ৪৫.৩৯ %,  জামায়াত ইসলামী ৬.৯৪%  ভোট পায় ।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৭.২৫% ভোটার।  আওয়ামী লীগ ৩৯.৭৬%, বিএনপি ২.৮৭%  জাতীয় পার্টি ৪৭.৬৯% জামায়াত ইসলামী ৫.৯০%  ভোট পায় ।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮১.৯৭ % ভোটার।  ৪১.৩৬%, ৯.৪১% চারদলীয় জোট, ৪৮.৬৪%  জাতীয় পার্টি পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৮.৩৭ শতাংশ। ১৪ দলীয় মহাজোট ৭৫.০১%, ৪দলীয় জোট ১৬.৫০%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল   ৬.৭০% ভোট পায়।

একাদশ সংসদে রংপুর ২ আসনে আওয়ামী লীগ  প্রতিনিধিত্ব করছে। কিন্তু দলটির সাংগঠনিক অবস্থা তেমন মজবুত নয়। বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা আওয়ামী লীগের চেয়ে খারাপ । সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে  জাতীয় পার্টি। সে দিক থেকে বলা যায়, নির্বাচন সুষ্ঠ নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে  দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে   আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে সরাসরি লড়াই হবে।

বিএনএ/ শিরীন, ওজি , ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ